স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ককটেল, পেট্রোল, বাঁশের লাঠি ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাত ১২টার পর ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযান শেষে ব্রিফিংয়ে ডিবি প্রধান বলেন, অভিযানে ১০০টির বেশি ককটেল, ৫/৬ বোতল পেট্রোল, ৫০০টি বাঁশের লাঠি, সাতটি দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই ডিবির উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেছে। সাতজনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ রয়েছেন।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে একটি গ্রুপ বিভিন্ন জায়গায় বসে সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে, গাড়িতে আগুন দিচ্ছে, রেলের স্লিপার খুলে ফেলছে, মেট্রোরেল বন্ধ করে দিচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশ অবজারভেশনে জানতে পেরেছে যে, কেউ কেউ আন্দোলনকারীদের লাঠি দিয়ে, এমনকি অস্ত্র সরবরাহ করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই অভিযান।
‘একটি গ্রুপ শুধু অর্থ ও অস্ত্র দিয়েই নয় বরং গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকে নানাদিকে ধাবিত করার চেষ্টা করছে। এর আগেও বিভিন্ন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অনেকে অপরাজনীতি করেছে, আমরা তাদের ছাড় দেইনি। এই কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরেও যারা অপরাজনীতি করার চেষ্টা করবে, আমরা তাদেরও ছাড় দেব না।’
ডিবিপ্রধান বলেন, যারা এই ধরনের কাজ করছে, তাদের নাম-নম্বর আমরা পেয়েছি, তাদের অচিরেই গ্রেপ্তার করা হবে।
আপনি কি বলতে চাচ্ছেন বিএনপি এই আন্দোলনের পেছনে জড়িত? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, তাদের (বিএনপি) কয়েকটি অঙ্গ-সংগঠন আজ প্রোগ্রাম করেছে। তারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের প্রতিহত করতেই আমাদের এ অভিযান।’
প্রসঙ্গত, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন মঙ্গলবার বেশ সহিংস রূপ নেয়। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ছয়জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সারা দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একইসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে।
গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’ প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সোমবারও দুপুর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাত ১০টার পর আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারা দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে তাদের সমর্থনে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার