Daily Jalalabadi

  সিলেট     শুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩০শে কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাকে দলের দায়িত্ব দিচ্ছেন হাসিনা?

admin

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪ | ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪ | ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
কাকে দলের দায়িত্ব দিচ্ছেন হাসিনা?

স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন কী করবেন? দলের দায়িত্ব কাকে দেবেন? তিনিই বা যাবেন কোথায়? এ নিয়ে তিনি মনস্থির করতে পারছেন না। গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে ভারতে পালিয়ে যান। এখনো তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। দুবাই চলে যাচ্ছেন- এমনটা চাউর হয়ে আছে ক’দিন থেকে। বিশেষ করে মানবজমিনে রিপোর্ট প্রকাশের পর। মানবজমিন আন্তর্জাতিক চাপের প্রসঙ্গ টেনে খবর দিয়েছিল ভারত সরকার তাকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠাতে সম্মত হয়েছে। যাই হোক, মাঝেমধ্যে তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। অনেকেই এটাকে ‘অডিও বিপ্লব’ বলছেন। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে অডিও বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে নিমিষেই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব কার হাতে দিচ্ছেন। এই প্রশ্ন এখন সর্বত্র। নেতাকর্মীরাও চাচ্ছেন দলকে সংগঠিত করতে।

সর্বশেষ অডিও বার্তা থেকে জানা যায়, হাসিনা বলছেন- কাকে দায়িত্ব দেবো? যাকেই দেবো সেই তো গ্রেপ্তার হয়ে যাবে। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বলছেন, হাসিনা দলের কাউকেই বিশ্বাস করেন না। তিনি শেষদিন পর্যন্ত চেষ্টা করবেন পরিবারের মধ্যেই কাউকে বেছে নিতে। দু’মাস হয়ে গেল তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ছোটবোন রেহানা। কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কাজের সূত্রে দিল্লিতে রয়েছেন। মাঝেমধ্যে তিনিও দেখা করছেন। ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তার সঙ্গে দেখা করছেন। করছেন শলা-পরামর্শও। এ নিয়ে নানা গুজব তো রয়েছেই। ওদিকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাসিনার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। দলকে সংগঠিত করার তাগিদ দিচ্ছেন। ডাকসাইটে সাবেক এক মন্ত্রীকে দল গোছানোর দায়িত্ব দিয়েছেন, অঘোষিতভাবে।

এই নেতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলছেন, ধৈর্য ধরো নেত্রী সহসাই নির্দেশ দেবেন। এর আগেও এমন অবস্থা হয়েছিল আওয়ামী লীগের। ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল আওয়ামী লীগ। দলের একাংশ ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে অনেক বড় নেতা দেশেই অবস্থান করছিলেন। অনেকে অবশ্য জেলে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই পালিয়ে গেছেন ভারতে। বিদেশে থাকায় ১৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা বেঁচে গিয়েছিলেন। পশ্চিম জার্মানি থেকে ভারতে নিয়েছিলেন রাজনৈতিক আশ্রয়, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। শেখ হাসিনার পথ অনুসরণ করেছেন দলটির অনেক বড় বড় নেতা। বলাবলি আছে, যাওয়ার আগ মুহূর্তে কাউকে কিছু না বললেও দলের অন্তত দু’জন নেতাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন পরিস্থিতি বিবেচনায় নেতাকর্মীরা যেন ভারতে চলে যায়। এ কারণেই কি সব ‘মাস্টারমাইন্ড’ও ভারতে পৌঁছে গেছেন নিরাপদে!

যারা শেখ হাসিনাকে ডুবিয়েছেন তারাই আবার ঘুর ঘুর করছেন তার চারপাশে। এরাই কিন্তু নিজ দেশের নিরীহ জনগণের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়েছিল। যাই হোক, এটা কোনো সেইফ এক্সিটের অংশ কিনা- এ নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন। ঢাকায় আত্মগোপনরত কোনো নেতাই মুখ খুলছেন না। বরং যারাই রয়েছেন তাদের প্রায় সবাই শেখ হাসিনাকে দায়ী করছেন। বলছেন, তার একগুঁয়েমি ও প্রতিহিংসার রাজনীতি এবং সীমাহীন দুর্নীতি দলকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে। এই সংকট এখন সর্বগ্রাসী। শেখ হাসিনা কবে দেশে ফিরতে পারবেন? অসংখ্য হত্যা মামলা তার বিরুদ্ধে। গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে চলেছেন।

দলের কেউ কেউ বলছেন, অতিমাত্রায় ভারত নির্ভর হওয়ার কারণে শেখ হাসিনার এমন পরিণতি হয়েছে। সঙ্গে ভারতও একপেশে নীতির কারণে দৃশ্যপট থেকে বিদায় নিয়েছে। আত্মগোপনরত একজন আওয়ামী লীগ নেতা বললেন, হাসিনার সমস্যা হাসিনা নিজেই। আমলাদের ওপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন দলকে ব্যবহার করতেন লাঠিয়াল হিসেবে। দল আর সরকার এক হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে হাসিনার পতনের পর ঐতিহ্যবাহী এই দলটি হারিয়ে গেছে রাজনীতির মাঠ থেকে। আওয়ামী লীগ হয়তো আবার ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু তা সময়ের ব্যাপার। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যারা বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন, এখন তারাই বলছেন- হাসিনার স্বৈরাচারী মনোভাব চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কতিপয় আমলা ও নেতার ওপর ছিলেন হাসিনা অন্ধ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোবটের মতো আচরণ করতেন। তাকে যা বলা হতো তাই তিনি বলে যেতেন অবলীলায়। এক পর্যায়ে তিনি বনে গেলেন ‘বিএনপি বিষয়ক মন্ত্রী’। প্রতিদিনই বিএনপি, তারেক রহমান আবার কখনো জিয়াউর রহমানকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন। ফ্যাশান আর টাকা বানানোর নেশায় তাকে পেয়ে বসেছিল। এখন তিনি কোথায়? সিঙ্গাপুর না ভারত, কেউ বলতে পারছেন না। শুরুতে শোনা গিয়েছিল তিনি নাকি যশোর সেনানিবাসে রয়েছেন।

 

আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের সাধারণ সম্পাদক যখন নিরাপত্তা বাহিনীকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেন তখনই প্রশ্ন ওঠে এই কাজটি কার। কারফিউ জারি হলে পুলিশ বা সেনাবাহিনী এই নির্দেশ দিয়ে থাকে। আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট- এই বার্তাও দিয়েছিলেন। এতে করে ছাত্রলীগ পরিণত হয় দানবে। জনমানুষের ঘৃণা সৃষ্টি হয় তাদের বিরুদ্ধে। এ জন্য কাদেরকেই দায়ী করা হচ্ছে। তিনি হয়তো বলবেন, আমাকে যা বলা হয়েছিল- আমি তাই বলেছি। সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়েছে এসব নির্দেশে। এখন আসলে পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে। হাসিনার সামনে বিকল্প কী? ভারতে কতোদিন থাকতে পারবেন? বেশিদিন নেই এটা তো এখন স্পষ্ট। আন্তর্জাতিক চাপে ভারত তাকে বলেছে, ভিন্ন গন্তব্য খোঁজার। সর্বশেষ খবর তিনি দুবাই চলে যেতে পারেন।

হাসিনা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমের নিত্যদিনের হিসাব-নিকাশ পেয়ে যাচ্ছেন মুহূর্তেই। তিনি তার সহকর্মীদের বলছেন, মজা টের পাক। কতোদূর যাবে? দলের গোপালগঞ্জের এক নেতাকে বলেছেন, দেখ এক মাসও টেকে কিনা! শেখ হাসিনা যাই বলেন না কেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো নড়বড়ে, দুর্বল। দিক নির্দেশনাহীন। পেছনে সেনা সমর্থন না থাকলে তাদের অবস্থা কেমন হবে? সরকারের ভেতরে রাজনৈতিক শক্তির উপস্থিতি না থাকায় এমনটা হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। দু’মাস কেটে গেল এভাবেই। সংলাপে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বিএনপি চাচ্ছে যৌক্তিক সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন। জামায়াত হাঁটছে ভিন্ন স্রোতে। তারা চায় সংস্কার শেষে নির্বাচন। এটা কিন্তু বলা হচ্ছে না সংস্কারের জন্য কতোদিন সময় দরকার। জামায়াত হয়তো জানে না এই কৌশল পরাজিত শক্তিকেই উৎসাহিত করবে। তারা অবশ্য বারবার ভুল পথেই পা বাড়ায়। ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ার এক আড্ডায় শোনা গেল, জামায়াতের এই কৌশলকে উৎসাহিত করছে আঞ্চলিক একটি শক্তি। এখানে একটা সত্য কাহিনীর অবতারণা করছি। শেরেবাংলা একে ফজলুল হক যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখনকার ঘটনা। একদিন মুখ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব হাসতে হাসতে এসে বললো, স্যার আজ একটা সুখবর আছে। শেরেবাংলা জানতে চাইলেন কী সেই সুখবর। বলো, বলো! একান্ত সচিব বললেন, স্যার আজ আনন্দবাজার আপনার প্রশংসা করেছে। তখন শেরেবাংলা বললেন, আরে গর্দভ, এটা সুখবর নয়। খোঁজ নিয়ে দেখো আমি কোথাও ভুল করেছি। মনে রেখো, ওরা যখন আমার প্রশংসা করবে তখন বুঝবে আমি ঠিক পথে নেই। আর যখন সমালোচনা করবে তখন বুঝবে আমি সঠিক পথে রয়েছি। ওদিকে ইসলামপন্থিরা সংগঠিত হচ্ছে। তারা নতুন এক কাফেলা তৈরি করতে যাচ্ছে। যেটা এর আগে কখনো হয়নি। এই ভূখণ্ডে নতুন। নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে এই কাফেলা ততো লম্বা হবে। দেখা যাক না শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়!

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন