
স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের আলোচিত রায়হান হত্যা মামলার ধার্য্য তারিখ ছিলো কিন্তু সিলেট মহানগর জজ আদালতে বিচারাধীন থাকা এই মামলার বিজ্ঞ জজ না থাকার কারণে আজকে আদালত শুনানি হয়নি। আদালতের ধার্য্য তারিখ থাকা সত্বেও আজ আদালতে হাজিরা দেননি মামলার প্রধান আসামি পুলিশের বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন।
তিনি বলেন, আসামি যারা ৬ জন ছিলেন তাদের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন। পুলিশের এসআই হাসান জামিন পেয়ে তিনিও পলাতক। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে পুলিশের এস আই টিটু চন্দ্র ও এপ্রিলে জামিন পেয়েছিলেন কনস্টেবল হারুন। গত শুনানির তারিখে তাদের আইনজীবী সময় পিটিশন দিয়ে আবেদন করেছিলেন কিন্তু আজ পুলিশের এস আই টিটু চন্দ্র’র ব্যাপারে সময়ের একটি আবেদন পড়ে এবং অন্যদিকে কনস্টেবল হারুনের পক্ষে কোনো কিছুই করেন নি তাদের আইনজীবী। অন্যদিকে মামলার প্রধান আসামি পুলিশের বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ১৪ আগস্ট হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালত জামিন দিয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে সেই জামিন বাতিল করে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য বলা হয়েছে কিন্তু এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া আত্মসমর্পন করেননি । বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) ৬ জন আসামির মধ্যে ৪ জন জামিনে বের হলেও তারা কেউই আদালতে হাজির হননি। বর্তমানে পুলিশের সাবেক এএসআই আশেক এলাহী কারাবরণ করছেন। তিনি কিন্তু আজ আদালতে হাজিরা প্রদান করেন।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করা হয়েছে। ওই দিন সিলেট মহানগর জজ আদালতের নবাগত বিচারকের সামনে আমাদের কার্যক্রম শুরু করবো।
বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে আকবর পালিয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে এসআই আকবর কোথায় আছে তা আমরা বলতে পারি না। ১৪ আগস্ট হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে তার জামিন স্থগিত করে ১০ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে এসে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হলেও তিনি এসে হাজির হননি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর দিবাগত রাতে সিলেট মহানগরের কাস্টগড় থেকে রায়হানকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। রাতভর নির্যাতন চালিয়ে তাকে মুমুর্ষু অবস্থায় পরদিন সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা রায়হানকে মৃত ঘোষণা করেন। রায়হান হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে সিলেটজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠায় শেষপর্যন্ত পুলিশি নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
ঘটনার পরদিন কর্মস্থল থেকে পালায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তখনকার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা ও রায়হান হত্যার প্রধান আসামি এসআই আকবর হোসেন। পুলিশ সক্রিয় থাকায় ওই বছরের ৯ নভেম্বর ভারত পালানোর সময় কানাইঘাটের আলোচিত ডোনা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার হয় এসআই আকবর। গ্রেপ্তারের পর থেকে সিলেটের কারাগারে ছিল এসআই আকবরসহ ৫ আসামি।
কারাগারে থাকা অবস্থায় গত মাসে (১০ আগস্ট) উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায় আকবর। আর জামিনের আদেশের পরদিনই সে কারাগার থেকে বেরিয়ে যায়। আর আকবর জামিন পাওয়ায় প্রতিবাদে সরব হন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। পরে ১৪ আগস্ট চেম্বার জজ আদালতে তার জামিন স্থগিত করা হয় এবং পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আকবর আদালতে হাজির হননি।
রায়হান হত্যা মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফজল চৌধুরী মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকালে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালত সাবেক এসআই আকবরের জামিন বাতিল করে ১০ দিনের মধ্যে নিম্নআদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আত্মসমর্পণের সময় পেরিয়ে গেলেও সে আদালতে এসে হাজির হয়নি। ফলে সে এখন পলাতক।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার