বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি:
চরম হতাশ বিয়ানীবাজার উপজেলা, পৌর ও তৃণমূলের বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ও পরে তাদের মনে নানামুখি আশার সঞ্চার হলেও সময় গড়ানোর সাথে সব যেন দু:স্বপ্নে পরিনত হয়েছে। দলের ভবিষ্যত নিয়ে তারা আর কথা বলতে চাননা। পরিবার-পরিজনকে নিয়ে কোনমতে জীবন পার করতে দলীয় কর্মসূচিতে তাদের অনেকেই আর সক্রিয় হবেননা বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আইনশৃংখলা বাহিনীর হয়রানি এড়াতে পদ-পদবিধারীরা বিদেশমুখি গন্তব্য ঠিক করছেন। দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারনী নেতাদের উপর কিছুটা বিরক্তও তারা। যদিও মুখ ফুটে কেউ কিছু বলছেননা।
সূত্র জানায়, গত ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর থেকে অন্তত: ২০জন নেতাকর্মী দেশ ছেড়েছেন। দেশ ছাড়ার তালিকায় আছেন আরো অন্তত: শতাধিক পদবীধারী। নাম প্রকাশ করার শর্তে বিয়ানীবাজারের বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, আর কতদিন ঘরবাড়ি ছেড়ে তাদের ফেরারি জীবন যাপন করতে হবে, কতদিন মুখে মাস্ক পরে শহরে ঘুরতে হবে-তার উত্তর নেই কারো কাছে। রাজনৈতিক-সামাজিক-আর্থিকভাবে তারা আর কত দখল সইবেন-এমন প্রশ্ন প্রকাশ্যে করলেন পৌর বিএনপির প্রথম সারির এক নেতা। তিনি বলেন, বিগত সময়ের আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেয়ায় অনেকেই উপর মামলা হয়েছে। সেসব মামলায় হাজিরা দিয়ে অনেকেই হয়রান।
স্থানীয়ভাবে বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়েছেন। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ অদুদ রুকন, যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক জুবের আহমদ, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুর্শেদ আলম বাবর, ছাত্রদল নেতা নুরুল আমিন ও অলিউর রহমান, সে¦চ্ছাসেবক দলের নেতা ছরওয়ার আহমদ সুমন, ছাত্রদল নেতা জাহেদ হাসান সুমন খাঁসহ অনেকেই দেশ ছেড়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পর্যায়ের প্রথম সারির এক নেতা হতাশা প্রকাশ করে জানান, বিএনপির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এ অবস্থায় আর কতদিন ফেরারি থাকবো। পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে, পরিবারের সদস্যদের সাফকথা-রাজনীতি ছাড়তে হবে। উপায় না দেখে তিনিও দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের পূর্ব থেকে বিয়ানীবাজারে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে গেছে। তারা প্রকাশ্যে কোন আন্দোলন-কর্মসূচিতে নেই। সর্বশেষ লিফলেট বিতরনের একটি কর্মসুচিতে জেলা বিএনপি নেতাদের উপর চড়াও হয় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এরপর থেকে তাদের প্রকাশ্যে কোন কর্মসূচি চোখে পড়েনি। তবে ৭ জানুয়ারীর নির্বাচন বর্জনের আহবান জানিয়ে পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে লিফলেট বিতরণ করে দলটির নেতাকর্মীরা। ওই নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি অভিযান চালায় পুলিশ। উপায়ান্তর না পেয়ে সে সময় অনেকেই বাড়ি ছাড়েন। তাদের কেউ বাড়ি ফিরেছেন আবার কেউ এখনো নিরাপদ আশ্রয়ে। বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ অবশ্য হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবী, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া পুলিশ কারো বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেনা।
বিয়ানীবাজারে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি অপেক্ষাকৃত দূর্বল হলেও তাদের বিরাট ভোট ব্যাংক রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী লক্ষাধিক ভোট লাভ করেন। চারদলীয় জোট সরকারের সময় এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগ দেন। বর্তমানেও ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে পৃথক তিনটি বলয় বিরাজমান।
বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার হোসেন দলীয় নেতাকর্মীদের হতাশার বিষয়টি নাকচ করে বলেন, বিএনপি অচিরেই ঘুরে দাড়াঁবে। সরকার পতনের আন্দোলনে জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা লড়াই করছে। এই লড়াইয়ে বিএনপি জিতবে এবং গণতন্ত্র পুণরুদ্ধার হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার