Daily Jalalabadi

  সিলেট     সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৩০শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রীমঙ্গলে হৃদয় হত্যা কান্ড : দুইজন গ্রেফতার

admin

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫ | ০৭:০৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৫ | ০৭:০৯ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
শ্রীমঙ্গলে হৃদয় হত্যা কান্ড : দুইজন গ্রেফতার

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কাকিয়াছড়া চা বাগানে কলেজ ছাত্র হৃদয় আহমেদ ইয়াছিন (১৯) হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত গামছা, স্কুল ব্যাগ, মোবাইল ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন এ তথ্য তুলে ধরেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আমিনুল ইসলাম, এসআই অলক বিরাহী গুণসহ অন্যন্যরা।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. কাজল মিয়া (২০), পেশায় টমটম চালক, স্থায়ী ঠিকানা দাড়িয়াকান্দি, কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ, বর্তমানে শাহীবাগ, শ্রীমঙ্গল এবং মো. সিরাজুল ইসলাম (২১), পেশায় বাদাম বিক্রেতা, স্থায়ী ঠিকানা রাজাপুর, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বর্তমানে শাহীবাগ, শ্রীমঙ্গল। তারা দুইজনই মাদকাসক্ত। এদের সোমবার (১৪ জুলাই) আদালতে সোপর্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম হৃদয়ের কাছে প্রায় ২২ হাজার টাকা পাওনা ছিল কাজলের। পরবর্তীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে গেলেও চাকরি না হওয়া এবং পাওনা টাকা টাকা ফেরত না দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধ চরমে ওঠে। এই দুই বিষয় নিয়ে ক্ষোভ থেকেই হত্যার পরিকল্পনা সাজানো হয়। গেল ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে কাজল ও সিরাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী হৃদয়কে ওই চা বাগানে নিয়ে যায়। কাকিয়াছড়া চা বাগানের ১ নম্বর সেকশনে রাত প্রায় ১১টা ২০ মিনিটের দিকে হৃদয়ের সঙ্গে কাজল আর সিরাজের টাকা-পয়সা নিয়ে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এরপর কাজল আর সিরাজ তাদের ব্যাগ থেকে গামছা বের করে হৃদয়ের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে। একজন তার হাত-পা চেপে ধরে রাখে। হৃদয় মারা গেলে তারা নিশ্চিত হয়ে তার পরনের প্যান্টের বেল্ট দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে যেন মনে হয় আত্মহত্যা করেছে। এরপর হৃদয়ের মোবাইল ফোন আর মোটরসাইকেল নিয়ে রাত প্রায় ১২টার দিকে হবিগঞ্জ রোডে সখিনা সিএনজি পাম্পের পাশে মোর্শেদ নামে এক জনের দোকানে যায়। সেখানে মোবাইলটি মাত্র ২৫০ টাকায় বিক্রি করে মোটরসাইকেল নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার রাজাপুর গ্রামে নানার বাড়িতে পালিয়ে যায়।

মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘নিহত হৃদয় আহমেদ ইয়াছিন কমলগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন এবং শ্রীমঙ্গল কালীঘাট রোড এলাকায় ওয়াইফাই অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। অনলাইনে জুয়ায় আসক্ত হয়ে তিনি বন্ধুর কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকার দেনায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করে।’

তিনি আরও বলেন, গত সোমবার (৭ জুলাই) সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নের কাকিয়াছড়া চা বাগান ১ নম্বর সেকশন এলাকায় একটি গাছের গোড়ায় বেল্ট দিয়ে বাঁধা অবস্থায় হৃদয়ের মরদেহ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি গাছের সাথে গলায় বেল্ট পেচানে অবস্থায় একটি মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর বিভিন্নভাবে খোঁজ খবর নিয়ে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গল থানার মামলা নং- ১৪, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ দায়ের হয়। পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা ও সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমানের তত্ত্বাবধানে শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। শহরের সিসিটিভি ফুটেজ, তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দুই আসামির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রাজাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, স্কুল ব্যাগ, ভিকটিমের মোবাইল এবং মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন