স্টাফ রিপোর্টার:
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। পহেলা মে রাজধানীতে শ্রমিক সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি।
মঙ্গলবার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে দলটি। প্রথমে অবস্থান, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অথবা মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। ধাপে ধাপে এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের গতি বাড়াতে চায় দলটি। পরে রোডমার্চ, লংমার্চের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চায়। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটও একই কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে আর সময় দিতে চায় না বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না-এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে সরকার নানা ক‚টকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অজুহাত দিয়ে কোনো লাভ হবে না। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় মাঠে নেমেছে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তারপর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি মেনে নেওয়া না হলে যা করা দরকার জনগণ তাই করবে। আন্দোলন চলছে, সামনে আরও কর্মসূচি আসছে। আন্দোলন আরও বেগবান হবে। সরকারের আচরণেই নির্ভর করবে বিএনপির আন্দোলনের ধরন কী হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আন্দোলন কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয়, আবার কখনো কখনো স্বল্প সময়ের মধ্যে বিজয় লাভ করে। যেমন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, মাত্র নয় মাসের মধ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আবার ভিয়েতনামের যুদ্ধ অনেক দিন চলেছে, দীর্ঘদিন পর তারা স্বাধীন হয়েছে। কোন সরকার কবে যাবে, সেটা নির্ধারিত নয়; এটা নিশ্চিত যে ফ্যাসিবাদের পতন অনিবার্য। এটা করবে দেশের জনগণ। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারের বিদায় ঘটানো হবে।’
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় দলের আগামী দিনের কর্মকৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন নেতারা। সূত্র মতে, নতুন কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। সিটি নির্বাচনকে সরকারের ফাঁদ বলে মনে করেন নেতারা। এসব সিটিতে দলীয় পদে থেকে কেউ মেয়র পদে নির্বাচন করলে বহিষ্কার করা হবে বলে কঠোর বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়াও কর্মসূচি দিলে এসব সিটিতে তা জোরালোভাবে পালন করার বিষয়ে একমত হন নেতারা। একই সঙ্গে সেখানে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালনে সংশ্লিষ্ট মহানগর নেতাদের মতামত নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। এছাড়াও যুগপৎ আন্দোলনের জন্য শিগগিরই অভিন্ন দাবিতে ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়।
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সহ বিভিন্ন দাবিতে কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছে বিএনপি। তবে গত বছরের অক্টোবর থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি দিয়ে দলটির রাজনীতি নতুন করে আলোচনায় আসে। গণসমাবেশ কর্মসূচি থেকে তারা আশাতীত জনসমর্থন এবং সাড়া পায়। একই সঙ্গে বিভাগীয় কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র-সর্বস্তরে দলীয় নেতাকর্মীরা আরও সক্রিয় এবং উজ্জীবিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় দলটি। ২৪ ডিসেম্বর থেকে অভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম (একাংশ), বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যসহ আরও কয়েক দল মাঠে নামে। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে রমজান মাসেও কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট।
নেতারা জানান, বিএনপির আন্দোলন চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। জনগণের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে কর্মসূচি ঠিক করা হবে। এবার বিএনপিকে পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। ‘ডু অর ডাই’ নীতি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই আগামী কুরবানি ঈদের আগেই ‘অলআউট’ কর্মসূচি দেওয়া হবে। রোডমার্চেরও চিন্তা করা হচ্ছে। এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে এই কর্মসূচি পালিত হতে পারে। এর মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে কর্মসূচি যে কোনো সময় এক দফা দাবিতে রূপ নেবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, জনগণের দাবি নিয়েই বিএনপি মাঠে নেমেছে। দাবি আদায়ে তাদের সামনে আন্দোলনের বিকল্প নেই। এজন্য যে কর্মসূচি দেওয়া দরকার বিএনপি তাই দেবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। যে কোনো কর্মসূচি সফলে প্রস্তুত রয়েছে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সূত্র মতে, পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশ ও র্যালি করবে। ওই দিন ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নেতাদের মতে, ঈদের পর এ কর্মসূচি দিয়েই আন্দোলন আবার শুরু হচ্ছে। শ্রমিক সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। শ্রমিক সমাবেশ ও র্যালি সফল করতে মঙ্গলবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুলাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকও উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিএনপি মহাসচিব শ্রমিক সমাবেশ সফল করতে শ্রমিক দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার