স্টাফ রিপোর্টার:
খুনের মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের স্বর্ণালংকারের দোকান উদ্বোধন করতে দুবাইয়ে যাওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার বা হেনস্তার শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। শনিবার বিকেল তিনটার দিকে দুবাই থেকে মুঠোফোনে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময় রাত একটায় বিমানে দুবাই থেকে রওনা হয়ে আগামীকাল রোববার সকাল আটটায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন বলে জানিয়েছেন হিরো আলম। তিনি বলেন, শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের প্রতি পুলিশের রূঢ় আচরণ তাঁকে খুব ব্যথিত করেছে। হজ থেকে ফিরতে না–ফিরতেই চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হিরো আলম বলেন, ‘আমি পেশাদার কণ্ঠশিল্পী নই। ভক্তদের অনুরোধে শখের বশে দুয়েকটি গান গাওয়ার চেষ্টা করি। অনেকটা শখের বশেই একবার একটা রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে ইউটিউবে ছেড়েছিলাম। শুধু এই অপরাধে ডিবিপ্রধান আমাকে ডেকে নিয়ে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন, মুচলেকা দেওয়ার পর ছেড়ে দিয়েছেন।’
হিরো আলম আরও বলেন, ‘রবিউল ইসলামের আরাভ জুয়েলার্স উদ্বোধন করতে দুবাইয়ে আসায় ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ প্রেস ব্রিফিং করে আমাকে ও জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন।’
এ বিষয়ে হিরো আলম বলেন, ‘আগে থেকে কেউ কি জানতেন আরাভ জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খানই পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম? সাকিব ভাই (সাকিব আল হাসান) কিংবা আমি কেউ এই তথ্য জানতাম না আরাভ খুনের মামলায় অভিযুক্ত।’
হিরো আলম ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (একতারা প্রতীক) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে বগুড়া-৪ আসনে ১৪–দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদের এ কে এম রেজাউল করিমের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি। এরপর হিরো আলম অভিযোগ করেন, ভোটের ফলাফলে কারচুপি করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরাভ ইস্যুতে উপনির্বাচনের প্রসঙ্গও টেনে এনে হিরো আলম বলেন, ‘আরাভ খান ইস্যুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একটি মহল আমাকে হয়রানি ও নাজেহাল করার সুযোগ খুঁজছে। বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে সরকারি দলের ক্যাডারদের কেন্দ্র দখল করা নিয়ে সরকারি দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমিই গণমাধ্যমে মুখ খুলেছি।
‘বগুড়ার উপনির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকায় দলীয় শান্তি সমাবেশে আমাকে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, “হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে।” পাল্টা জবাব তখন ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বলেছিলাম, হিরোকে কেউ কখনো জিরো করতে পারে না। যারা হিরোকে জিরো বানাতে চায়, তারাই জিরো হয়ে গেছে।
‘বগুড়া থেকে নির্বাচন করার চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলাম, আপনি কথায়–কথায় বলেন, “খেলা হবে। শক্তিশালী দল হলে খেলা হবে।” খেলা হওয়ার মতো নাকি তিনি শক্তিশালী খেলোয়াড় খুঁজে পান না। তাঁকে জোর গলায় বলতে চাই, শক্তিশালী দলের সঙ্গে আপনাকে খেলতে হবে না। যেখানে মিথ্যা কথা বলে আমার ফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে, সেই বগুড়া-৪ আসনের ভোটে আসুন, আমার সঙ্গে ভোট করে দেখুন। আপনি দল থেকে দাঁড়াবেন, আমি স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হব। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসিটিভি থাকবে। ভোটারদের ভয় দেখানো হবে না। সুষ্ঠু ভোট দিয়ে দেখুন তো দেখি, খেলা হয় কি না।’
হিরো আলম আরও বলেন, ‘পুরোনো নানা ইস্যুর জেরে আমাকে হয়রানি করা হতে পারে। এ জন্য রোববার বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের কর্মীদেরও আসতে বলেছি। ওই সময় কেন দুবাইয়ে আরাভ জুয়েলার্স উদ্বোধনে গেলাম গণমাধ্যমের কাছে খোলাসা করব।’
গত বুধবার দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে অবস্থিত আরাভ জুয়েলার্স উদ্বোধন করতে যান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, হিরো আলমসহ বিনোদন অঙ্গনের কয়েকজন তারকা। সাকিব আল হাসান আগেই দেশে ফিরেছেন। আগামীকাল ফিরবেন হিরো আলম।
তদন্তের প্রয়োজনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে, গোয়েন্দা পুলিশের প্রধানের এমন মন্তব্যে শঙ্কা প্রকাশ করে হিরো আলম বলেন, ‘মামলা তদন্তের প্রয়োজনে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারে। কিন্তু পুলিশ খুনের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের মতো জনপ্রিয় ক্রিকেটার ও আমার সংশ্লিষ্টতা কোথায়, সেটা আগে পুলিশকে বলতে হবে।’
আরাভ খান পুলিশ কর্মকর্তা খুনের মামলার আসামি এই তথ্য আগে থেকে জানতেন না দাবি করে হিরো আলম বলেন, ‘তাঁর (আরাভ খান) সঙ্গে পরিচয় ফেসবুকে। একজন বাংলাদেশি উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি দাওয়াত করেছেন। আমরা প্রবাসী উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে তারকারা সেখানে গিয়েছি। আরাভ খানের জায়গায় দুবাই থেকে যেকোনো বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর দোকানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালেও সেখানে যেতাম।’
ডিবি বলছে, পুলিশ কর্মকর্তা মামুন এমরান খান হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান দেশ থেকে পালিয়ে প্রথমে ভারতে যান। সেখানে আরাভ খান নামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দুবাইয়ে চলে যান। এখন তিনি দুবাইয়ের সোনার বড় ব্যবসায়ী। রবিউলকে ইন্টারপোলের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে জানিয়ে ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, রবিউলের নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 999 বার