এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন :
কোরআন শরিফের প্রথম আয়াত-ই হচ্ছে ‘ইকরা’। ইকরার শাব্দিক অর্থ ‘পড়’। কে কাহাকে পড়াবে? হযরত মোহাম্মদ (স:) এর উপর কোরআন অবতীর্ন হইয়াছে। আল্লাহ স্বয়ং জিবরিল (আ:) এর মাধ্যমে অহি নাযিল করিতেন। কোরআন শরিফে ১১৪ টি সুরা লিপিবদ্ধ। রসুল (স:) বিদায় হজ্জের ভাষনে বলেছেন, আল-ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম অ আতমামতু লাকুম দ্বীনা ওয়া রাধিতুল ইসলাম দ্বীন। এ বক্তব্যের মাধ্যমে পুর্নাঙ্গ কোরআন শরিফ এর সমাপ্তি। সুতরাং হযরত মোহাম্মদ (স:) এর উপর যে মহাগ্রন্ত আল কোরআন নাযিল হইয়াছে, তাহার কিন্তু কোন শিক্ষক ছিলেন না। সেই অহি নাযিলের মাধ্যমে পুর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার শিক্ষকতা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ-ই। দুনিয়ার কার্যাধি সম্পাদন ও পরকালের জীবন সুন্দর ও সুখকর হওয়ার জন্য আল্লাহর কালাম থেকে শুরু করে নীতি নৈতিকতা অর্জনের জন্য আদর্শ শিক্ষকদের নিকট জন্মের বছর খানেক পর জন্ম দাতা পিতা-মাতা তাহার ছেলে মেয়েকে প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলার জন্য বিশ্বস্ততার সাথে প্রেরন করেন। বলা হয়ে থাকে পিতা-মাতার পরই সম্মানীত ব্যক্তি হচ্ছেন শিক্ষক। শিক্ষকরা হচ্ছেন, জাতির মেরুদন্ড। মানুষ ব্যাতিত ১৮ লক্ষ প্রজাতির মধ্যে অন্য কোন প্রানী সোজা হয়ে দাড়াতে পারে না।
সেজন্য মানুষেকে ঘোষনা করা হইয়াছে আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ট। শ্রেষ্টত্ব অর্জনের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পাদনে সহযোগীতা করিলেন শিক্ষক। কিন্তু সেই শিক্ষককে রোদ বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় দাড়িয়ে সম্মানের সাথে ৩ বেলা চারমুটু ভাত ও একটু মান সম্পূর্ন জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য বেতন-ভাতার দাবী করা কি অযৌতিক? ন্যায় সংগত দাবী সহজেই গ্রহন করে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ঘোষনা দেওয়া উচিত ছিল। ভবিষ্যতে আর কোনদিন আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে না শিক্ষক সমাজকে। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষক সমাজের নিকট বিনয়ের সাথে ক্ষমা চাওয়া। কারন যে শিক্ষকরা কর্তৃপক্ষ বানাতে সহযোগীতা করেছেন,সেই শিক্ষকের উপর টিয়ার সেল, রাবার বুলেট, কাদানো গ্যাস নিক্ষেপ করে আন্দোলন দমন করা সরকারের কাজ নহে। অবশ্য শিক্ষা-২ ধরনের। সামাজিক বা পারিবারিক এবং একাডেমিক শিক্ষা। একাডেমিক শিক্ষার মাধ্যমে শুধু রুটি রোজগার এর ক্ষেত্র তৈরী করেন। এই রুটি রোজগারের শিক্ষাকে যদি সামাজিক বা পারিবারিক শিক্ষা ক্ষেত্রে যথাযথ বিনিয়োগ করেন তাহলে রাষ্ট্রের গর্বিত মানুষ হিসেবে সফল ও স্বার্থক হতে বাধ্য। পশু যে তাহার জীবনের খাওয়াটাকে উপভোগ করে কিন্তু প্রকৃত মানুষ অন্যকে উপভোগ করাতে পারলে তাহার জীবনটাকে স্বার্থক মনে করে। যতই আদর্শবান শিক্ষক হোন না কেন তাহার ও তো পরিবার পরিজন আছে? আদর্শকে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্টিত করতে হলে সৎ যোগ্য মেধাবীদের এ পেশায় নিয়োগদানের ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রীয় নীতিমালা বা গ্রেড বা বেতন স্কেল এর বিভিন্ন ধাপে ক্রমবিন্যাস করা হইয়াছে। এই ২০ টি ধাপের মধ্যে শিক্ষকদের সম্ভবত যোড় সংখ্যা দিয়ে শুরু। যাহাদের বেতন ১৫-২০ হাজার এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই অল্প বেতনে কোন মেধাবী শিক্ষক কি এই পেশায় কোনদিন আসার সম্ভাবনা আছে? না কিছুতেই না। অন্তবর্তী সরকারের প্রত্যেকেই উচ্চ শিক্ষিত। ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং অন্তবর্তী সরকার প্রথম বা ২য় গ্রেডে যখনই শিক্ষকদের বেতন স্কেল ধার্য্য করা হবে, তখন দেখবেন রাষ্ট্রের সব মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় এগিয়ে আসিবেন। তখন ছাত্র এবং শিক্ষকদের সমন্বয়ে পিছিয়ে পড়া সমাজ আলোকিত হতে বাধ্য। যেহেতু সকল ছাত্র একই যোগ্যতা সম্পূর্ন মেধাবী নহে, সেহেতু দার্শনিক প্লেটো বা এরিষ্টটলের শিক্ষানীতি কার্যকর পন্থা অবলম্বন করিতে হইবে শিক্ষকদের।
পরিশেষে বলতে চাই, শিক্ষকদের সকল কাজের কর্ম মূল্যায়ন করিবেন সংবিধান স্বীকৃত ন্যায় পাল কর্তৃপক্ষ। তাহারা অধিনস্ত কর্মকর্তাদের নিকট বাৎসরিক কার্যক্রম জমা দিবেন শিক্ষক এবং সঠিকতা যাচাই করে এ.সি.আর. প্রদান করিবেন। শিক্ষক সমাজ জাতির বিবেক। বিবেক হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত । আদালত এর নিকট থেকে ছাত্র ছাত্রীরা তাহাদের প্রাপ্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হলে সম্মানীত শিক্ষকগনই অসম্মানীত হতে বাধ্য।
লেখক, সভাপতি- সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট। মোবাইল নং ০১৮১৯১৭৬২১৭
সম্পাদক ও প্রকাশক: আব্দুল খালিক
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
উপ-সম্পাদকঃ ফুজেল আহমদ
প্রকাশক কর্তৃক উত্তরা অফসেট প্রিন্টার্স কলেজ রোড, বিয়ানীবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও শরীফা বিবি হাউজ, মেওয়া থেকে প্রকাশিত।
বানিজ্যিক কার্যালয় :
উত্তর বাজার মেইন রোড বিয়ানীবাজার, সিলেট।
ই-মেইল: dailyjalalabadi@gmail.com
মোবাইল: ০১৮১৯-৫৬৪৮৮১, ০১৭৩৮১১৬৫১২।