লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
অবশেষে মায়ের কোলে ফিরল সেই শিশু
লক্ষ্মীপুরে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে ভিক্ষুকের কোলে রেখে যাওয়া তিন মাসের সেই শিশু মাহিন হোসেন পাঁচদিন পর তার মা সুরমা বেগমের কোলে ফিরেছে।
সোমবার (৬ মার্চ) বিকেলে লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাদেকুর রহমান শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। একইসঙ্গে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য শিশুটির মা সুরমাকে সতর্ক করে দিয়েছেন আদালত।
পরে রাতে জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ আদালতের নির্দেশে শিশুটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মায়ের কোলে তুলে দেন।
সুরমার আইনজীবী মাহমুদুল হক সুজন বলেন, রোববার (৫ মার্চ) শিশুটিকে ফিরে পেতে তার মা সুরমা বেগম লক্ষ্মীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। কিন্তু আদালত প্রথম দিন কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। সোমবার আদালত শিশুটিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।
এদিকে শিশুটিকে বুকে আগলে রেখে আদর-যত্নে বড় করতে চেয়েছিল নিঃসন্তান দম্পতি বেলাল হোসেন ও নিশি আক্তার। শিশুটি পাঁচদিন তাদের আদরেই ছিল। প্রথম যেদিন থানায় শিশুটিকে পরিবারের লোকজন নিতে এসেছিলেন সে সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই দম্পতি। বিদায়বেলা অশ্রুসিক্ত হলেও শিশুটির জন্য ভালোবাসা আর মহান আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করবেন বলে জানিয়েছেন বেলা।
জেলা পুলিশ জানায়, সুরমার বাবার বাড়ি সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ চরমনসা গ্রামের মিয়ারবেড়ি এলাকায়। গত ১ মার্চ দুপুর ২টার দিকে শিশুটিকে ভিক্ষুক সালমা বেগমের (৭০) কাছে রেখে চলে যান সুরমা। ভিক্ষুক সালমার কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে জেলা পুলিশ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন মাহমুদের ভাই বেলালের পরিবারের হেফাজতে রাখেন। পরদিন বেলাল ও তার স্ত্রী নিশি আক্তার আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে দত্তক নেন। তবে শিশুটির পরিবারের খোঁজ পেলে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল আদালতের। ফেসবুকের মাধ্যমে শিশুটির খোঁজ পেয়ে একইদিন রাতে মাসহ পরিবারের লোকজন সদর থানায় শিশুটিকে নেওয়ার জন্য উপস্থিত হন। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে তাৎক্ষণিক শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়নি। এতে আদালতের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করে পুলিশ।
সুরমা বেগম জানিয়েছেন, প্রতিমাসে ১১ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ করতে হয় তার। কিন্তু তার স্বামী মিরন কয়েক মাস থেকে সংসার খরচ দিচ্ছে না। এনিয়ে ঘটনার দিন স্বামীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। ধার-দেনায় তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এতে দুশ্চিন্তা থেকে তিনি শিশুটিকে ফেলে রেখে চলে যান। বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকজনের বকাঝকায় শিশুটিকে খুঁজতে থাকেন। পরদিন ফেসবুকের মাধ্যমে শিশুটির সন্ধান পান। আর কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটাবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আদালত শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। পরে শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, ফেলে রেখে যাওয়া শিশুটি অবশেষে তার মায়ের কোলে ফিরেছে। ফুটফুটে শিশুটির হাসি খুব মধুর। আমি নিজেই মায়ায় পড়ে গেছি। আজীবন তার প্রতি একটি অনুভূতি থেকে যাবে।
প্রসঙ্গত, শিশু মাহিন রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের পূর্ব চরসীতা গ্রামের সৌদি প্রবাসী মিরন হোসেনের ছেলে। মিরন-সুরমা দম্পতির সংসারে আরও ৩ মেয়ে রয়েছে। তারা লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাঞ্চানগর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার