Daily Jalalabadi

  সিলেট     শনিবার, ১৬ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিয়ানীবাজারে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হলেন শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট আতাউর রহমান

admin

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৩ | ১২:২৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ | ১২:২৬ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বিয়ানীবাজারে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হলেন শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট আতাউর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার:
বিয়ানীবাজার উপজেলার শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হলেন দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাস্টার ট্রেইনার মো: আতাউর রহমান। তিনি বহুল পরিচিত এক মুখ। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি একাধারে কলামিস্ট, গ্রন্থ লেখক, গীতিকার ও সাংবাদিক।

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষে বিয়ানীবাজার উপজেলা শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান বাছাই কমিটি গত ১৫ মে ২০২৩খ্রি. তারিখে কমিটির আহবায়ক ও নির্বাহী অফিসার আফসানা তাসলিম এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মৌলুদুর রহমান এর যৌথ স্বাক্ষরে বিয়ানীবাজার উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান এর নাম প্রকাশ করেন। এ তালিকা প্রকাশের পর বিয়ানীবাজার উপজেলার শিক্ষক, সাংবাদিক ও হিতৈষী ব্যক্তিবর্গের মাঝে এক আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। সকল শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিসহ অনেকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক ও উপজেলার বাছাই কমিটিকে।

দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নজমুল ইসলাম বলেন, আতাউর রহমান স্যার একজন শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক। আমি উনাকে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করেছি। তিনি শিক্ষার্থীদের দিতে জানেন। সেজন্য তিনি উপজেলা কেন্দ্র থেকে মফস্বলের স্কুলকে আলোকিত করেছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি অতুলনীয় দৃষ্টান্ত।

২০২৩ সনে বিয়ানীবাজার উপজেলায় শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে নির্বাচিত প্রধান শিক্ষক মো: আতাউর রহমান বিয়ানীবাজার পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী শ্রীধরা গ্রামে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা জুলাই এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো: জহুর উদ্দিন ও মাতার নাম মেহেরুন নেছা। তাঁর দু’পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তারা প্রবাসে ও দেশে স্কুল কলেজ-এ অধ্যয়নরত।

তিনি ১৯৮৮ সনের ৫ জুন শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। ২০১৭ সালে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর অত্যন্ত সুনাম, সততা, যোগত্য, মননশীলতা ও দক্ষতার সাথে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি প্রশাসনিক প্রশিক্ষণসহ শিক্ষার মান উন্নয়ন ও বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়মিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম অত্যন্ত সুনামের সাথে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন৷ দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ পারিপার্শিক উন্নয়নমূলক কাজও করেছেন; যা সকল মহলে সমাদৃত। এর আগে তিনি খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যানিকেতন-এর কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ইংরেজি বিষয়ের প্রশিক্ষক ও ইংরেজি গ্রামার লেখক হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। এছাড়া বিয়ানীবাজার উপজেলার শিক্ষা সাংস্কৃতি সংগঠনসহ বেশকিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে তিনি সম্পৃক্ত রয়েছেন।

উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে আতাউর রহমান বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনায় শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পাঠদানে বেশি জোর দেয়া হয়। আমার শিক্ষকবৃন্দও আন্তরিক। আমি প্রেষণায় বিশ্বাসী। সেই প্রেষণার ফলে আমার বিদ্যালয়ের ফলাফল দিনদিন ভালোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলাফলের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পোশাক, শৃঙ্খলা, খেলাধুলা, সংস্কৃতি সবখানে কৃতিত্ব এসেছে। আমার দায়িত্বকালে বিদ্যালয়ে সরকারি অর্থায়নে গড়ে উঠেছে চারতলা ভিত বিশিষ্ট পাকা ভবন, গড়ে তুলেছি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, শেখ রাসেল ল্যাব, বিজ্ঞানাগারের পর্যাপ্ত সামগ্রী। এ প্রতিষ্ঠানে বাৎসরিক বাজেট প্রণয়ন, ক্যাশবহির সাথে ব্যাংক হিসাবের স্বচ্ছতা সরকারি অডিট প্রতিবেদনের প্রমাণিত বিষয়। এখানে স্কুলের গেইট ও সেইড নির্মাণ করে প্লেয়িং এক্সেসোরিস সহ লেখাপড়ার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছি। এছাড়াও শিক্ষকমণ্ডলী, ম্যানেজিং কমিটির সহযোগিতায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য অনুদান সংগ্রহ, দেয়ালিকা প্রকাশনা ইত্যাদি কারণে আমি শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হতে পেরেছি।

শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে সম্মান লাভ বড়ই গর্বের। এটা মণিমুক্তার চেয়েও অনেক বেশি পাওয়া। এটি আমাকে আরও উদ্বুদ্ধ করবে। আমার এ সাফল্যের জন্য প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ-সহ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যবৃন্দ, স্কুলপ্রেমী দেশী-প্রবাসী স্বজন ও প্রিয় শিক্ষার্থীদের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তাদের একাত্মতা ও সহযোগিতা ছাড়া শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়ন আমার একার পক্ষে অগ্রসর হতে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হত না। এই পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়নে আরও বেশি বেশি ভূমিকা রাখতে চাই। শিক্ষার্থীদের যতটা দেওয়া সম্ভব, তার সবটুকুই দিতে চাই। সেরা পারফরম্যান্স দিয়ে কর্মের মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই। এজন্য প্রয়োজন সকলের সহযোগিতা।

শিক্ষা জীবন:
আতাউর রহমান স্যারের লেখাপড়ার হাতেখড়ি শুরু হয় শ্রীধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন কুড়ারবাজার হাই স্কুলে। সেখান থেকে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে গোলাপগঞ্জ উপজেলার আলএমদাদ হাই স্কুলে ৮ম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ১৯৮১খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পাশ করেন। একাদশ (বিজ্ঞান) শ্রেণিতে ভর্তি হোন বিয়ানীবাজার মহাবিদ্যালয়ে। অত:পর সিলেট গভ: কমার্শিয়াল কলেজ-এ ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স নিয়ে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৭ সনে ব্যাচেলর অব কমার্স ডিগ্রি গ্রহণ করেন সিলেট মদনমোহন কলেজ থেকে। শিক্ষকতা পেশায় যোগদান পরবর্তী তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাচেলর অব এ্যাডুকেশন (বি.এড) ও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে
মাস্টার অব এ্যাডুকেশন(এম.এড) ডিগ্রি অর্জন করেন।

এছাড়াও দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। তন্মধ্যে ইংলিশ-ইন-একশন, মাইটেক, সিপিডি, স্যাটেলাইট ট্রেনিং (নায়েম), ট্রেনিং ফর টিচার্স (সাউথ কুরিয়া), টিচার অব ট্রেইনিং (ব্যানবেইস) উল্লেখযোগ্য।

কর্ম জীবন:

প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বিয়ানীবাজার উপজেলার কেন্দ্রস্থিত ‘খলিল চৌধুরী এবি নিকেতনে (বিয়ানীবাজার আদর্শ বিদ্যানিকেতনে) ১৯৮৮ সনের ৫ জুন সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। একই প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি নিয়ে সিনিয়র শিক্ষক ও ২০১২ সনে বিদ্যালয়ের কো-অর্ডিনেটর নিযুক্ত হোন। ২০১৪ সনে মাস্টার ট্রেইনার (ইংরেজি) মনোনীত হয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সনের ১লা এপ্রিল পদন্নোতি নিয়ে ঐতিহ্যবাহী দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। ২০১৯ সনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্থরে শিক্ষার প্রচলন প্রকল্পের আওতায় HIT প্রশিক্ষনে সিলেট অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন।

সাংগঠনিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়িত্বের দিক থেকে আতাউর রহমান পিছিয়ে নেই। তিনি
১৯৮৬: প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক -‘সৃজন সাহিত্য পরিষদ, সিলেট শাখার প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি(১৯৮৬), নিজ গ্রাম শ্রীধরা জনমঙ্গল সমিতির সেক্রেটারি সহ একাধারে তিনি ২০০৫ থেকে ২০১১খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি ও ২০১২ হতে ২০২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এছাড়াও তিনি বিয়ানীবাজার চ্যারিটেবল ফাণ্ডেশন(বাংলাদেশ), । লায়ন্স ক্লাব অব বিয়ানীবাজার-এ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, লায়ন্স ক্লাব অব পঞ্চখণ্ড, জেলা৩১৫, বি-১, বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট, মনিরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদ, বিয়ানীবাজার-এর সদস্য, বিয়ানীবাজারের সালিশ ব্যক্তিত্ব আব্দুস সাত্তার স্মৃতি পরিষদের সদস্য সচিব ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ, সিলেট জেলা কমিটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, সিলেট জেলা শাখার সহসভাপতি পদে অধিষ্ঠিত আছেন।
আতাউর রহমান রাজনীতির দিক থেকে মূলত আওয়ামী ঘরানার লোক। অধ্যয়নকালীন ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয় ছিলেন ও পরবর্তীতে তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, বিয়ানীবাজার থানা শাখার যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

লেখালেখি:
স্কুল জীবন থেকে তাঁর লেখালেখি শুরু। ১৯৮৩ সন থেকে সংবাদপত্র জগতে পথচলা। দীর্ঘ দু’যুগ ব্যাপি তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক প্রতিশ্রুতি, দৈনিক রূপালী, বাংলাবাজার পত্রিকা, দৈনিক মানবজমিন, সাপ্তাহিক যুগভেরী, দৈনিক আজকের সিলেট, দৈনিক জালালাবাদ সহ স্থানীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি ১৯৮৪ সনে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ‘সৃজন সাহিত্য পরিষদ’ নামে একটি সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন এই পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তীতে তিনি বিয়ানীবাজার সাংবাদিক কল্যাণ সমিতি গঠন করেন। তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তাঁর লেখা প্রবন্ধ, জীবন সাহিত্য, সমসাময়িক নানা বিষয় জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়।

প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘একুশ থেকে স্বাধীনতা, সম্পাদিত গ্রন্থ ‘সৃজনী’, সম্পাদিত সাহিত্য ম্যাগাজিন ‘অণির্বাণ একুশ’, বিয়ানীবাজার সংলাপ (তথ্যগ্রন্থ), জাগরণ ও Learners’ Basic English Grammar & Composition ইত্যাদি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 999 বার

শেয়ার করুন