স্টাফ রিপোর্টার:
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ধরনের সংলাপে যাবে না ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটি বলছে, বিরোধী দলের বড় বড় নেতারা কারাবন্দি। তাদের কারাবন্দি করে নির্বাচন কমিশন কার সঙ্গে সংলাপ করবে?
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে পুরানা পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৩ নভেম্বরের মহাসমাবেশ উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি। মহাসমাবেশের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন মুফতি ফয়জুল করীম।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, নির্বাচন কমিশন কাকে নিয়ে সংলাপ করবে? বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে। মির্জা আব্বাস, আলালও কারাগারে। বিরোধী দলের বড় বড় নেতারা কারাবন্দি। তাদের কারাবন্দি করে নির্বাচন কমিশন কার সঙ্গে সংলাপ করবে?
তিনি বলেন, আর আমরা? আমরা তো এই নির্বাচন কমিশনই চাই না, এই ইসির বাতিল চাই। তাহলে তাদের সঙ্গে কিসের সংলাপ?
সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবিতে আগামী ৩ নভেম্বর মহাসমাবেশ করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সংলাপ, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড়সহ কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কিসের সংলাপ? সে (সিইসি) তো মানুষের মৃত্যু কামনা করে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তো মানুষের মৃত্যু কামনা করে! যারা বা যে ব্যক্তি মানুষের মৃত্যু কামনা করে তাদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? কাজেই আমরা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বাতিল চাই। তাদের সঙ্গে আমরা কোনো সংলাপে যাব না। আমরা তো এই নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবিতেই মহাসমাবেশের আয়োজন করেছি।
বিরোধী দলের চলমান অবরোধ হরতাল কর্মসূচিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে দেখা যায়নি। তবে ইসলামী আন্দোলনের কি আঁতাত করে চলছে? এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা সবাই ঐকমত্য। এ ব্যাপারে সব পক্ষ থেকে একই ধরনের বক্তব্য আসছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত যুগপথ আন্দোলনের কোনোটাতেই অংশগ্রহণ করি নাই। দাবির ব্যাপারে আমরা সবাই এখনো ঐকমত্যে আছি। কিন্তু কর্মসূচির ব্যাপারে আমরা এখনো ঐকমত্য পোষণ সবাই করি নাই। যেহেতু ঐকমত্য পোষণ করি নাই, সেহেতু আঁতাত বা অন্য কিছুর তো প্রশ্নই ওঠে না। এটা তো স্পষ্ট। তবে ভবিষ্যতে কী হবে তা তো বলা যায় না। ভবিষ্যতে একসঙ্গে কর্মসূচি হবে কি হবে না তা এখনই বলা যায় না। সেটা সময়ই বলে দেবে।
নির্বাচন কমিশন যদি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে ডাকে তাহলে আপনারা সংলাপে যাবেন কি না?— জানতে চাইলে দলটি সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, আমরা এই নির্বাচন কমিশনকে অবৈধ বলি। তাদের বাতিল চাই। যার পদত্যাগ চাই, যাকে বাতিলে সরকারের কাছে আহ্বান করেছি, যাকে নিরপেক্ষ মনে করি না, যে নির্বাচন কমিশন মানুষের মৃত্যু কামনা করে তার সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন সংলাপে যাব না।
ইসলামী আন্দোলনের জাতীয় সরকার রূপরেখা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা তো বলেছি, নিবন্ধিত সমস্ত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার হবে। তারাই নির্ধারণ করবে জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবে।
সম্প্রতি আন্দোলন করতে গিয়ে যে সমস্ত নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হয়ে অবৈধভাবে জেলে রয়েছেন তাদের মুক্তি দাবি করেন তিনি।
তিনি বর্তমান সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে বলেন, আমি আহ্বান করবো, যারা দেশের কল্যাণের জন্য জনগণের কল্যাণের জন্য, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য, মানুষ যেন তার পছন্দমত ভোট দিতে পারে, সে অধিকার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যারা আন্দোলন করছে, তাদের গ্রেপ্তার করবেন, এই জাতি তা সহ্য করবে না। যেরকম ডাকার সামান্য সময়ের জন্য তার মালিককে বন্দি করতে পারে, কিন্তু সেটার স্থায়িত্ব হয় না। তেমনি সরকারকে বলবো, আপনি অস্ত্রের নলে মানুষকে দমাতে পারেন, কিন্তু সেটার স্থায়িত্ব হবে না। এদেশের মানুষ জ্বলে উঠবে আন্দোলন করবে সংগ্রাম করবে। তাদের অধিকার বাস্তবায়ন করবে করবে ইনশাল্লাহ।
যে সাংবাদিক নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন, যে রাজনৈতিক কর্মী আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের রুহের মাগফেরাত কামনা করি তিনি। পাশাপাশি ঘটনা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাকী ও মিডিয়া সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম কবির।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার