
স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে দুজন রাজশাহীর বাসিন্দা। সম্পর্কে তাঁরা ভাই। বড় ভাই সাকাদাউন সিয়াম এবং ছোট ভাই সাদমান সাদাব—দুজনেই রাজধানীর প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
তাঁদের বাবা এস এম কবিরুজ্জামান পেশায় একজন গ্যাস ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী। দুই ছেলের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলছেন, এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
এস এম কবিরুজ্জামানের আদি বাড়ি নাটোরের গোপালপুরে। এক দশক আগে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেনার দায়ে বাড়ি বিক্রি করে রাজশাহীতে চলে আসেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে কেচুয়াতৈল এলাকায় মেসার্স এন বি ফিলিং অ্যান্ড সিএনজি স্টেশনের পাশে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
পরিবার ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফিলিং স্টেশনে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন কবিরুজ্জামান। যার মধ্যে বেশির ভাগ দেন বাড়িভাড়া। আগে দুই ছেলে টিউশন করে খরচ চালাতেন, তবে কয়েক মাস হলো তা ছেড়ে দেন। বাড়ি থেকেও আর টাকা পাঠাতে হয় না তাঁদের।
আজ সোমবার বিকেল চারটায় ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, কবিরুজ্জামান নিজেই গাড়িতে গ্যাস দিচ্ছেন। সেখানেই বলেন, ‘আমার আয় খুব কম। বাসাভাড়ায় প্রায় সবটাই চলে যায়। ছেলেদের পড়াশোনায় মাসে ২০ হাজার টাকার মতো লাগে। কেউ খুশি হয়ে কিছু দিলে, সেটা দিয়ে চলি।’
কবিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘দুই ছেলে আগে টিউশনি করত। কিছুদিন হলো রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে শুনেছি। রোববার সকালে জানলাম, তারা চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। ওদের জীবনধারা আলাদা—দাড়ি রাখে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়াবে, এটা মেনে নেওয়া কঠিন।’
ফিলিং স্টেশনের কয়েকজন সহকর্মীও নিশ্চিত করেছেন, কবিরুজ্জামানের রাজশাহীতে কোনো নিজস্ব সম্পত্তি নেই। তাঁর ছেলে গ্রেপ্তার হয়েছে শুনে তাঁরাও বিস্মিত।
চাঁদাবাজির অভিযোগে গত শনিবার রাতে গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাবসহ চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। তাঁরা দুজনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের পর সংগঠন থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়। অন্য দুজন হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। তাঁদেরও নিজ নিজ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান আবদুর রাজ্জাকের ঘনিষ্ঠ। ফেসবুকেও তাঁর সঙ্গে তাঁদের চলাফেরার একাধিক ছবি রয়েছে।
সিয়াম ও সাদাব রাজশাহীর খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটির প্রধান মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘এরা তো আমাদের স্কুলেরই ছাত্র ছিল। খুব ভালো ছেলে। ওরা গ্রেপ্তার হয়েছে, এটা শুনে আমি হতবাক।’
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার