
রাজনগর প্রতিনিধি :
রাজনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর অনুপ চন্দ্র দাস যেন জালিয়াতির এক বিশেষ কারিগর। উপজেলা পরিষদের হাট বাজার ব্যবস্থপনা সংক্রান্ত নথি, ক্যাশ বই এবং ব্যাংক হিসাব- সব কিছুই নিজের ইচ্ছে মতো ব্যবহার করেছেন। টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িয়েছে আরো কয়েকটি নাম, যাদের নামে ও একাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে আত্মসাৎকৃত টাকা আদায়ে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ২ নভেম্বর মৌলভীবাজারের স্থানীয় সরকার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা.শাহিনা আক্তার স্বাক্ষরিত তদন্ত রিপোর্টে বলা হলেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, অনুপ চন্দ্র দাসের পরিবার থেকে কিছু টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা হাট বাজারের ফাইল ছিল রাজনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটার অনুপ চন্দ্র দাসের জালিয়াতির সবচেয়ে প্রিয় ফাইল। এ ফাইলেই সে ইচ্ছেমতো ছুরি ছালিয়েছে। হাট বাজার ইজারা তহবিল থেকে ১১টি চেকে হাতিয়ে নিয়েছে ৮০ লাখ ৫১ হাজােেররও বেশি টাকা।
অনুপ চন্দ্র দাসের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িয়েছে আরো কয়েকটি নাম। মতিন মিয়া, লিমন আহমদ, নেছার আহমদ নামের ব্যক্তিরা নগদে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন এবং রাজনগর সোনালী ব্যাংকের জুবেল আহমদ নামের এসএ এন্টারপ্রাইজ, শ্রীমঙ্গলের এনসিসি ব্যাংকে নিহার রঞ্জন দাশ ও একই উপজেলার ব্রাক ব্যাংকের বিজয় পাল ঝুটন নামের একাউন্টে টাকা স্থান্তর করা হয়েছে।
অনুপ গত মে মাসের ২৪ তারিখ ৫ লাখ টাকা উত্তোলন দিয়েই শুরু করে আত্মসাতের মহোৎসব। ওই টাকা মতিন মিয়া নামে এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে নগদ উত্তোলন করায় দেখা দিয়েছে সংশয়। কে ওই ব্যক্তি আর কেনইবা তার কাছে টাকা গেল? এরপর অনুপ চন্দ্র দাস সিডিবি-২৮৩৬৮৫১ নং চেকে ৫ লাখ ৯০ হাজার ১০ টাকার বিগত ১৮ জুন লিমন আহমদ নামের ব্যাক্তি ক্যাশ উত্তোলন করেন।
১৫ জুন সিডিবি-২৮৩৬৮৫২ নং চেকে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ১৫ টাকা একই মাসের ২৩ (জুন) তারিখ সিডিবি-২৮৩৬৮৫৮ নং চেকে ২১ হাজার ২৫০ টাকার জায়গায় ৩ লক্ষ ২১ হাজার ২৫০ টাকা অনুপ চন্দ্র দাশ তার একাউন্টে স্থানান্তর করেছেন।
এছাড়াও হাট বাজার ইজারা সংক্রান্ত নোটশিট ২১ নং পাতায় সিডিবি ২৮৩৬৮৫৯ নং চেকে মাত্র ৫৪২৭ টাকা আয়কর বাবদ ইস্যু করা হয়েছিল কিন্তু একই তারিখে (২৩ জুন) জালিয়াতি করে ওই চেকে ৮ লক্ষ ৫ হাজার ৪২৭ টাকা নিজ একাউন্টে ট্রান্সফার করেছেন।
একইভাবে সিডিবি ২৮৩৬৮৬০ নং চেকে ১৫ হাজার ৩২ টাকা ভ্যাট বাবদ ইস্যু করা হয়েছির। কিন্তু একই (২৩ জুন) তারিখে ওই চেকে ৫, লক্ষ ১৫ হাজার ৩২ এনসিসি ব্যাংক লি. শ্রীমঙ্গল শাখায় নিহার রঞ্জন দাশের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে। প্রচার বাবদ সিডিবি ১৫৫৫৫০৯ নং চেকে ২৫ হাজার টাকার জায়গায় গত ২৫ জুন ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা নেছার আহমেদ নামে ক্যাশ উত্তোলন করা হয়েছে।
এভাবে হাট বাজার ইজারা তহবিল থেকে ১১টি চেকে হাতিয়ে নিয়েছে ৮০ লাখ ৫১ হাজােেররও বেশি টাকা। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিলের ক্যাশ রেজিস্টার এবং ব্যাংক স্টেইটমেন্ট পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আনুমানিক ৩১ লক্ষ টাকার জালিয়াতি করে উত্তোলন করা হয়েছে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
এদিকে গত ২ নভেম্বর মৌলভীবাজারের স্থানীয় সরকার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছা.শাহিনা আক্তার স্বাক্ষরিত তদন্ত রিপোটে অনুপ চন্দ্র দাসের আত্মসাৎকৃত অনুমানিক ১ কোটি ৫১ লাখ ৫১ হাজার ৪৫৫ আদায়ের স্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এব্যাপারে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তৌহিদুজ্জামান পাভেল বলেন, আমি পুলিশকে মামলা করার জন্য বলেছিলাম। যেহেতু এটি দুদকের তথ্যভ‚ক্ত তাই দুদকে মামলা করার জন্য বলা হয়েছে। আজ কালকের মধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। মামলা করতে দেরী হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, তারা বিষয়টি ফাইন্ড আওউট করার জন্য সম্মভবত বিলম্ব হয়েছে। আর তখনতো আমি ছিলাম না। দূদক তদন্ত করলে এতে কারা কারা জড়িত সব বেরিয়ে আসবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার