স্টাফ রিপোর্টার:
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে বর্বর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় আখালিয়ার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে। বর্বর নির্যাতনে রায়হান যখন নিস্তেজ হয়ে পড়েন তখন তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর পুলিশ রায়হানের মৃত্যু গণপিটুনিতে হয়েছে মর্মে চালিয়ে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
রায়হান হত্যা মামলার বহিষ্কৃত এএসআই আশেক এলাহি কারাগারে থাকলেও মামলার অন্য আসামিরা জামিন নিয়ে দেশে ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এরমধ্যে জামিন নিয়ে ইতোমধ্যে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছেন হাসান উদ্দিন। সে দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য অ্যাসাইলাম (আশ্রয়ের আবেদন) করেছেন।
এদিকে, আলোচিত রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামি বহিষ্কৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, অপর আসামি সাবেক কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদ জামিন পাওয়ার পর একবার আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন, কিন্তু এরপর থেকে তারাও পলাতক রয়েছেন। এছাড়াও নোমান শুরু থেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আকবর হোসেন ভুঁইয়া গত ১০ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে জামিনে কারামুক্ত হন, যদিও পরে চেম্বার জজ তার জামিন স্থগিত করে ১০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন, কিন্তু তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি এবং তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, আকবর ভূঁইয়াসহ অন্যরাও দেশে নেই। আকবর ভূঁইয়া জামিনের কয়েকদিন পর কারাবন্দি আশেক এলাহি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিলো। সে অনুযায়ি জামিনের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে আকবর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায়। বিপদে পড়ে আশেক এলাহি।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) বদরুল ইসলাম বলেন, “আদালতে কারাবন্দি বহিষ্কৃত এএসআই আশেক এলাহির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এর আগে, ২৬ নভেম্বর মামলার পলাতক থাকা পাঁচ আসামির যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়। আদালত আগামী ৭ জানুয়ারি রায়হান হত্যার রায় ঘোষণা করবেন বলে জানান।”
আদালত সূত্র জানায়, রায়হান উদ্দিন হত্যা মামলার রায় আগামী ৭ জানুয়ারি ঘোষণা করা হবে। রবিবার (৩০ নভেম্বর) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সিলেটের মহানগর দায়রা জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ এই দিন ধার্য করেন। ওইদিন মহানগর দায়রা জজ আদালতে আলোচিত এই হত্যা মামলার কারাবন্দি আসামি বহিষ্কৃত এএসআই আশেক এলাহির যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর এই মামলায় পলাতক থাকা ৫ আসামির যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছিল। ২০২২ সালের ১২ জুন হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে দেশ ছাড়েন রায়হান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি পুলিশের বহিস্কৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান উদ্দিন।
আদালত সূত্র আরও জানায়, নিহত রায়হানের দেহে ১১১ আঘাতের চিহ্ন উঠে আসে ফরেনসিক রিপোর্টে। এসব আঘাতের ৯৭টি লীলাফোল আঘাত ও ১৪টি ছিল জখমের চিহ্ন। আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে। আর অতিরিক্ত আঘাতের কারণে দেহের ভেতর রগফটে গিয়ে রক্তক্ষরণে রায়হানের মৃত্যু হয়। আঘাতে দেহের মাংস থেতলে যায়। রগ ফেটে গিয়ে আন্তঃদেহে রক্তক্ষরণ হয়। আর অতিরিক্ত আঘাতে মুর্ছা যান রায়হান। আঘাত করার সময় রায়হানের স্টমাক খালি ছিল। স্টমাকে ছিল কেবল এসিডিটি লিকুইড ছিলো। রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুনর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির ‘টুইআইসি’ (সেকেন্ড-ইন-কমান্ড) পদে থাকা সাময়িক বরখাস্ত উপপরিদর্শক হাসান উদ্দিন ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নোমান।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আব্দুল খালিক
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
উপ-সম্পাদকঃ ফুজেল আহমদ
প্রকাশক কর্তৃক উত্তরা অফসেট প্রিন্টার্স কলেজ রোড, বিয়ানীবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও শরীফা বিবি হাউজ, মেওয়া থেকে প্রকাশিত।
বানিজ্যিক কার্যালয় :
উত্তর বাজার মেইন রোড বিয়ানীবাজার, সিলেট।
ই-মেইল: dailyjalalabadi@gmail.com
মোবাইল: ০১৮১৯-৫৬৪৮৮১, ০১৭৩৮১১৬৫১২।