স্টাফ রিপোর্টার:
বিয়ানীবাজার উপজেলায় প্রায় শতাধিক বীরাঙ্গনা থাকলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃত পাননি কেউ। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর উপজেলার মাত্র দু’জন নারী বীরাঙ্গনা স্বীকৃতির দাবী জানিয়ে মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। সামাজিকতা, লোকলজ্জা এবং অন্যান্য কারনে অন্য বীরাঙ্গনারা স্বীকৃতি আদায়ে আগ্রহী নয়।
বিয়ানীবাজার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান জানান, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদে বীরাঙ্গনাদের কোন তালিকা নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তালিকা সংগ্রহে কোন তৎপরতা ছিলনা। তবে শতাধিক অস্বীকৃত বীরাঙ্গনা উপজেলায় আছেন। তাদের অনেকে হয়তো এখন বেঁচে নেই।
সারাদেশে নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন পর্যন্ত গেজেটভুক্ত ১ হাজার ১৪৬ জনের মধ্যে বীরাঙ্গনা মাত্র ৪৫৫ জন। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের এই তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বড় বাধা মনে করা হচ্ছে দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়াকে। আবার আবেদন নিয়ে ছোটাছুটি করার শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সক্ষমতাও বর্তমানে বেশির ভাগ নারীর নেই। আবেদনের শর্ত পূরণে টাকা দাবির অভিযোগও আছে কারও কারও। আবার আবেদনের কয়েক বছর পরও স্বীকৃতি পাননি এমন নারীও আছেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অনুজ চক্রবর্তী বলেন, ‘বীরাঙ্গনাদের অনেকে নিজেরাই তালিকাভুক্ত হতে চান না। তবে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁরা যেন তালিকাভুক্ত হতে পারেন, সেটা আমরা দেখব।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৫৪৮ জন। এর মধ্যে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ১ হাজার ১৪৬ জন। তাঁদের মধ্যে কণ্ঠসৈনিক, চিকিৎসক, সেবিকা ও বীরাঙ্গনাও রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বীরাঙ্গনা (পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার) ৪৫৫ জন। বীরাঙ্গনাদের ২০১৫ সালে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয় সরকার।
সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধকালে পাক হানাদারদের যৌন নির্যাতনে বিয়ানীবাজার পৌরসভা এলাকার এক বীরাঙ্গনা মানষিক রোগী হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের শিকার নারী এবং তাঁদের প্রতিনিধিরা জানান, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ। আবেদনের সঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা ও গ্রামের বয়জ্যেষ্ঠ তিনজনের প্রত্যয়নপত্র দিতে হয়। যাচাইয়ের সময় এই প্রত্যয়নকারীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রত্যয়নপত্র ও প্রত্যয়নকারীদের সাক্ষ্য নিয়েই বড় ঝামেলা।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার