
বিয়ানীবাজার সংবাদদাতা:
বিয়ানীবাজারে প্রায়ই ঘটছে আত্মহননের ঘটনা। গত মাসে এমন আরোও দু’টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আত্মহননের একাধিক ঘটনার পর বিয়ানীবাজারের ‘সামাজিক বন্ধন’ ভেঙে পড়ার কথা যেমন সামনে আসছে, তেমনই আলোচনায় এসেছে আত্মহননের নীরব বার্তা।
বিয়ানীবাজারে সবচেয়ে বেশী আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ২০২২ সালে। সে বছর মাত্র ৮ মাসে ১৪টি আত্মহত্যার ঘটনায় প্রশাসন ও সচেতন মহলকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। ২২’র জুলাই মাসে ২৩ বছর বয়সী বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হাজেরা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর কয়েক দিন পূর্বে পৌরশহরের নয়া গ্রামে মোহাম্মদ আলী নামে মাত্র ১৮ বছরের আরেক তরুণ গলায় ফাঁস দিয়ে জীবনের অবসান ঘটান। এর আগে নতুন বউয়ের মুখ দেখে এসে পৌরশহরের শ্রীধরা এলাকার ইয়াসমিন শাওন নামে আরেক কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহনন করেন। একই বছরের জুনে ঝুলন্ত অবস্থায় এক আওয়ামীলীগ নেতার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। বর্তমান ২০২৫ সালে ৩ সন্তানকে রেখে এক ব্যক্তির আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। ফয়ছল আহমদ নামের ওই ব্যক্তি মুড়িয়া ইউনিয়নের নওয়াগাও গ্রামের রমুজ আলীর পুত্র। প্রত্যেকটি অস্বাভাবিক মৃত্যু সামাজিক শৃঙ্খলায় আঘাত হিসাবে দেখা হচ্ছে। সচেতন মহল বলছেন, এসব অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে রয়েছে সমাজের অবক্ষয়।
সংকট থেকে সৃষ্ট ‘মানসিক সমস্যার’ কারণেই বেশিরভাগ আত্মহত্যা করেন মত দিলেও উপজেলা পর্যায়ে এ রোগের চিকিৎসা পাওয়া যে কঠিন বলে মনে করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মনিরুল হক খান। তার মতে, মানসিক স্বাস্থ্য বলে যে একটা বিষয় রয়েছে, এটা মানুষকে বুঝতে হবে।
চলতি মাসে খশির এলাকায় ১৭ বছরের এক তরুণীর গলায় ফাঁস দেয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নয়াবাড়ির বশর মিয়ার পরিবারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তামান্না বেগম ওই পরিবারে গৃহপরিচারিকার কাজ করতো। সে মুড়িয়া ইউনিয়নের সারোপার গ্রামের মানিক মিয়ার মেয়ে। গত ৩০ অক্টোবর পৌরশহরের একটি পলিথিনের কারখানা থেকে মালিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মো: আবু তাহের (৬০) নামের ওই ব্যক্তির বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলায়। তিনি বিয়ানীবাজার পৌরশহরে প্রায় ৩০ বছর থেকে বসবাস করেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ করেছে পুলিশ।
বিয়ানীবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার জানান, পারিবারিক বিরোধ অথবা টাকা-পয়সা সংক্রান্ত লেনদেনের কারনে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করতে পারেন। তবে তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এসব ঘটনায় আর্থিক চাপ, ঋণের বোঝার পাশাপাশি সামনে এসেছে পারিবারিক কলহ।
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের সহযোগি অধ্যাপক আব্দুর রহীম সবুজ বলেন, আর্থ-সামাজিক বা পারিবারিক যে কারণই থাকুক, সেটি থেকে সৃষ্ট মানসিক রোগের কারণেই মানুষ আত্মহত্যা করেন। তার ভাষ্য, গত ১৫-২০ বছরে স্থানীয়ভাবে আর্থ-সামাজিক ‘একটা ব্যাপক পরিবর্তন’ হয়েছে, যেটার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটি দিকই আছে। কারণ, আর্থিকভাবে উন্নতি করার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিসগুলো’ বেড়ে যেতে দেখা যায়। এই বিষয়গুলো ঠেকাতে সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রতি জোর দেন এই শিক্ষক।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফ উজ্জামান মনে করেন, যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলোর প্রত্যেকটির ‘আলাদা কারণ’ আছে। নিজের অসহায়ত্বের কথা বলতে না পারা মানুষকে ‘সামাজিক সুরক্ষায়’ অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার