আব্দুল খালিক:
উত্তাল-বিবেদপূর্ণ আর অপরাজনীতির কারনে সিলেট তথা সারাদেশে পরিচিত বিয়ানীবাজার। দফায়-দফায় রক্তপাত, কোন্দল, সংঘর্ষের বিষয়টি রাজনীতি সচেতন সবার জানা। এখানে সাধারণত: পৌরশহর এবং সরকারি কলেজকেন্দ্রিক রাজনীতিতে চোখ অভিভাবক সংগঠনের নেতাদের। এই অভিভাবকরা আবার ছাত্রসংগঠনগুলো বিভক্ত করে রাখেন।
সূত্র জানায়, আশির দশক থেকে বিয়ানীবাজারে সকল রাজনৈতিক সংগঠনের মজবুত অবস্থান রয়েছে। তবে তখনকার সময়ে একক শক্তি হিসেবে পরিচিত ছাত্র ইউনিয়ন এখন বিলুপ্ত প্রায়। কলেজ কিংবা উপজেলার কোথাও ছাত্র ইউনিয়নের কোন কমিটি বা নেতা-কর্মী রয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়নি। সরকারী কলেজসহ পুরো উপজেলায় নব্বইয়ের দশকে উত্তান হওয়া ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির এখনো স্বকিয়তা বজায় রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
২০০১ সাল থেকে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের চলমান আধিপত্য ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে কমতে শুরু করেছে। প্রতিকূল পরিবেশ ও আভ্যন্তরিন কোন্দলের কারণে ছাত্রদল এখন সর্বস্ব ছাত্র সংগঠন। সক্রিয় নেতাকর্মী থাকলেও প্রশাসনিক বৈরিতার দরুণ ছাত্রশিবির এ উপজেলায় প্রকাশে চালাতে পারছে না কোন কার্যক্রম। কলেজ এবং উপজেলায় একক আধিপত্য বিস্তার করে আছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। দীর্ঘ দিন থেকে কমিটি না থাকায় গ্রæপিং দ্ব›দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এ সংগঠনে। বর্তমানে নিজেদের মধ্যে একাধিক গ্রæপ রয়েছে। মূলধারা গ্রæপ, জামাল গ্রæপ, পল্লব গ্রæপ, রিভারবেল্ট গ্রæপ ও পাভেল গ্রæপ, স্বাধীন গ্রæপ, জয় বাংলা গ্রæপ নামে পৃথক গ্রæপগুলো নিয়মিত সভা, মিছিল ও সমাবেশ করে থাকে। কয়েকটি গ্রæপের নেতৃত্বে রয়েছেন অছাত্র, বয়স্ক এমনকি হত্যা মামলার আসামীও। যার ফলে প্রকৃত ও মেধাবী ছাত্ররা এসব গ্রæপে যোগ দেয়া থেকে বিরত রয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিছু দিন পর পর নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কারণে বিয়ানীবাজারে এক রকমের আতংকের নাম ছাত্রলীগ।
অভিযোগ রয়েছে, অভিভাবক সংগঠন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতারা একেকজন একেক গ্রæপের সাথে রয়েছেন। পরোক্ষভাবে তারা নিজস্ব গ্রæপকে সব ধরনের সহায়তা করে থাকেন।
ছাত্রদল নেতা মুর্শেদ আলম বাবর, বি. হোসেন বাবলু, নুরুল আমীন, শিব্বির আহমদসহ সিনিয়র কয়েকজন দেশ ছেড়ে আত্মগোপনে। ছাত্রদলের উপজেলা, কলেজ ও পৌর শাখার কমিটি রয়েছে। তবে তারা নিষ্ক্রিয়।
ছাত্রশিবির: ইসলামী ছাত্রশিবির বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে পারছে না ২০০৯ সালের ১৯ জুন ছাত্রলীগের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে। ক্যাম্পাসে না গেলেও দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনটি প্রতি বছর কলেজ কমিটি গঠন করে সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রেরণ করে। কলেজ কমিটি এইচএসসি, এসএসসি সাজেসন্স ও তাদের মাসিক কিশোর কণ্ঠের নামে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে নিজেদের উপস্থিতির জানান দেয়। কলেজ ছাড়া উপজেলায় ধর্মভিত্তিক সর্ববৃহৎ এ ছাত্র সংগঠনের আরো ৩টি শাখা রয়েছে। উপজেলা দক্ষিণ, উত্তর এবং পশ্চিম নামে পরিচালিত এসব থানা শাখার প্রধান দক্ষিণ শাখা। উপজেলার সকল ইউনিয়নেই সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। তবে মামলায় জর্জরিত সংগঠনটির কার্যক্রম সীমিত। অতীতে দলের কেন্দ্র ঘোষিত এবং জামায়াতের কর্মসূচীগুলোতে ব্যাপক ভূমিকা দেখালেও দীর্ঘ দিন থেকে পৌর শহরে মিছিল সমাবেশ করতে দেখা যায়নি তাদের। ধারনা করা হচ্ছে কৌশলগত কারনেই জামায়াতের মত নীরব রয়েছে শিবির।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার