নিউজ ডেস্ক:
আগামী দিনগুলোতে কূটনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে ভোটের পর সংকটটি আরও প্রকট হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও শপথ নেওয়ার পর থেকেই বারবার বলছেন, পূর্ব-পশ্চিম উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রেখে এগিয়ে যেতে চান তিনি। তবে সেটা খুব একটা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশর সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘এটা নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য একটা চ্যালেঞ্জও বটে। ভূ-রাজনৈতিক খেলায় আমরা কোনো পক্ষে যাতে জড়িয়ে না পড়ি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি হলো ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ সেটা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে একটু টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
নির্বাচনের পর সংকট বেড়েছে
নির্বাচনের আগে থেকেই সংকট ছিল। নির্বাচনের পর সেটা প্রকট হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলের পর পরাশক্তিগুলোর মধ্যে ভারত, চীন ও রাশিয়া স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ২৭টি ইউরোপীয় দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডাসহ পশ্চিমা দেশগুলো স্বীকৃতি দেয়নি। উপরন্তু পশ্চিমা ভাবধারায় চালিত কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠনও বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন দাবি করেছে।
বাংলাদেশ বেশি বাণিজ্য করে এই পশ্চিমের সঙ্গেই। সেই পশ্চিমারাই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি। উপরন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইইউ নির্বাচন গণতান্ত্রিক হয়নি মর্মে বিবৃতি দিয়েছে।
অন্যদিকে চীন, রাশিয়া ও ভারত নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে ফলাফলের কিছু পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে অভিযোগ করেছে, বাইরে থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা ছিল।
বিষয়টির জটিলতা অনুধাবন করে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলছেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ বাণিজ্য পশ্চিমের সঙ্গেই হয়। কিন্তু আমাদের নতুন বাজার তৈরি করতে হবে। আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় বাজার তৈরি করা খুব জরুরি।’
প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে সরকারও
পশ্চিমারা যেমন নির্বাচন গণতান্ত্রিক হয়নি বলে মনে করে, তেমনি সরকারও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। গতকাল সোমবার সকালে অফিসে এসেই নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ একটি ঘটনার কথা শোনালেন সাংবাদিকদের। নির্বাচনের পর বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠককালে একজন মার্কিন পর্যবেক্ষক প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, নির্বাচন ভালো হয়েছে। তখন প্রধানমন্ত্রী তাকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনাদের নির্বাচনের চেয়েও ভালো হয়েছে?’ তখন ওই পর্যবেক্ষক বলেন, প্রত্যেক দেশেই নির্বাচনের পর কিছু প্রশ্ন ওঠেই।
নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জের বাসভবনে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকান গোয়েন্দাদের সাক্ষীতেই তারেক জিয়ার সাজা হয়েছে। তবে এদের লজ্জা নেই। এরা একজনকে এমন করবে, আবার কখন কাকে পছন্দ করে ক্ষমতায় নিয়ে আসে তার ঠিক নেই।
এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে কিন্তু সরকারের সঙ্গে কাজ করবে না এমনটাও বলেনি। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার