স্টাফ রিপোর্টার:
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। সব সাংগঠনিক জেলায় জনসমাবেশ ও মহানগরে পদযাত্রার কর্মসূচি পালন করছে দলটি।
এমন পেক্ষাপটে সম্প্রতি অর্ধশতাধিক নেতার লন্ডন সফর নিয়ে দলের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির বাইরেও কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতা রয়েছেন। তারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন। অনেকে আবার সে ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও শেয়ার করেছেন।
হঠাৎ করে এত নেতার লন্ডন সফরের কারণ কি-তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও চলছে নানা আলোচনা। তবে সফর শেষে দেশে ফিরে আসা বেশ কয়েকজন নেতা জানান, ঈদ কেন্দ্র করে কুশল বিনিময়ের জন্য তারা সেখানে গিয়েছিলেন।
সাক্ষাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নানা দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়। এজন্য সব পর্যায়ের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, ‘সবাই তো চায় দলের প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে। যেসব নেতা লন্ডনে এসেছেন, তা তাদের ব্যক্তিগত সফর। লন্ডনে এসে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বার্তা তো একটাই-আন্দোলন হবে এক দফা। এখন ‘ডু অর ডাই’, এর কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচন করতেও দেওয়া হবে না। দেশে সে প্রস্তুতিই নেওয়া হচ্ছে। বিদেশে যা যা করার দরকার আমরা তা করছি।’
জানা গেছে, ঈদের আগে ও পরে নেতারা লন্ডনে যান। এখনো কয়েকজন সেখানে অবস্থান করছেন। যারা লন্ডন সফরে গিয়েছেন, তাদের মধ্যে কোনো সিনিয়র নেতা নেই। সবাই মধ্যমসারির নেতা।
দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা এমএ কাইয়ুম, মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রশিক্ষণবিষয়ক সহসম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, মহানগর দক্ষিণের প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, মালয়েশিয়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেনসহ অর্ধশতাধিক নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছেন। এর মধ্যে সাংগঠনিক জেলা পর্যায়েরও অন্তত ১০ জন নেতা আছেন।
এছাড়া দলীয় নেতাদের বাইরেও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থও বিএনপির শীর্ষ নেতার সঙ্গে দেখা করেন। লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসা অন্তত সাতজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মূলত আন্দোলন ও নির্বাচন প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মনোভাব জানার চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে নানা দিক-নির্দেশনাও পেয়েছেন। তিনি বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। কঠোর আন্দোলনের বার্তা দিয়ে তা সফলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনাও দেন।
সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। তিনি বলেন, ‘১০ দফা দাবিতে আমরা আন্দোলনের মধ্যে আছি। যেহেতু আন্দোলনে আছি, এতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আরও বেগবান করার জন্য সব প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন করার জন্যই আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। যেহেতু আন্দোলন-সংগ্রামে আছি, এর মাধ্যমে দাবি আদায় করাই আমাদের লক্ষ্য। তাই নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। এ নিয়ে তিনি কোনো বার্তাও দেননি।’
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘অনেক বছর ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে ছিলাম। জোট ছাড়ার পরও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। গত তিন-চার বছর ধরেই তার সঙ্গে দেখা হয়। এবার হয়তো একটা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসার কারণে সবাই দেখেছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না-আলাপে এ কথা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলন বা অন্য কোনো বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয়নি।’
বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, যারা লন্ডন সফর করেছেন বা এখনো আছেন তাদের অনেকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। তার সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সেখানে তার হাস্যোজ্জ্বল ছবিও রাজনীতিতে অনেক গুরুত্ব বহন করে বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। এতে করে তারা অনেক উজ্জীবিত হয়েছেন।
নেতারা আরও বলেন, এবারের আন্দোলন সফলে ভিন্ন কৌশলে এগুচ্ছে বিএনপি। এজন্য মধ্যম সারির নেতাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কর্মসূচি সফলে কোনো নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় নেতার ওপর নির্ভর করতে চাইছেন না হাইকমান্ড। তার কাছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক জেলা শাখাসহ তৃণমূল পর্যায়ের সব ইউনিটের পদে থাকা নেতাদের নামসহ মোবাইল নম্বর রয়েছে।
তিনি প্রতিদিনই জেলাসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। আন্দোলন সফলে নানা দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। লন্ডন সফর থেকে ফেরা বেশ কয়েকজন নেতার মধ্যমে কিছু নির্দেশনাও তৃণমূলে পৌঁছে দিয়েছেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এও জানান, লন্ডনে যাওয়া নেতাদের কেউ কেউ নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতেও গিয়েছেন। কারণ কয়েকজনের বিষয়ে আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তাসহ নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে দলে তার অবস্থান ভালো-এ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার