
স্টাফ রিপোর্টার:
১৯৭৮ সালের পয়লা সেপ্টেম্বরের এই দিনে—এক মাহেন্দ্রক্ষণে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আত্মপরিচয়ের ‘যূথবদ্ধ শক্তিমঞ্চ’ হিসেবে গঠন করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। সেদিন পড়ন্ত বিকালে রাজধানীর রমনা বটমূলে একটি ছোট টেবিল আর গোটা সাতেক চেয়ার, সামনে কিছু সাংবাদিক নিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ফেলে আসা ৪৭টি বছরে সংঘাত-বিক্ষোভ, জনপ্রিয়তা আর চড়াই-উত্রাইয়ের পথপরিক্রমায় বিএনপি আজ দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠার পর সাড়ে চার দশকের মধ্যে গত দেড় যুগ সবচেয়ে কঠিন ভয়াবহ ক্রান্তিকাল পেরিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এক অভাবনীয়-অসামান্য সুবর্ণ সময়ের পটভূমিতে ফিরে এসেছে গণমানুষের প্রিয় দলটি। সমুখে এক্ষণে দলের নিবিড় মনোযোগ নির্বাচন ঘিরে। সুদূর লন্ডনে নির্বাসিত জীবনে বিগত দীর্ঘ সময় চরম প্রতিকূলতার পাটাতনে বসে দলের কাণ্ডারী তারেক রহমান তার বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি, অসম সাংগঠনিক দক্ষতায় এই দলকে তৃণমূল শক্তিতে রূপান্তরিত করেছেন। নিজেকে জনপ্রিয়তার শিখরে স্থাপন করেছেন। মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশী রায়ে সাড়ে ছয় বছর কারারুদ্ধ থাকার পর দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত বছর বর্ষা বিপ্লবের পরের দিন মুক্তি পান। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় যে গায়েবি-বানোয়াট ও মিথ্যা মামলার পাহাড় ছিল তা ন্যায় বিচারে নিক্তিতে খালাস দিয়েছে আদালত। এখন ফ্যাসিবাদ মুক্ত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন দেশবাসী। কারাগারের অন্ধ প্রকোস্টে থেকে পর্যাপ্ত চিকিত্সাহীনতায় গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া দেশে-বিদেশে উন্নত চিকিত্সা পাচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীদের নামে গত ১৭ বছরে প্রায় ২ লাখ রাজনৈতিক মামলা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। যাতে আসামি করা হয় অর্ধকোটি নেতাকর্মীকে। আদালত বানোয়াট তথ্য-প্রমাণহীন এই মামলাগুলোর আসামিদের খালাস দিচ্ছে। ১৭ বছর যারা আওয়ামী লীগের অত্যাচারে ফেরারি ছিলেন তারা ঘরে ফিরেছেন। কারামুক্ত হয়ে আলো-বাতাস দেখছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা মামলায় বেগম জিয়াকে কারাগারে নিক্ষেপের পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় তারেক রহমানকে। তিনি দলকে গণতান্ত্রিক পন্থায় পুনর্গঠিত করে সর্বস্তরে শক্তিশালী ও আন্দোলনমুখী করার উদ্যোগ নেন। রাজপথে অব্যাহত আন্দোলন জুলাই বিপ্লবের পথ রচনা করে দেয়। তারেক রহমান বিরামহীনভাবে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে স্কাইপেসহ ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক, সভা-সমাবেশ করে এসেছেন। দিক-নির্দেশনা-আদেশ-নির্দেশ দিয়েছেন। গত বছরের মতো এবারও ফ্যাসিবাদ মুক্ত পরিবেশে বর্ণাঢ্য আয়োজনে আজ ১ সেপ্টেম্বর ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে বিএনপি।
বর্তমান পরিবর্তিত পটভূমিতে বিএনপির মূল লক্ষ্য হলো—দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, স্থিতিশীলতা, ভোটাধিকার ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দলটির নেতারা মনে করেন, প্রতিষ্ঠার পর যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে তারেক রহমানের হিরন্ময় নেতৃত্বে সর্বব্যাপী সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বিএনপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুবউল্লাহ বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিঘ্নিত হয়েছে বহিঃশক্তি এবং অভ্যন্তরের চিহ্নিত মহলের কারসাজি ও অপকর্মের ফলে। কৃত্রিমভাবে কিছু অস্থিরতা সৃষ্টি করে এখন গণতন্ত্রের ট্রেনকে লাইনচ্যুত করার অপচেষ্টা দৃশ্যমান হচ্ছে। যদি ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়, তাহলে অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হতে পারে। এরকম সংকটতম মুহূর্তে বিএনপিকে সাবধানতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিএনপি যদি এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে, তাহলে আগামী দিনগুলোতে বিএনপি দেশের জন্য অনেক অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
কর্মসূচি:
দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ছয় দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল বেলা ২টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১ সেপ্টেম্বর ভোরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়া এদিন সারা দেশে সকল মহানগর ও জেলায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনাসভা ও র্যালি হবে। ঘোষণা অনুযায়ী ২ সেপ্টেম্বর বেলা ২টায় রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে বর্ণাঢ্য র্যালি, ৩ সেপ্টেম্বর দেশের সকল উপজেলা ও পৌর এলাকায় আলোচনাসভা ও র্যালি হবে এবং ৪ সেপ্টেম্বর সকল মহানগর, জেলা-উপজেলায় বৃক্ষরোপণ, মত্স্য অবমুক্তকরণ, ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প, ক্রীড়া অনুষ্ঠানে হবে। ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় গোল টেবিল আলোচনা হবে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং বিএনপির পক্ষ থেকে পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার