
স্টাফ রিপোর্টার:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একজন আইনজীবী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-কে জানিয়েছেন, টিউলিপ একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং ভোটার তালিকায় নাম নিবন্ধন করেছেন। অথচ টিউলিপ বরাবরই বলে আসছেন, তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই।
বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি প্লট নেওয়ার অভিযোগে চলতি সপ্তাহে টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি চলছে। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ বলেন, “তার (টিউলিপ সিদ্দিকের) ঠিকানা, একাধিক পাসপোর্ট এবং ভোটার তালিকায় নাম—সবই আমরা পেয়েছি। এগুলো যথাসময়ে আদালতে দাখিল করা হবে।”
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে নিশ্চিত হয়েছে যে, এ ধরনের নথির অনুলিপি তাদের কাছে রয়েছে। তবে টিউলিপের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্টিফেনসন হারউড এসব নথিকে জাল বলে উল্লেখ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্রের দাবি, “টিউলিপের কখনো জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি ছিল না। শিশুকাল থেকে তিনি বাংলাদেশের কোনো পাসপোর্টও নেননি।”
২০১৭ সালে সাংবাদিকদের তিনি (টিউলিপ) বলেছিলেন, “আপনি কি আমাকে বাংলাদেশি বলছেন? আমি ব্রিটিশ… আমি বাংলাদেশি নই।” সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে টিউলিপ লিখেছেন, “বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ নেই। কোনো প্রমাণও দেওয়া হয়নি। আমার আইনজীবীরাও জানতে চাইলেও কোনো সাড়া মেলেনি। এটি আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং হয়রানি ও প্রহসন।”
দুদকের কৌঁসুলি সুলতান মাহমুদ দাবি করেন, টিউলিপের পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভোটার আইডিতে থাকা ঠিকানায় সমন পাঠানো হয়েছিল। “আমাদের টিম একাধিকবার ওই ঠিকানাগুলো পরিদর্শন করেছে এবং যথাসময়ে নোটিশ দিয়েছে,” বলেন তিনি।
দুদকের ঠিকানায় টিউলিপের আইনজীবীরা গত জুনে পাঠানো একটি চিঠি ফিন্যান্সিয়াল টাইমস দেখেছে, যেখানে দুদকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং টিউলিপের আইনি পরামর্শক দলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে অনীহা প্রকাশের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করেছে, টিউলিপ সিদ্দিকের একটি জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। তবে কমিশনের ভাষ্য—জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা সরাসরি নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। আইন বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, নাগরিকত্ব প্রশ্নটি বাংলাদেশি আইনে তার বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে না, তবে আদালতে বিচার শুরু হওয়ার আগে তার সততা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া অস্বস্তিকর।
টিউলিপ সিদ্দিক গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সিটি মিনিস্টারের (ইকোনমিক সেক্রেটারি) পদ থেকে পদত্যাগ করেন। আর্থিক খাতে দুর্নীতি রোধের দায়িত্বে থাকা অবস্থা অভিযোগ ওঠে—আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনি সুবিধা নিয়েছেন। পরে রাজনৈতিক চাপের মুখে তিনি পদ ছাড়েন।
ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বেআইনিভাবে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দুদক চটিউলিপ, তার মা, খালা শেখ হাসিনা এবং দুই ভাইবোনের বিরুদ্ধে মামলা করে। দুদকের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্লট নিয়েছেন। টিউলিপ অবশ্য যেকোনো অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করছেন এবং দাবি করছেন, নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দমন করছে, আর তিনিও তার শিকার।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে কর্তৃত্ববাদ, নির্বাচন কারচুপি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ছিল। ছাত্রদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী বিক্ষোভের মুখে গত বছরের আগস্টে তার সরকার পতন হয় এবং তিনি ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এতে হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার