
ডেক্স রিপোর্টঃ
রাজধানীতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব পরিচালিত এক বিশেষ অভিযানে ভয়াবহ এক মানবপাচার চক্রের চারজন সদস্য ধরা পড়েছে। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের তরুণী ও যুবতী নারীদের বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরি, উন্নত জীবন কিংবা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাচার করত। সেখানে তাদের জোর করে দেহব্যবসায় নামানো হতো।
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন আব্বাস মোল্লা, জাহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু, মিনার সরদার এবং মোহাম্মদ রিফন শেখ। এরা অনলাইন যোগাযোগ, ফেসবুক ও বিউটি পার্লার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নারীদের টার্গেট করত। চাকরি বা বিবাহের প্রলোভনে ঢাকায় এনে পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি করে চীনে পাঠানো হতো।
চীনে পৌঁছে নারীদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে দালালদের হাতে তুলে দেওয়া হতো। এরপর শুরু হতো নির্যাতন ও অবমাননার জীবন। কেউ প্রতিবাদ করলে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো। প্রতারণার অংশ হিসেবে তাদের বলা হতো চীনে গেলে মাসে এক লাখ টাকা বেতন পাওয়া যাবে, কিন্তু সেখানে পৌঁছে সব স্বপ্ন ভেঙে যেত।
র্যাবের তদন্তে জানা গেছে, এই চক্র ইতিমধ্যে অন্তত বিশ জন নারীকে পাচার করেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। তদন্তে কিছু বাংলাদেশি ও চীনা নাগরিকের সম্পৃক্ততার তথ্যও পাওয়া গেছে। তাদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, এই চক্রের সঙ্গে ঢাকার কুখ্যাত মাদক ও মানবপাচার ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সোহাগ মিয়া গত বছর গ্রেফতার হলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জামিনে মুক্ত হন। বর্তমানে তিনি পলাতক, তবে তার সহযোগীরা এখনও সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবপাচার এখন সীমান্ত অতিক্রমের অপরাধ নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধে পরিণত হয়েছে। অনলাইন প্রতারণা, চাকরির প্রলোভন এবং বিয়ের আশ্বাসের মাধ্যমে নারীদের টার্গেট করা হচ্ছে উদ্বেগজনক হারে।
তারা পরামর্শ দিয়েছেন, পরিবার ও সমাজকে আরও সচেতন হতে হবে। কোনো সন্দেহজনক প্রস্তাব বা যোগাযোগ পেলেই দ্রুত র্যাব বা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই ভয়াবহ চক্রের শিকার না হয়।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1.1K বার