বিশ্বনাথ প্রতিনিধি:
রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রচার-প্রচারণার শেষ দিকে এসে সিলেট-২ আসনে নৌকায় গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
তাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের দিন নিজেদের ভোটারদের সেন্টারে আনতে পারলেই জয়ের মালা গলায় পরবেন আওয়ামী লীগের মনোনীত ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী, স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী।
তবে নির্বাচনী মাঠে আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থী ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবং জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া, গণফোরাম মনোনীত ‘উদিয়াম সূর্য’ প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এবং গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খান, ‘ট্রাক’ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিশ্বনাথ পৌরসভার বর্তমান মেয়র মুহিবুর রহমান।
এছাড়া ওই ৪ প্রার্থী ছাড়াও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন তৃণমূল বিএনপি মনোনীত ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রব মল্লিক, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত ‘ডাব’ প্রতীকের প্রার্থী মো. জহির ও এনপিপি মনোনীত ‘আম’ প্রতীকের প্রার্থী মো. মনোয়ার হোসেন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেট-২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭২৯ জন (পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৪৭ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮২ জন)।
এরমধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৪৯ জন (পুরুষ ভোটার ৯৪ হাজার ৬৬৪ জন ও নারী ভোটার ৮৯ হাজার ৪৮৫ জন) এবং ওসমানীনগর উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৮০ জন (পুরুষ ভোটার ৮১ হাজার ৪৮৩ জন ও নারী ভোটার ৭৯ হাজার ৯৭ জন)। নির্বাচনী আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ১২৭টি (বিশ্বনাথ উপজেলায় ৭৪টি ও ওসমানীনগর উপজেলায় ৫৩টি)।
৭ই জানুয়ারী সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালটের মাধ্যমে চলবে ভোট গ্রহন। সিলেট-২ আসনের ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭২৯ জন ভোটার নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আগামী ৫ বছরের জন্য ওই নির্বাচনী আসনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ‘সংসদ সদস্য’ হিসেবে নির্বাচন করবেন। যিনি নির্বাচিত হয়ে ভোটারদেরকে নিজেদের কাঙ্খিত উন্নয়ন উপহার দিবেন এবং সুখে-দুঃখে ভোটারদের পাশে থাকবেন।
দীর্ঘ প্রচার-প্রচারণাকালে নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, সিলেট-২ আসনের ভোটাররা এক সৎ, দক্ষ, নিষ্ঠাবান ব্যক্তিকে নিজের সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান। বেয়াদব মার্কা কিংবা দূর্নীতিবাজ কেউ নির্বাচিত হওয়ার পর তার মাধ্যমে এলাকার মানুষকে ছোট হতে হবে এমন কাউকে নির্বাচিত করতে চান না সিলেট-২ আসনের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশায় কর্মরত বা বয়সের ভোটাররা। ভোটারদের প্রয়োজন শুধুমাত্র নিজেদের কাঙ্খিত উন্নয়ন এবং সুখে-দুঃখে ভোটারদের পাশে থাকবেন এমন একজন যোগ্য নেতার।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সিলেট-২ আসনে নির্বাচনকে ঘিরে শুরু হয় নানান আলোচনা-সমালোচনা। বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র পদে থেকে নির্বাচনে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর ওই আলোচনা-সমালোচনা নতুন মোড় নেয়। এরপর ১-৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইকালে মুহিবুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হলে সিলেট-২ আসনের নির্বাচনী মাঠে শুরু হয় নতুন আরেক চ্যালেঞ্জের খেলা। অবশেষে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করে মুহিবুর রহমান বৈধতা ফিরে পেলে ও প্রতীক বরাদ্ধের পর জমে উঠে সিলেট-২ আসনে নির্বাচনী আমেজ।
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চলাকালে সময়ের সাথে সাথে বদলাতে থাকে নৌকার সাথে শেষ লড়াই হবে কার, সেই প্রতীক। ভোটারদের কাছে কখন শুনা গেছে লড়াই হবে নৌকা-লাঙ্গল কিংবা নৌকা-ট্রাক কিংবা নৌকা-উদ্দিয়মান সূর্য় প্রতীকের প্রার্থীদের। তবে বিশ্বনাথ উপজেলায় নৌকা-ট্রাকের প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা বেশি হলেও, ওসমানীনগর উপজেলায় প্রতীক বরাদ্ধের পর থেকে নৌকা প্রতীকই আছে আলোচনা শীর্ষে। যদিও এখানে সোনালী আঁশ, উদ্দিয়মান সূর্য প্রতীকের কিছুটা অবস্থান রয়েছে।
এদিকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুহিবুর রহমানের আপন ছোট ভাই প্রবাসী সাইদুর রহমান ও তার (সাইদুর) রহমানের পুত্র প্রবাসী মনসুর রহমান মিশু নির্বাচনী মাঠে নৌকার পক্ষে কঠোরভাবে মানুষের কাছে ভোট ভিক্ষা চাওয়ার কাজ করে আলোচনায় এসেছেন। নিজের ভাই-ভাতিজারা যেখানে নৌকাকে বিজয়ী করতে সরব, সেখানে নিজেদের ঘরের ভোট আনতে ব্যর্থ মুহিবুর রহমান বিজয়ের জন্য ভোট চাইছেন অন্যের ঘরে।
নিজের আপন ভাই-ভাতিজারা নৌকার পক্ষে কাজ করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমানকে নিয়ে তাই নির্বাচনী আসনের সর্বত্র চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ইতিমধ্যে নৌকার পক্ষে প্রচার প্রচারণা ও নির্বাচনী সভায় দেয়া মুহিবুর রহমান আপন ভাতিজা মসনুর রহমান মিশু’র দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভাইরালও হয়েছে নির্বাচনী আসনের এলাকায়।
তবে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি-জামায়াতের ভোটারদের নিজেদের পক্ষে নিতে নানাভাবে চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন সিলেট-২ আসনে ‘সংসদ সদস্য’ পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী অনেক প্রার্থীই। দেখা গেছে বিগত সময় বিএনপি-জামায়াতে নেতাদের নিয়ে যারা কটুক্তিতে লিপ্ত ছিলেন কিংবা নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তে অভিযোগ করে বিএনপির প্রার্থীদের প্রার্থীতা বাতিল করে ছিলেন তারাই এখন নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেওয়ার জন্য নিজেদের প্রতীকের সমর্থনতে অনুষ্ঠিত উঠান বৈঠক, পথসভা কিংবা জনসভায় বিএনপি-জামায়াতের সেই নেতাদের বন্দনাতেই বেশি ব্যস্থ থাকছেন।
এদিকে নির্বাচন বর্জন করার জন্য বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা নিজেদের দলের সমর্থকদের আহবান করে লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিচ্ছেন নির্দেশনাও।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার