লন্ডন প্রতিনিধি:
লন্ডনে জমজমাট এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হলো। এর আয়োজন করে বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য, বিভিন্ন কাউন্সিলের মেয়র ও কাউন্সিলরসহ ৫ শতাধিক লোকের সমাগম যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটির ঐতিহ্যবাহী ও অন্যতম এ সংগঠনের আয়োজনের পুরোটাই উৎসবমুখর করে রাখে। কমিউনিটির বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৪ মে) পূর্ব লন্ডনের সুপরিসর ইম্প্রেশন ব্যাঙ্কুয়েটিং হলে এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনের মাধ্যমে কমিউনিটির ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব বিয়ানীবাজারের কৃতী সন্তান মেসবা আহমদের পাওয়া রাজকীয় খেতাব ‘এমবিই’ অর্জনও উদযাপন করেন বিয়ানীবাজারবাসী। অনুষ্ঠানে খেলাধুলার প্রসারসহ নানাভাবে কমিউনিটির সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ মেসবা আহমেদকে বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের এমপি রুশনারা আলী তার হাতে এ ক্রেস্ট তুলে দেন।
ট্রাস্টের সভাপতি রহিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী বেবুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ট্রাস্টের কোষাধ্যক্ষ আলহাজ আবদুল সফিক।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রুশনারা আলী বলেন, আয়োজন-উদযাপনের দিক থেকে বিয়ানীবাজারবাসী বরাবরই অন্যরকম। তারা কেবল বিয়ানীবাজারের লোকজন নয়, বরং কমিউনিটির বিভিন্ন অঞ্চলের লোকদের নিজেদের আয়োজনে একত্র করেন। পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ ও মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য বিয়ানীবাজারবাসীর এ চর্চা চমৎকার। বক্তব্যে রুশনারা আলী ব্রিটেনে এবং বাংলাদেশে বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের নানা কল্যাণমূলক কাজের প্রশংসা করেন।
লন্ডন টাইগার্সের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী মেসবা আহমেদ এমবিই বলেন, তার বাবা বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সদস্য ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি ট্রাস্টের সেই সদস্যপদ লাভ করেছেন। সম্মাননা জানানোর জন্য বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। বলেন, যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা বিয়ানীবাজারের সন্তানদের ট্রাস্টের সঙ্গে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত করার দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে।
লন্ডনে বিয়ানীবাজার ‘ভিলেজ ফুটবল কাপ’ আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ভিলেজ ফুটবল টুর্নামেন্টে কেবল যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা সন্তানদের খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। আগামী ২ জুলাই এবারের ভিলেজ কাপ অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশুক আহমদ বলেন, ১৯৯০-এর দশকে যখন বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলে, তখন অনেকেই বিষয়টিকে হাস্যকর বলে মনে করেছেন। আর এখন শত শত সংগঠন। সংগঠনগুলো থাকার কারণে কমিউনিটির শত শত লোক একত্র হচ্ছেন, পারস্পরিক যোগাযোগ হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে নিজ নিজ এলাকার জন্য অনেক কল্যাণমূলক কাজ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এতে প্রমাণ হয় বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠনের সিদ্ধান্ত সফল হয়েছে। এ সময় লন্ডনে কমিউনিটির প্রবীণদের সময় কাটানোর জন্য একটি সেন্টার গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় সাবেক হুইপ সেলিম উদ্দিন বলেন, ব্রিটিশ মূলধারার রাজনীতিতে আমাদের নতুন প্রজন্মকে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ওয়ার্থিং কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলর হেনা চৌধুরী, রেডব্রিজ কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলর জোসনা বেগম, বার্কিং অ্যান্ড ডেগেনহাম কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলর ফারুক চৌধুরী, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিঠু চৌধুরী, চিফ ট্রেজারার সাইদুর রহমান বিপুল, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা, বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহানুর খান, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, চিফ ট্রেজারার মামুন রশীদ, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক লিডার হেলাল আব্বাস, ব্রিটিশ বাংলাদেশি পাওয়ার অ্যান্ড ইন্সপিরেশন—বিবিপিআইয়ের ফাউন্ডার ট্রাস্টি কাউন্সিলর আবদাল উল্লাহ, কাউন্সিলর আসমা ইসলাম, কাউন্সিলর কবির হোসেন, বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলা এডুকেশন ট্রাস্টের সাবেক দুই সভাপতি অধ্যাপক মাসুদ আহমদ ও গোলাম কিবরিয়া, গোলাপগঞ্জ উপজেলা এডুকেশন ট্রাস্টের সভাপতি ইছবাহ উদ্দিন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ইউকের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক জিলু, বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রগতি এডুকেশন ট্রাস্টের সভাপতি মনজুরুস সামাদ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান ময়না, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ময়নুল হক, বিয়ানীবাজার স্পোর্টিং ক্লাব ইউকের সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেন, বিয়ানীবাজার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি আবদুল বাসিত টিপু, বিয়ানীবাজার পৌর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান। এ ছাড়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সহসভাপতি জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর হোসেন রবিন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল মামুনুর রশীদ হিলারি, যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ আবু আহমদ সরওয়ার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া করেন ট্রাস্টের সদস্য মোহাম্মদ আবু কাওসার। অনুষ্ঠানে সদ্যপ্রয়াত ট্রাস্টের সিনিয়র সদস্য ডা. একেএম জাকারিয়াকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে নাশিদ (সংগীত) পরিবেশন করেন শিল্পী আলাউর রহমান। পরে নৈশভোজের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার