Daily Jalalabadi

  সিলেট     শনিবার, ১৬ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিদিন স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে থাকে শিশু নাঈম

admin

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ০২:৩৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ০২:৩৭ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
প্রতিদিন স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে থাকে শিশু নাঈম

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
প্রতিদিন ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিশু শিক্ষার্থী নাঈম উর রহমান নাঈম স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ভেতরে চলে পড়ালেখা। যে কার্যক্রমে তার যমজ ভাই অংশ নিলেও নাঈম নিষিদ্ধ। শ্রেণি কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর স্কুলের ফটক থেকে কোমলমতি শিশুটি তার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বাবার সাথে ফিরে যায় নিজ বাসায়। যমজ ভাইয়ের জন্য স্কুলের প্রধান ফটক উন্মুক্ত হলেও নাঈমের জন্য ফটকটি বন্ধ রয়েছে ১৩ মাস ধরে। বিধি মোতাবেক স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও বেতন পরিশোধ করলেও সে স্কুলের উপযোগী নয়, কথা বলতে পারে না, পেন্সিল ধরতে পারে না, দুষ্টামি করে এমন অজুহাতে তাকে অনেকটা অবাঞ্ছিত করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কলেজ সড়কে অবস্থিত দি বাডস্‌ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের। প্রতিদিন শহরের কলেজ রোড থেকে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে পড়ে অসহায় মুখাবয়বের ওই শিশুটিকে। শিশুটির অসহায় বাবা ব্যবসায়ী মো. আব্দুর রহমান ও মা শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফিনলে টি কোম্পানির বালিশিরা মেডিকেল ডিপার্টমেন্টের ইনচার্জ ডা. নাদিরা খানম দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রায় বছরখানেক ধরে। এর প্রতিকার চেয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে লিখিত আবেদন, লিগ্যাল নোটিশ করেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

দীর্ঘদিন স্কুল কর্তৃপক্ষ শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেয়ার অনুমতি বা টিসি না দেয়ায় শিশুটির শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে গেছে একটি বছর। অবশেষে সম্প্রতি তার টিসি নেয়ার জন্য পত্র পাঠিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

অসহায় শিশুটির বাবা ব্যবসায়ী মো. আবদুর রহমান অভিযোগ করেন, তার যমজ শিশু পুত্রদ্বয়কে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে দি বাডস্‌ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে নার্সারি বাংলা মিডিয়ামে ভর্তি করেন। স্কুলের অধ্যক্ষসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট ভর্তি কমিটি তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ওই বছরের জুন মাস পর্যন্ত তারা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেন। পরে জুলাই মাসে তাদের ওই স্কুলেরই ইংলিশ মিডিয়ামে পুনরায় ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভর্তি করা হয় এবং তারা একসঙ্গে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেয়। ২০২২ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর নাঈমকে নানা অজুহাতে ক্লাস করতে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযাগ আনা হয় সে স্কুলের উপযোগী নয়, কথা বলতে পারে না, পেন্সিল ধরতে পারে না। ২০২২ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর থেকে অদ্যাবধি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠে স্কুলের পোশাক পরিধান করে, স্কুল ব্যাগ নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে স্কুলের গেইট পর্যন্ত আসে। পরে গেটে তাকে আটকে দেয়া হয়। স্কুল ছুটি পর্যন্ত নাঈম বিষণ্ন মনে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে স্কুলের প্রধান গেটে। গত এক বছর ধরে চলছে এ ঘটনা। তার সহপাঠী ও অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যখন শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে বা টিফিনের সময় মাঠে খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছে তখন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে মন খারাপ করে তা দেখছে নাঈম। এতে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্তকর অবস্থায় পড়ে। মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে নাঈমের শ্রেণিশিক্ষক কৃষ্ণা সূত্রধর তার ডায়েরিতে নেতিবাচক মন্তব্য লিখতে শুরু করেন। এ নিয়ে আমি ও আমার স্ত্রী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে স্কুল অধ্যক্ষ আমাদের জানান, নাঈম পড়াশোনায় মনোযোগী না এবং তার দুষ্টামির কারণে অন্য শিশুদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে।

পরবর্তীতে ১৯শে সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার সন্তানকে ক্লাসে ঢুকতে দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে আবারো অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো আমার সন্তান নিয়ে নানা ধরনের আপত্তিকর কথা বলেন এবং আমাকে বিদায় করে দেন। ফলে বাধ্য হয়ে আমি গত ৫ই মে স্কুল কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করি। স্কুল কর্তৃপক্ষ ২২শে মে লিগ্যাল নোটিশের জবাব দেন, তবে আমাকে কোনো কপি দেয়া হয়নি। অবশেষে আমি ২৬শে সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পহেলা অক্টোবর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ২রা অক্টোবর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত আবেদন করেছি। এ আবেদনের কথা জানতে পেরে স্কুলের অধ্যক্ষ ২রা অক্টোবর আমাকে একটি পত্র প্রেরণ করেন। ২৫শে সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত পত্রে তিনি আমার শিশু পুত্র নাঈমের টিসি নেয়ার জন্য বলেন। ব্যাক ডেটে স্বাক্ষর করে আমাকে পত্র দেয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে দি বাডস্‌ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথমে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে বলেন, ‘শিশুটির কথা অস্পষ্ট। সে পেন্সিল ধরতে অক্ষম। তার কারণে শ্রেণির অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয়, বিধায় আমরা কিছুদিন তাকে অবজারভেশনে রেখেছিলাম। এরই মধ্যে তার পিতা আমাদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন এবং যথানিয়মে নোটিশের জবাব দেয়া হয়েছে। তার টিসি নেয়ার জন্য ইতিমধ্যে তার পিতা বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্তকতা দীলিপ কুমার বর্ধন বলেন, ‘আব্দুর রহমান নামের বাডস্‌ স্কুলের একজন অভিভাবকের লিখিত আবেদন পেয়েছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন বলেন, ‘ছেলেটির পিতার আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য বলেছি। তদন্তের পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন