স্টাফ রিপোর্টার:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষায় প্রণীত ‘জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯’ সংশোধন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আইনটি সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়।
সেখানে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- বিগত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯ (২০০৯ সালের ৬৩ নম্বর আইন) প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ১৫/০৫/২০১৫ তারিখে উক্ত আইন অনুসারে বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুবিধাদি প্রদানের গেজেট জারি করা হয়। কেবল একটি পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য আইনটি করা হয়েছিল, যা একটি সুস্পষ্ট বৈষম্য।
বাংলাদেশের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সব বৈষম্য দূরীকরণে দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেছে। ‘বর্তমানে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় রহিয়াছে’ বিধায় এ বিষয়ে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ আইনটি রহিতকল্পে অধ্যাদেশ জারি করা প্রয়োজন।
এ প্রেক্ষাপটে, উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠক কর্তৃক ‘জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর পরিবারের সদস্যগণ’ এবং কোনো রাষ্ট্রের রাষ্ট্র-প্রধান বা সরকার প্রধান এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (Special Security Force) আইন, ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে গত ৮ আগস্ট (২০২৪) প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হইয়াছে। এইরূপ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (Special Security Force) আইন, ২০২১’-এর আওতায় প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এছাড়া, বিদ্যমান আইনের আওতায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর পরিবারের সদস্যদের’ নিরাপত্তা প্রদান সংক্রান্ত বিধানসমূহ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কার্যকর করা সম্ভব নয় বিধায় বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ায় উক্ত আইনের কতিপয় বিধান বিলোপসহ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি সংযোজনপূর্বক ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (Special Security Force) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’ উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়।
স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন পাওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, তাদের সন্তান এবং সন্তানদের স্বামী-স্ত্রী ও নাতি-নাতনিদের নিরাপত্তার জন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নিরাপত্তা সুবিধা, নিরাপদ আবাসনসহ সরকার থেকে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুবিধা বাতিল হয়ে গেল।
এ আইনের অধীনে একজন ‘ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট পারসন’-এর (ভিআইপি) জন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে, তাদের (বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার) জন্যও আজীবন একই ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল।
এছাড়া, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রত্যেক সদস্যের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত আবাসনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল এ আইনে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর, গত ২৫ আগস্ট এ দুই আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
রিটে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯ এবং বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন ২০২১ এর ধারা ২(খ), ২(গ), ৮(১), ৮(৩), ৮(৪) এবং ৯(২); যেখানে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যগণ’ লেখা আছে, সেগুলো অসাংবিধানিক এবং অবৈধ ঘোষণা করার জন্য রিট করা হয়।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার