Daily Jalalabadi

  সিলেট     মঙ্গলবার, ১৯শে নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপি চায় সরকারের ‘পতন’ আওয়ামী লীগ প্রস্তুত ‘ঠেকাতে’

admin

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ | ০১:৩৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ | ০১:৩৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বিএনপি চায় সরকারের ‘পতন’ আওয়ামী লীগ প্রস্তুত ‘ঠেকাতে’

স্টাফ রিপোর্টার:
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে থাকা বিএনপি নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ থেকেই মহাযাত্রা শুরুর ঘোষণা দিতে পারে। রাজধানীর নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহাসমাবেশ সফল করতে স্মরণকালের বড় সমাগম করতে চায় দলটি।

বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারাও বিপুল লোক সমাগমের পাশাপাশি কোনো সহিংসতা হলে তা ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপির এক দফা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে যাওয়া জামায়াতে ইসলামী। অনুমতি পাবে না জেনেও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবে বলেছে ধর্মভিত্তিক দলটি।

গতকাল রাতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ২০টি শর্ত দিয়ে তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি সমাবেশ করবে নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। তবে জামায়াতে ইসলামী অনুমতি পায়নি।

রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে ঘিরে গত কদিন ধরেই তৈরি হয়েছে টানটান উত্তেজনা। রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তির মহড়া নিয়ে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে আন্তর্জাতিক বিশ্বও।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। দুদিন আগে থেকেই রাজধানীর প্রবেশমুখে বসানো হয় র‌্যাব-পুলিশের চেকপোস্ট। গতকাল রাজধানীর সড়কে যানবাহনের চাপও ছিল কম। মহাসড়কগুলোতেও দূরপাল্লার বাস চলাচল কম দেখা গেছে।

আওয়ামী লীগ: বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে দুপুর দুইটায় আওয়ামী লীগের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন।

এ সমাবেশকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ গত কদিন দফায় দফায় বৈঠক করেছে। আর সার্বিক বিষয় নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির দুরভিসন্ধি আছে। সাম্প্রদায়িকতাসহ তাদের অশুভ খেলার পরিকল্পনা আছে। সুতরাং আমাদের সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকতে হবে। মরতে হয় মরবো, তবুও রাজপথ ছাড়বো না। আওয়ামী লীগ কোনো ভয় পাচ্ছে না। কিন্তু জনগণ নাশকতার ভয় পাচ্ছে। কারণ বিএনপির অতীত তাই বলে।

জানা গেছে, বিএনপির সমাবেশস্থলকে তিন দিক থেকে ঘিরে রাখার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। যাতে করে কোনো সহিংস ঘটনা ঘটলেও বিএনপি কর্মীরা সবদিকে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। তবে দলটির নেতারা প্রকাশ্যে এসব নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিএনপি: সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গত ১২ জুলাই আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও সমমনা ৩৬ দল। এরপর তিন ধাপে বিভিন্ন জেলায় রোডমার্চ, পদযাত্রা, সমাবেশ, যুব সমাবেশ, শ্রমিক কনভেনশন, ছাত্র কনভেনশন, পেশাজীবী কনভেনশনসহ লাগাতার নানা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

সর্বশেষ গত ১৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দীর্ঘ চার মাস ধরে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজপথে থাকা বিএনপি আন্দোলনকে এবার চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চায়।

তারই ধারাবাহিকতায় আজকের মহাসমাবেশ থেকে চূড়ান্ত ধাপের লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। বেলা ২টায় শুরু হবে এ মহাসমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখবেন।

বিএনপির সমমনা দল: সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও আজ রাজধানীতে সমাবেশ করবে। তাদের মধ্যে সকাল ১১টায় বিজয়নগরের হোটেল একাত্তরের সামনে এবি পার্টি, একই সময়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী পরিষদ, বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে নূরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে।

এছাড়া বেলা ১২টায় মতিঝিল নটর ডেম কলেজের উল্টোদিকে গণফোরাম (একাংশ) ও পিপলস পার্টি, একই সময়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, দুপুর ২টায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে জনতার অধিকার পার্টি, একই স্থানে একই সময়ে ১২দলীয় জোট, একই সময়ে পুরানা পল্টন আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট আর বেলা ৩টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সমাবেশ করবে।

এছাড়াও বিকাল তিনটায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, একই সময়ে কারওয়ান বাজার এফডিসি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপি, মালিবাগ মোড়ে এনডিএম, পুরানা পল্টন কালভার্ট রোডে গণঅধিকার পরিষদ (রেজা) আর বিকাল ৪টায় পুরানা পল্টন মোড়ে লেবার পার্টি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।

দুদলকে পুলিশের ২০ শর্ত: সমাবেশ আয়োজনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে ২০ শর্ত দিয়েছে পুলিশ। সেসব হলো—অনুমোদিত স্থানের মধ্যেই সমাবেশের সকল কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। বেলা ১২টার পূর্বে কোনোক্রমেই জনসমাগম করা যাবে না। নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।

নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোথাও লোক সমবেত হতে পারবে না। আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে বাগচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না। অনুমোদিত সময় অর্থাৎ ২টা থেকে ৫টার মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম অবশ্যই শেষ করতে হবে।

সমাবেশ সমাপ্তির পর প্রস্থানের সময় রাস্তায় কোথাও কোনো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ বা অবস্থান করা যাবে না। আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি সমাবেশে বক্তব্য প্রদান বা তার কোনো বক্তব্য সমাবেশে প্রচার করা যাবে না।

রাস্তার বাম লেন ন্যূনতম ব্যবহার করে সমাবেশ করতে হবে এবং অন্য লেনসমূহ কোনোক্রমেই ব্যবহার করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না। রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না। উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না। সমাবেশে ব্যানারের আড়ালে কোনো ধরনের লাঠিসোটা বা রড সদৃশ কোনো বস্তু ব্যবহার করা যাবে না।

আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন। উল্লিখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল করা হবে। জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ১৩ হাজার পুলিশ সদস্য মাঠে থাকছে। র‌্যাব জানিয়েছে সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে তাদের দুই হাজার ফোর্স মাঠে রয়েছে। এছাড়া ডিএমপির পক্ষ থেকে নয়াপল্টন ও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের দুই সমাবেশস্থলে অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

দুই হাজার আনসার প্রস্তুত রাখার নির্দেশ: বড় দুই দলের সমাবেশ ঘিরে পুলিশকে সহায়তার জন্য দুই হাজার আনসার সদস্য প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রয়োজন মনে করলে তাদেরকে তলব করবে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আদেশ দেয়।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 998 বার

শেয়ার করুন