Daily Jalalabadi

  সিলেট     রবিবার, ২রা নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১৭ই কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মনোনয়ন টেনশন নেই মুক্তাদিরের

admin

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫ | ১২:৫৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৫ | ১২:৫৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
মনোনয়ন টেনশন নেই মুক্তাদিরের

স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে টেনশনে নেই দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। মনোনয়ন নিয়ে টেনশন নেই বলেই তিনি প্রতিদিন সিলেট সিটি করপোরেশনসহ সদর উপজেলায় চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। সেই সাথে দলের শীর্ষ নেতারাও তার সঙ্গে রয়েছেন প্রচারণায়।তবে এই আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়ে অনেকটা নীরবে প্রচারণা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। যে কয়েকদিন তিনি প্রচারণা চালিয়েছেন তার সাথে দলের শীর্ষ নেতারা ছিলেন না।

তবুও দলের মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে দলের হাইকমান্ডসহ নানা কৌশলে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে মনোযোগ দিয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেটকে উন্নয়ন বঞ্চিত করার প্রতিবাদে তিনি ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।

জানা যায়, সিলেট-১ নির্বাচনি আসনটি জাতীয় রাজনীতিতে মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রচলিত মিথ আছে- সংসদ নির্বাচনে এই আসনে যে দলের প্রার্থী জিতেন সেই দল সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার পর প্রায় সব জাতীয় নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে এই মিথের প্রতিফলন হওয়ায় আসনটি ‘মর্যাদাপূর্ণ। এই আসনে বরাবরই হেভিওয়েট হেভিওয়েটে লড়াই হয়ে থাকে। এক সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এই আসন থেকে ভোট করতেন। এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে বহুবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন আরেক অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিত। পরবর্তীতে মুহিতের ভাই আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম এ মোমেন এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। এর আগে সাবেক স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এদিকে মুক্তাদিরের বাবা খন্দকার আবদুল মালিক ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য হন। পাশাপাশি সিলেটের বনেদি পরিবার হিসেবেও তাদের ব্যাপক নামডাক আছে। ভদ্র ও সজ্জন হিসেবে পরিচিত মুক্তাদির বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘সুনজরে’ আছেন বলেও স্থানীয়ভাবে আলোচনা আছে।

অন্যদিকে আরিফুল শহর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য, বিএনপির সিলেট মহানগরের সভাপতি ও জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। অভিজ্ঞ এই রাজনীতিক প্রয়াত বিএনপি নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের আস্থাভাজন হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। এ ছাড়া নগরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আরিফুলের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা আছে।

একসময় সাইফুর রহমান ও মুহিতের লড়াই নির্বাচনি লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। মুহিতকে একাধিকবার হারিয়ে সিলেট-১ এ নির্বাচিত হয়েছেন সাইফুর রহমান। তারও আগে হুমায়ুন রশিদ ও সাইফুরের লড়াই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।

পরবর্তীতে এই আসনে হাল ধরেন সাইফুর রহমানের অনুসারী আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি দুই দুবার মেয়র নির্বাচিত হন। সিলেট সিটি কর্পোরেশন এই আসনকে কেন্দ্র করে। তাই নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়ায় এই আসনে আরিফুলের উন্নয়নের সুযোগ হয়েছে।

এবার আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দুজন। দুজনই আবার বড় নেতা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। তারা হলেন— সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা ও সিলেট-১ আসনে তিনবারের নির্বাচিত এমপি খন্দকার আব্দুল মালিকের ছেলে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। কেউ কেউ আবার বলছেন, লন্ডনের প্রভাবশালী পাশা খন্দকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। এতে করে তার মনোনয়ন নিয়ে টেনশন করার কিছুই নেই।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ অক্টোবর সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ১২৯ জন প্রার্থীকে ঢাকায় ডেকে নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই দিন প্রার্থী চূড়ান্ত না করে সবাইকে সমানভাবে শীষের পক্ষে প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দেন তিনি। ওই বৈঠকে খন্দকার মুক্তাদিরকে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আরিফুল হককে সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী হতে বলা হয়। তবে আরিফুল হক মহাসচিবের কাছে তাকে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে বিবেচনায় রাখার আবেদন জানান। মহাসচিব এই বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও আরিফুলকে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

ঢাকা থেকে ফেরার দুদিন পর বুধবার জোহরের নামাজের পর হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে সিলেট-১ আসনে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন আরিফুল। এরপর নগরীতে দলের ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ও নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন করেন। তার নেতৃত্বে শহরে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো শহর।

সিলেট-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে আরিফুল হক বলেন, ‘সিলেট-১ আসনে আমি ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে জনগণের ভোট প্রার্থনা করছি। এই সিটি করপোরেশনে সব শ্রেণিপেশার মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। এখন কাকে মনোনয়ন দেবে, তা বিবেচনা করবে দল। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই একযোগে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঝাঁপিয়ে পড়বো।’

দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে মুক্তাদিরকেও ভাবছে দল। তিনি ছাড়া আর কাউকে ভাবা হচ্ছে না। এই আসনে মুক্তাদিরের মনোনয়ন নিয়ে অনেকটা টেনশন মুক্ত রয়েছেন। পেতে পারেন।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন

Follow for More!