
সম্পাদকীয় :
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন দিনের মালয়েশিয়া সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি নোট বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এমওইউগুলো হলো : প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে; তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ, এলএনজি অবকাঠামো, পেট্রোলিয়াম পণ্য ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে; মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে; মালয়েশিয়ার মাইমস সার্ভিসেস এসডিএন বিএইচডি (এমএসএসবি) ও বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিএমসিসিআই) মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে এবং মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনসিসিআইএম) ও বাংলাদেশের এফবিসিসিআই’র মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে। আর নোট বিনিময়গুলো হলো : উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে, কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য এবং হালাল ইকোসিস্টেমে সহযোগিতার বিষয়ে।
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। দুদেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিদ্যমান; আবার অনেক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এসব সহযোগিতার মধ্য দিয়ে উভয় দেশই উপকৃত হতে পারে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। অতীতে সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন কারণে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সম্প্রসারণের সুযোগ এসেছে। দেশটির শ্রমবাজারে আরও অধিকসংখ্যক বাংলাদেশি কাজ করার সুযোগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা। আমরাও আশা করছি, প্রধান উপদেষ্টার এ সফরের মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারিত হবে।
উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মালয়েশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে উঠতে পারে। দেশটিতে বেশ কয়েকটি মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আরও বেশি সংখ্যায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলে তারা দেশে ফিরে সেই শিক্ষা কাজে লাগাতে পারবে। আমরা আশা করছি, দুই দেশের মধ্যে নোট বিনিময় স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্কিত পথ সুগম হবে।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির নানা সুযোগ রয়েছে। আশার বিষয়, অর্থনৈতিক বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া মুক্তবাণিজ্য চুক্তির আলোচনা ত্বরান্বিত করতে, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করতে এবং দুদেশের মধ্যে যৌথ ব্যবসা পরিষদ কার্যকর করতে সম্মত হয়েছে। একই সঙ্গে আমরা আশা করব, মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে গড়ে উঠতে পারে শিল্পকারখানা।
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারই শুধু নয়, এ দুই দেশ ইতিহাস, ধর্ম ও সংস্কৃতিগতভাবে গভীর বন্ধনে আবদ্ধ। তাই বিভিন্ন কূটনৈতিক ফোরামে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দুই দেশ প্রায়ই অভিন্ন মতপ্রকাশ করে থাকে। রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের বড় এক সমস্যা। আমরা আশা করি, এ ইস্যুতেও বাংলাদেশ সব সময় মালয়েশিয়ার সমর্থন পাবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও জোরদার হবে, এটাই প্রত্যাশা।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার