
স্টাফ রিপোর্টার:
বেগম খালেদা জিয়া এগারো দিন যাবত শুয়ে আছেন এভারকেয়ারের শুভ্র বিছানায়। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ-পরিচর্যায় তাকে সারিয়ে তোলার প্রানান্ত চেষ্টায় ব্রত দেশী বিদেশী চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণ। আর পুরো বাংলাদেশের সব ধর্মমতের অস্টপ্রহর কাটছে তাঁর সুশ্রুষা কামনা প্রার্থনা, প্রনতিতে। হৃদয়তন্ত্রী ছিড়ে যাচ্ছে মানুষের। যেন আকাশ কাঁদছে,বাতাসে রোনাজারি। জলের কোলাহলেও ভেসে যাচ্ছে তার জন্য রোদন। দেশের সর্বময় প্রাণের স্পন্দন হয়ে উঠেছেন তিনি। প্রতিজন কান পেতে আছেন তার মঙ্গল খবরের শ্রবনাকাংখায়। সুস্থতার অসীম আকুতিতে প্রতীক্ষায় প্রহর কাটছে মানুষের। জায়নামাজে কাঁদছেন পল্লি-জনপদের মানুষ। আল্লাহর কাছে তাদের ’দেশনেত্রী’র প্রাণভিক্ষা চাচ্ছেন। গ্রাম-গঞ্জ-নগর-বন্দন-মফস্বল হতে দলে দলে মানুষ আসছেন ঢাকায়। লোকজন সুসুপ্তি, নিদ্রায় ঊর্ণাজাল ঝেড়ে ফেলে বসুন্ধরায় হাসপাতালের গেটে গিয়ে ভিড় করছেন। এমন বাংলাদেশ কেউ দেখেনি আগে। অভাবনীয় নিখাঁদ নিকষিত দেশপ্রেম-আপোষহীন ধনুর্ভঙ্গ ভাবমূর্তি আর অসামান্য আভিজাত্য বেগম খালেদা জিয়াকে যে জনপ্রিয়তার শিখরে তুলে এনেছে তা এক্ষণে প্রতীয়মান হচ্ছে। তিনি রীতিমত হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের প্রাণ। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হওয়ার পরও এমন জাতীয় অভিভাবকত্বের স্থান অর্জন করার মতো এক অকল্পনীয় ঘটনা ঘটছে তাকে ঘিরে। চিকিৎসকদের মতে বেগম খালেদা জিয়া এখন মৃত্যুর ঝুঁকিতে।
এমন পরিস্থিতিতে তার পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। ৮ হাজার কিলোমিটার দূরের বিলাতে তিনি নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন প্রায় ১৮ বছর। তিনি কেন অসুস্থ মায়ের কাছে ফিরছেন না-তা নিয়ে কতিপয় মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুলুস্থুল চলছে। ’কেন দেশে ফিরছেন না’ -এই জিজ্ঞাসা নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষের নিদ্রা টূটে গেছে যেন। পত্রিকা-টকশোতে যে যার মতো করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন।
তবে এইসকল লোকজন এদিকে অবলোকন করছেন না যে,খালেদা জিয়ার প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র তারেক রহমান,পুত্রবধূ প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা.জুবাইদা রহমান দিবানিশির প্রায় পুরোটা সময় ব্যয় করছেন গুরুতর সংকটাপন্ন মায়ের জন্য। ঢাকার সঙ্গেই রাখছেন প্রতি অনুক্ষণের অখণ্ড যোগাযোগ। বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসক টিমের সঙ্গে সমন্বয় ঘটিয়ে দিচ্ছেন।চিন থেকে চিকিৎসকরা এসেছে দুই ভাগে। আজ লন্ডন থেকে চিকিৎসক দল আসছে। সাত দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কনফারেন্সিং করে সমন্বিত উন্নত চিকিৎসা করছেন। তারেক রহমান যোগাযোগ করে তার মায়ের জন্য লন্ডন ক্লিনিক প্রস্তুত রেখেছেন। তারেক রহমান আবেগ তাড়িত হয়ে তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশে আসলে তার মায়ের জন্য এই সর্বোচ্চ চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে পারতেন না। বাস্তবতা হলো-এই গ্লোবাল ভিলেজে দূরদেশ আর কাছের দেশে বলে অবিচ্ছিন্ন কিছু নেই। এই মুহূর্তে প্রায় ২০ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে দেশে আসাটা মুখ্য নয়,মুখ্য মুখ্য হলো মায়ের সুচিকিৎসা। কেন তারেক রহমান মাকে দেখতে দেশে ফিরছেন না বলে যারা শোরগোল তুলছেন তাদের আচরণে মনে হচ্ছে-একজন সন্তানের মায়ের প্রতি হৃদয় নিংড়ানো অকৃত্রিম ভালোবাসার চেয়ে যেন তাদের দরদ বেশী! তারেক রহমান লন্ডনে বসে লন্ডন ক্লিনিকে, যেখানে চার মাস তার মা উন্নততর সুচিকিৎসা গ্রহণ করেছেন সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে ঢাকার চিকিৎসা টীমের সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসা করাচ্ছেন। লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে বেগম জিয়ার পূর্ণ মেডিকেল হিস্টোরি রয়েছে। যেখানে তার রোগগুলোর সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা সম্পূর্ণ পরিচিত-পরিপূর্ণ পরিজ্ঞাত। অনেক সময় দেখা গেছে যখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা রোগীর চিকিৎসা পর্যালোচনায় বসেন তখন অনেক সমস্যার অনায়াস সমাধান বেরিয়ে আসে। এখন বিশ্বে চিকিৎসার বহুমাত্রিকতা আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে যখন বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পরিবেশের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা ভার্চুয়ালী বসে আলোচনা করেন সেখান থেকে চিকিৎসার অভাবনীয় সব সর্বাধুনিক ফর্মুলা বেরিয়ে আসে। তারেক রহমানের চেষ্টায় সেটাই হচ্ছে বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে। ইতিপূর্বে পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে তিনি বিদেশে এ্যডভান্স ট্রিটমেন্ট করে সুস্থতা ফিরে পান। জাতীয়পার্টির রওশন এরশাদ মৃত্যুর দশায় ছিলেন তিনিও থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন। আরও অনেকেরই জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি পরিস্থিতিতে উন্নততর চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠার দৃষ্টান্ত রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াও সুস্থ হবেন এমন আশায় সবধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন পুত্র তারেক রহমান।
ওয়াকেফহাল মহল ও সংশ্লিষ্টদের এই মত যে, ধরা যাক তারেক রহমান তার মায়ের কাছে এই মুহুর্তে আসলেন,আসতে চাইলেও ২০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। তিনি দেশে ফিরলে লক্ষ লক্ষ লোকের ভিড় ঠেলে এয়ারপোর্ট থেকে মায়ের কাছে গেলেন। বড় বড় হেডলাইনে সংবাদ শিরোনাম হলেন। মানুষ হাসলেন,কাঁদলেন,আপ্লুত হলেন-আবেগে ভাসলেন। গণমাধ্যম কর্মীরা বহুমাত্রায় রিপোর্ট প্রতিবেদন করলেন। কেউ কেউ লাইভ করলেন। টিআরপি বাড়লো। টকশোতে কথার ফুলঝুরি ছুটলো। মানুষের মুখে মুখে ফিরলো খবরের শিরোনাম। মা ও পুত্রের অকৃত্রিম ভালোবাসার হৃদয় তোলপাড় করা তীব্র আবেগঘন দৃশ্যপটের বড় চিত্রমমালায় মহামিলন দেখলেন। সোশ্যাল মিডিয়া ভেসে গেল এই দৃশ্য-খবরের বন্যায়। তার পরে আনন্দের আতিসয্যে দুই লাইন আবেগ মথিত কবিতা রচিত হলো। সম্পাদকীয় হলো,উপসম্পাদকীয় হলো। তারপর রিপোর্ট প্রতিবেদন শেষ হলো। হাসি-আনন্দ-কান্না-কবিতার পরিসমাপ্তি ঘটলো। একদিন গেল ,দু’দিন পেরুলো। দ্যান,হোয়াট নেক্সট? অত:পর কি? অত:পর দেশে-বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করাই হচ্ছে মূল দায়িত্ব। আবেগে না ভেসে সে দায়িত্ব কি বিদেশে বসে পালন করছেন না তারেক রহমান দম্পতি।
মোদ্দাকথা হলো এই যে,তাহলো আল্লাহ চাহেতো বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার নিশ্চিত করা। দেশে হোক বা বিদেশ হোক। তাকে বিদেশ পাঠানো নিশ্চিত করা। বাস্তবতা হলও সুচিকিৎসার নিশ্চিত করার কাজটিই তারেক রহমান দম্পতি লন্ডনে বসেই সুনিবিড়-সুনিপুনভাবে তদারকি করছেন। ফলত:তারেক রহমানের যখন দেশে আসার সময় হবে তিনি আসবেন। তারেক রহমান আবেগের বশবর্তী হয়ে একক সিদ্ধান্ত না নিয়ে সন্তান হিসাবে মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন না করে যদি আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে চলে আসেন তা হলে তা হতে পারে হানিকর।
তারেক রহমান তার দেশে আসা প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেছিলেন,’.কিন্তু অন্য আর সকলের মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। স্পর্শকাতর এই বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত।’এই কথাটির অনেকে অনেক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যারা ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারা সবাই অনুমান ভিত্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এটার একটি মানবিক ব্যাখ্যা হতে পারে তার দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে। তার ভক্ত-সমর্থকরা বেগম জিয়াকে আবেগ-হৃদয় দিয়ে ভালোবাসেন। ভক্ত সমর্থক হিসাবে সাধারণ জনগণের আবেগ ভালোবাসা অবারিত। তারেক রহমান মাকে ভালোবাসেন রিঁখাদ অকৃত্রিম হৃদয়ে। মা তার কাছে পৃথিবী। জগতের সবকিছুর ঊর্ধ্বে। একজন সন্তান হিসাবে মায়ের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য দায়বদ্ধতা সর্বোচ্চ। দায়িত্ব হিসাবেই কেবল নয় তার সবটুকু ভালোবাসার জায়গা থেকে তার কর্তব্য সুনিপুনভাবে পালন করছেন পুত্র তারেক রহমান। সুতরাং আবেগের বসে একক সিদ্ধান্তে দেশে মাকে দেখতে আসার চাইতে এক্ষেত্রে দল এবং পরিবারের সিদ্ধান্তকেও প্রাধান্য দিতে চেয়েছেন।
তাহলে কখন আসবেন তারেক রহমান। এই প্রশ্নটির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা সুনিশ্চিত করা। তিনি ও তার স্ত্রী ডা.জুবাইদা রহমান যেহেতু মেডিকেল বোর্ডের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছেন, সুতরাং যখনি উপযুক্ত সময় হবে তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নিজের পরিবার এবং দলের সঙ্গে কথা বলে আলোচনা করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই দেশে আসবেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার