স্টাফ রিপোর্টার:
ছিলেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। সাইফুর রহমানের মৃত্যু ও ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’র পর সিলেট বিএনপিতেও ছিল তার একচ্ছত্র প্রভাব। কিন্তু হঠাৎ বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার পর অনেকটা হারিয়ে যান শমসের মবিন চৌধুরী। এরপর বিকল্পধারায় যোগ দিলেও রাজনীতির পালে হাওয়া লাগাতে পারেননি তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ফের সারাদেশে আলোচিত হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের এই বীরসেনানীর নাম। তফশিল ঘোষণার ঠিক আগে তিনি তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে চেয়ারম্যানের পদে আসীন হন। শমসের মবিন হাল ধরার পর বিএনপি থেকে বেশ কয়েকজন নেতাও যোগ দেন দলটিতে। সাবেক ৫ সংসদ সদস্যসহ ২৩০ আসনে প্রার্থী দেওয়া তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসন থেকে। জেলার ৬টি আসনের মধ্যে চারটিতে মনোনয়ন জমা দিয়েছে দলটি। তবে শেষ পর্যন্ত শমসের মবিন চৌধুরী নিজের আসনসহ নিজ জেলায় কী চমক দেখাতে পারেন সে কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করছেন সিলেটবাসী। নিজের বিজয় ও দলের প্রার্থীদের ভাল ফলাফলের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী শমসের মবিন।
রাজনীতি থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া অবস্থায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন শমসের মবিন চৌধুরী। এরপর কাউন্সিলে তিনি চেয়ারম্যান ও তৈমুর আলম খন্দকার মহাসচিব নির্বাচিত হন। এরপর থেকে সারাদেশে তৃণমূল বিএনপি ও শমসের মবিন চৌধুরীর নাম ফের আলোচনায় আসে। নির্বাচনে ৩০০টি আসনে প্রার্থী দেওয়ারও প্রত্যাশা ব্যক্ত করে দলটি। শেষ পর্যন্ত ২৩০টি আসনে প্রার্থী দেয় তৃণমূল বিএনপি। এর মধ্যে সিলেট-৬ আসন থেকে প্রার্থী হন শমসের মবিন নিজে। বর্তমানে ওই আসনের সংসদ সদস্য হচ্ছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। আসনটি থেকে ৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এর মধ্যে নুরুল ইসলাম নাহিদকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। এছাড়াও আসনটি থেকে প্রার্থী হয়েছেন সিলেট-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. সেলিম উদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের সাদিকুর রহমান ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আতাউর রহমান আতা। আসনটিতে আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন চারবারের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন ও জাতীয় পার্টির মো. সেলিম উদ্দিন। দীর্ঘদিন ধরে
এ তিন নেতা এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলছেন। বিপরীতে ঢাকার রাজনীতিতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারা থেকে প্রার্থী হয়েও তিনি আলোচনায় আসতে পারেননি। এই অবস্থায় নতুন দলের চেয়ারম্যান হিসেবে সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী হয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনাটা তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার নির্বাচনী এলাকা গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায়ও তৃণমূল বিএনপির সাংগঠনিক কোন অবস্থান তৈরি হয়নি। জেলার ৬টি আসনের মধ্যে ৪টিতে প্রার্থী দিলেও প্রায় সকল প্রার্থীই ভোটারদের কাছে নতুন মুখ। তাই ভোটের মাঠে প্রার্থীরা কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারবেন সেটা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।
তবে নিজের বিজয় ও দলের অন্যান্য প্রার্থীদের ভাল ফলাফল করার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী শমসের মবীন চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ ভোট উৎসবে মেতেছে। মানুষ ভোট দিতে চায়। ভোটাররা দল নয়, প্রার্থী ও আদর্শ দেখে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, তার দল থেকে প্রার্থী হতে অনেকেই আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। তাই কয়েকটি আসনে একাধিক প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত একজনকে বাদ দিয়ে একক প্রার্থী রাখা হবে। তৃণমূল বিএনপি থেকে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ থেকেই বোঝা যায় তৃণমূলের মানুষের এই দলটি নিয়ে অনেক আগ্রহ রয়েছে। তৃণমুলের মানুষেরাই দলটির প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শমসের মবিন চৌধুরী।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 998 বার