Daily Jalalabadi

  সিলেট     বৃহস্পতিবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পিআর ও জুলাই সনদ নিয়ে নতুন বিবাদ

admin

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
পিআর ও জুলাই সনদ নিয়ে নতুন বিবাদ

স্টাফ রিপোর্টার:
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন ও সেটির ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন করা না করা ইস্যুতে নতুন করে বিবাদ দেখা দিয়েছে রাজনীতিতে। ঐকমত্য কমিশন যখন জুলাই সনদ স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছে, তখনই এই দুটি ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট দল-জোটগুলোর মধ্যে প্রকট মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।

জামায়াত, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস এবং মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সংসদের উচ্চ ও নিম্ন উভয় কক্ষেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি নতুন করে সামনে এনেছে। এরসঙ্গে আরও তিনটি দাবি মিলিয়ে মোট পাঁচ দফা দাবিতে এই চারটি দল ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশব্যাপী তিনদিনের একইরকম কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিশের কর্মসূচি যুগপৎ। তবে, প্রায় অভিন্ন দাবিতে ও একইরকম কর্মসূচি দেওয়া হলেও জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, তারা এখনই যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছেন না।

এদিকে, উপরোক্ত চারটি দলের সঙ্গে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছে প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের রেখে যাওয়া দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। গতকাল মঙ্গলবার জাগপাও জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে যুক্ত হল জাগপা; থাকছে না এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার

৭ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা খেলাফত আন্দোলনের, পাঁচ দাবিতে কর্মসূচি নেজামে ইসলাম পার্টির অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, জামায়াতসহ ওই চারটি দলের সঙ্গে দাবির বড় অমিল থাকলেও গতকাল পৃথক সংবাদ সম্মেলনে অভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে খেলাফত আন্দোলন ও নেজামে ইসলাম পার্টি।

এবিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিষয়গুলো রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হবে। সময় আছে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। এর আগে রবিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দলগুলোর বৈঠকে সালাহউদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে। নইলে শুধু অভ্যন্তরীণ জাতীয় নিরাপত্তা নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়বে। অন্যদিকে, জামায়াতের ডা. তাহের গতকাল বলেছেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে কোনো জটিলতা নেই। এছাড়া সাংবিধানিক আদেশেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সম্ভব।

চার দলের কর্মসূচিতে যুক্ত হলো জাগপা

জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনসহ বেশকিছু দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে জাগপা। দলটি ৭ দফা দাবিতে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচি অনুযায়ী ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর সব বিভাগীয় শহরে গণসংযোগ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব সাংগঠনিক জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করবে দলটি। গতকাল রাজধানীর পল্টনে জাগপা ঢাকা মহানগর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান।

জাগপার ৭ দফা দাবি হলো- জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও সনদের আলোকে জাতীয় নির্বাচন; শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা; গণহত্যা ও আওয়ামী আমলে সংঘটিত জুলুম, নির্যাতন, দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমানকরণ; আওয়ামী আমলে ভারতের সঙ্গে হওয়া গোপন চুক্তি প্রকাশ ও বাতিল করা; জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা; উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ।

জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের চাওয়া ছিল বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন। কিন্তু দৃশ্যমান বিচার দেখা যাচ্ছে না। সংস্কার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেনতেনভাবে জাতীয় নির্বাচন বাস্তায়নের প্রস্তুতি ও রোডম্যাপ দেখা যাচ্ছে।

পাঁচ দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি নেজামে ইসলাম পার্টির

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানসহ পাঁচ দফা দাবিতে গতকাল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। অন্য দাবিগুলো হলো- জাপা ও ১৪ দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ, গণহত্যার বিচার, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল।

ঘোষিত তিন দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায়, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ। ঘোষিত দাবি ও কর্মসূচিকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, ইসলাম ও জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার আন্দোলন বলে মন্তব্য করেছে নেজামে ইসলাম পার্টি। সাংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের মহাসচিব মুসা বিন ইযহার।

৭ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা খেলাফত আন্দোলনের

জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন প্রদানসহ সাত দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। কর্মসূচি অনুযায়ী ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল। গতকাল রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে মারকাজুল খেলাফত মাদ্রাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী।

দলটির ঘোষিত সাত দফার মধ্যে রয়েছে- জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানো, নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের হত্যাযজ্ঞের বিচার, শাপলা শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও আহতদের সুচিকিৎসা প্রদান, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাচ-গানের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ।

থাকছে না এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ

এর আগে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘোষণার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এখন জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপিসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধের মধ্যেই জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ চারটি ইসলামি দল অভিন্ন দাবিতে এই প্রথম একযোগে কর্মসূচি ঘোষণা করল।

দলগুলোর এই যুগপৎ কর্মসূচিকে নির্বাচনি রাজনীতি মাঠে গড়ানোর ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আবার কেউ কেউ এটাকে নির্বাচনকেন্দ্রিক সমঝোতা বা বোঝাপড়ার আভাস হিসেবেও দেখছেন।

চারটি দলের সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনসহ চার-পাঁচটি অভিন্ন দাবিতে প্রাথমিকভাবে আটটি দল যুগপৎ কর্মসূচি শুরুর বিষয়ে একমত হয়েছিল। এলক্ষ্যে দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে একাধিক বৈঠকও হয়। কিন্তু গণমাধ্যমে এসংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার পর আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি বিবৃতি দিয়ে, এনসিপি নেতারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এবং গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক যুগপৎ কর্মসূচির ব্যাপারে ভিন্নমত প্রকাশ করেন।

দলগুলোর সঙ্গে আজ ফের আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন

পিআর পদ্ধতি ও জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন ইস্যুতে নতুন করে দেখা দেওয়া বিবাদের মধ্যেই জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আজ বুধবার আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এই আলোচনা শুরু হবে।

এর আগে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছিল কমিশন। মতৈক্য না হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ৩০টি দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে ঐকমত্য কমিশন। রবিবারও দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হয়। ওইদিনের আলোচনায় কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত ছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্নে মতৈক্য হয়নি।

এর আগে দুই পর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়েছে। সেখানে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এই সনদের ‘চূড়ান্ত ভাষ্য’ ইতোমধ্যে দলগুলো পাঠিয়েছে কমিশন।

গত জুলাই মাসে এই সনদ সই করার লক্ষ্য ছিল। তবে বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সনদ আটকে আছে। অবশ্য বাস্তবায়নের পদ্ধতি জুলাই সনদের অংশ হবে না। এবিষয়ে সরকারকে আলাদা সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন।

বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক একাধিক বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। এবিষয়ে দলগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামতও নেওয়া হয়েছে।

সংবিধানসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো আগামী জাতীয় সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের পক্ষে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে আর এনসিপি গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন চায়। এর বাইরে বেশকিছু দল সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নিয়ে সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন

Follow for More!