Daily Jalalabadi

  সিলেট     শুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩০শে কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরজমিন বিয়ানীবাজার থানা: মামলা টহল জিডিতে সক্রিয় পুলিশ

admin

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪ | ০৪:৩৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪ | ০৪:৩৬ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
সরজমিন বিয়ানীবাজার থানা: মামলা টহল জিডিতে সক্রিয় পুলিশ

আবু তাহের, বিয়ানীবাজার সংবাদদাতা:
সিলেট জেলার ১৩টি থানার গুরুত্ব বিবেচনায় বিয়ানীবাজার থানা প্রথম সারিতে। সীমান্তবর্তী এলাকা, প্রবাসীবহুল জনপদ এবং গত সরকারের সময়ে ভিআইপিদের আনাগোনা থাকায় দেশব্যাপী বিয়ানীবাজার থানার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে হানাহানি, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার এবং এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্ধের জেরে থানা প্রধানদের এখানে বেশ বেগ পেতে হতো।
৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করে থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। শুধু থানায় আগুন ধরিয়ে আর গুরুত্বপূর্ণ আলামত লুট করে থামেনি বিক্ষুদ্ধরা। প্রাণ রক্ষায় গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। এ সময় ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা যখন থানায় ফিরলেন তখন বসার জন্য কোনো টেবিল চেয়ারও পাননি। মনোবলহারা পুলিশ সদস্যরা এরকম পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ধীরে ধীরে থানা গুছানোর কাজ শুরু করেন। বসার টেবিল চেয়ার থেকে শুরু করে কম্পিউটার, যাতায়াতের গাড়ির সবকিছু সংগ্রহ করে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করেন তারা।

সরজমিন থানায় গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এর কক্ষে এখনো জানালা লাগানো সম্ভব হয়নি। বাইরের দেয়ালে আগুনের লেলিহান কালো ধূয়া মুছে যায়নি। বিভিন্ন কক্ষ গুছানোর কাজ চলছে। থানা ভবনে প্রবেশ করে বাম পাশেই ডিউটি অফিসারের কক্ষ। সেবাপ্রত্যাশীরা সেখানে এসে ভিড় করছেন। সেবাগ্রহীতাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন সমস্যার কারণে জিডি করতে আসছেন। ডিউটি অফিসার রুমের এক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৭ থেকে ৮টি জিডি হয়েছে। সেবাগ্রহীতারা জানিয়েছেন, তারা থানা পুলিশের সদস্যদের ব্যবহারে সন্তুষ্ট। মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন পেপার হারিয়েছে। তাই জিডি করতে এসেছিলেন আবু জাফর। থানার সেবার মান কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে ভালো লেগেছে।
থানা এলাকার বিভিন্ন বাসিন্দাদের কথা বলে জানা গেছে, জিডি, মামলা সবকিছুতেই পুলিশ বেশ সক্রিয়। নিখোঁজ ব্যক্তি উদ্ধারেও চলছে ব্যাপক তৎপরতা। গত ক’দিনের ব্যবধানে ৬ জন ডাকাত গ্রেফতার করা হয়েছে। আটকসহ উদ্ধার করা হয়েছে ভারতীয় চিনি, অবৈধপথে আসা চোরাই মালামাল। গ্রেফতারী পরোয়ানা, নিয়মিত মামলার আসামী গ্রেফতার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। রাতে টহল বের হচ্ছে পুলিশ। সামাজিকভাবে ছোট-ছোট বিষয় নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ করতে অপারগ এমন এক এএসআই বলেন, আমি প্রায় ২ বছর ধরে এই থানাতে চাকরি করছি। সরকার পতনের আগেও এই থানার সবকিছু দেখেছি এখনো দেখছি। সরকার পতনের দিন বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ মালামাল, আলামত পুড়ে ছাই হয়েছে। এসআই পদমর্যাদার আরেক কর্মকর্তা বলেন, থানার কার্যক্রমে গতি ফিরছে। পুলিশ টহলও দিচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো কর্মকর্তারা সবাই বদলির মধ্যে আছেন। প্রায় সবাইকেই বদলি করা হচ্ছে। যারা নতুন আসছেন তারা এসেই বিয়ানীবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ থানায় অনেক কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। অনেকেই ঠিকানা খুঁজে পেতে সময় নিচ্ছেন। কারণ তাদের জন্য একেবারে অচেনা জায়গা। অনেক এসআই, এএসআইরা বদলিজনিত কারণে অনুপস্থিত। তিনি বলেন, যেসব মামলার আলামত নষ্ট হয়ে গেছে সেসব মামলার তদন্ত নিয়ে বেগ পেতে হবে।

বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, পুরাতনরা বিদায় নিচ্ছেন আর নতুনরা যোগদান করছেন। নতুনদের জন্য কিছুটা সময় লাগবে। নিয়মিত মামলাও দায়ের করছেন ভূক্তভোগীরা। আমরা খেয়াল রাখি মামলা নেয়ার কারণে যেন কেউ হয়রানির শিকার না হয়। আমাদের কাছে যে যেই অভিযোগ নিয়ে আসছে সেটা আমরা ফেলে রেখে দেই না। খুব গুরুত্বসহকারে তদন্ত ও ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করা হয়। ডিউটি রুমে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের বলা হয়েছে সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে যেন ভালো ও মার্জিত আচরণ করা হয়। স্বাভাবিক বিষয় হলে তারা যেন সমাধান করে দেয়। আর জটিল বিষয় হলে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করার জন্য।

রাজনৈতিক মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, আসামি গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তবে আমরা এখন যাচাই-বাছাই করছি। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির সঙ্গে যাতে কোনো অবিচার না হয়, সেদিকে নজর রাখছি।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে থানা পুলিশ জানায়, উপজেলার চারখাই এলাকার সাচান কাঠলী ব্রিজের পশ্চিম পাশে আঞ্চলিক সড়কের উপর থেকে একটি সিএনজি গাড়ীসহ চোরাকারবারী ১। আফতাব উদ্দিন (৫০), পিতা-মৃত মুছা মিয়া, সাং-বীরদল (আনসারপুর). থানা-কানাইঘাট, ২। খয়রুল ইসলাম (৫৫), পিতা-মৃত আরজাদ আলী, সাং-উজানঢাকি, থানা-বিয়ানীবাজারকে গ্রেফতার পূর্ববর্তী ৬৩ হাজার শলাকা সেখ নাসিরুদ্দিন বিড়ি উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।

এছাড়াও পৃথক অভিযানে বড়লেখা থানাধীন শাহবাজপুর ওয়েদাবাদ চা-বাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চুরি হওয়া ২টি গরু ও ২টি ছাগলসহ আসামী ১। রাসেল আহমদ (২২), পিতা-ছেরাগ আলী, সাং-পাতন, ২. কামাল আহমদ (২২) পিতা-হেলাল উদ্দিন, সাং-নান্দুয়া, ৩. রুবেল আহমদ (২৩), পিতা-বোরহান উদ্দিন, সাং-আহমদপুর, সর্ব থানা-বড়লেখা, জেলা-মৌলভীবাজারদের গ্রেফতার করা হয়। সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জকিগঞ্জ সার্কেল ইয়াহিয়া আল মামুনের দিকনির্দেশনায় থানার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে এসআই আব্দুর রহিম, এসআই সুরঞ্জিত দাস ও এসআই মাহমুদুল হাসান সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় আসামী গ্রেফতার ও উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন