স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর গুলশানের আগুনের ঘটনায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম: মো. রাজিব (৩৫)। ঘটনার পর রোববার রাতে রাজুকে গুরুতর আহত অবস্থায় গুলশানের জেড এইচ শিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানেই রাত ৩টার দিকে তিনি মারা যান। ঘটনার সময় হাসপাতালে নেয়ার পর আনোয়ার হোসেন নামে একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে ওই আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুইজনের মৃত্যু হলো। রাজুর গ্রামের বাড়ি গাজীপুর কালীগঞ্জে। গুলশানের ওই ভবনের ১২তলায় একমি গ্রুপের পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় তিনি বাবুর্চির কাজ করতেন। ফায়ার সার্ভিস আগুনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি করেছে। জানা গেছে, ভবনটির জমির মালিক মোশাররফ হোসেন ও জাকির নামে দুজন।
মোশাররফ ফেনী-৩ আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। ভবনের কয়েকটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলোর মালিক মোশাররফ ও জাকির। সেগুলো ভাড়া দেয়া আছে। তবে জমির মালিকেরা কেউ এই বাড়িতে থাকেন না।
গত রোববার সন্ধ্যা ৬টা ৫৯ মিনিটের দিকে গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর রোডের বহুতল ভবনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। কিন্তু, আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে থাকে। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধারে যোগ দেন সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরাও। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। আগুন লাগা ভবনের কয়েকটি ফ্লোর থেকে নারী শিশুসহ ২৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন ফায়ার ফাইটাররা।
গতকাল সকালে ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায় যে, ওই ভবনটি পরিষ্কার পরিছন্ন করা হচ্ছে। আগুনে ১০ তলা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আগুনে ভবনের সবকিছু পুড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন সদস্যরা পরিদর্শন করেছেন। ভবনটি পরিদর্শন করেছেন প্রকৌশলীরাও। তারা বলেছেন যে, ভবনে আগুন নির্বাপণের ব্যবস্থা আছে। গতকাল সকালে নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস কনার প্রকৌশলী মাহফুজুল হাসান জানান, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বেজেছে। যারা নিচের দিকে ছিলেন তারা নেমেছেন। আগুন লাগার পরে প্রত্যেকেই যদি সিঁড়ি দিয়ে বের হয়ে যেতেন তাহলে সবাই নিরাপদ হয়ে যেতে পারতেন। অনেক সময় ভুল অ্যালার্ম হয়।
যারা বাসায় ছিলেন তারা মনে করেছিলেন ভুল অ্যালার্ম হয়েছে। যখন তারা দেখেছেন আগুন এবং নিচ থেকে বলা হচ্ছিল আগুন লেগেছে, সবাই নেমে যান, তখন যে যতটুকু পেরেছেন নেমে এসেছেন। তিনি আরও জানান, আগুন থেকে বাঁচার জন্য সব ব্যবস্থাই রাখা ছিল। ভবনে অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণের একটি টিম ছিল। তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নিয়েছে।
তিনি আরও জানান, পুরো ভবনটিতেই কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। প্রতি বাসায় সেখান থেকে সংযোগ নেয়া হয়েছিল। যখনই একটি বাসা থেকে প্রথমে ধোঁয়া দেখা যায়, আগুন কিন্তু যায়নি। ধোঁয়ার জন্যই বেশি সমস্যা হয়েছে। আর আগুন ওপরে দুইদিক থেকে বেশি হয়েছে। ভবনটিতে সব সিস্টেমই করা আছে। রাজউক থেকে যেই সার্টিফিকেট দেয় ওটাও নেয়া আছে। বাড়ির ৪ তলার এ-৪ ফ্ল্যাটের মালিক ওয়াশিম রেহমান। তিনি জানান, ভবনের প্রত্যেকটা ফ্ল্যাটের গ্লাস ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ভবনে ফায়ার স্টিংগুইসার, ফায়ার হাইড্রেন্ট ও ফায়ার এক্সিটও ছিল। সবকিছুই সচল ছিল। প্রত্যেক দুই সপ্তাহ পরপর এখানে ফায়ার সেশন হতো। আগুনটা অনেক বড় হওয়ায় সেগুলো খুব বেশি কাজে লাগেনি।
এদিকে, গতকাল সকালে ভবনটি পরিদর্শনে আসেন ঢাকা উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের জানান, এই ভবনটি সব নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। ইমার্জেন্সি পরিস্থিতির জন্য ফায়ার ড্রিল করার মতো গার্ড ও বাসিন্দারা প্রশিক্ষিত ছিলেন কিনা জানা নেই। সাধারণত থাকে না। যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় আগুন লাগতেই পারে। কিন্তু, যেটা দরকার সেটা হচ্ছে সেফটিনেস ও সচেতনতা। এই ভবনে যারা ছিলেন তারা যথেষ্ট সম্পদশালী ও শিক্ষিত। কিন্তু, একটা আগুনেই তারা ভবনে আটকে গেছেন।
আজকে তারা আটকে গেছেন, কালকে আমিও আটকাতে পারি, আপনি আটকে যেতে পারেন। বাসাবাড়িতে সাধারণত সেটা হয় না। সত্যিকার অর্থে ফ্ল্যাট কেনেন কিংবা নিজে বাড়ি করেন, সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরও জানান, দুই লাইনের মাঝে সেপারেশন থাকে। সেটা যদি না থাকে বা মাঝে যদি কোনো দাহ্য পদার্থ থাকে তাহলে কিন্তু, সেপারেশন হলো না। সেটা আমি ইঞ্জিনিয়ার ও ফায়ার সার্ভিসকে দেখতে বলেছি। সেন্ট্রাল এসি ছিল। সেটা থেকে কোনো কারণে আগুন লেগেছে কিনা সেটা তদন্ত হবে। গুলশানে কেন ফায়ার স্টেশন নেই প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি রাজউক জানে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি আব্দুল আহাদ জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি হয়েছে তারা দেখছেন মূলত আগুনের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার