স্টাফ রিপোর্টার:
রবিবার (৭ জানুয়ারি) বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঘটেনি বড় বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে টানা ভোটগ্রহণ। সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ১০৫ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ১৯ জন হাসেন বিজয়ের হাসি।
তবে রবিবার ভোট চলাকালে সিলেট বিভাগে কয়েকজন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তার সমর্থকরা কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদান করছে ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ওই প্রার্থীরা ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। দুপরের পর থেকেই প্রার্থীদের থেকে এই ঘোষণা আসতে থাকে।
বেলা ২টার দিকে নিজ এলাকায় প্রেস ব্রিফিং করে সিলেট-২ আসনের চার প্রার্থী একসঙ্গে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী, গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান ও তৃণমূল বিএনপির আব্দুর রব মল্লিক ।
তখন ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকার কর্মীরা আমার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে, ‘জাল ভোট’ দিচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ কিংবা প্রিজাইডিং অফিসার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বরং লিখিত অভিযোগ দিতে বলছেন। এমনকি একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সাময়িক বন্ধ রাখার পর নৌকার প্রার্থী এসে ভোটগ্রহণ শুরু করে দেন। এ অবস্থায় নির্বাচনে থাকা সম্ভব না, তাই আমি প্রত্যাহার করছি।’
মোকাব্বির খান বলেন, ‘যেভাবে জোর করে আমার ও অন্য দুইজন প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেয়া হচ্ছে, এর পরে নির্বাচনে থাকা যায় না।’
মুহিবুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় পার্টির এমপিকে রীতিমতো জিম্মি করে নৌকার প্রার্থী টেবিল কাস্টিং করেছেন। আমি আরও পর্যবেক্ষণ করে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
অন্যদিকে, এদিন বিকেল ৩টার দিকে সিলেট-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) আওয়ামী লীগ নেতা ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জন করেন। ভোটকেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী প্রভাব বিস্তার করে এজেন্টদের বের করে দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ-প্রিসাইডিং অফিসারের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। তিনি তখন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমন কোনও অনিয়ম নেই যা ভোটকেন্দ্রে হয়নি। অভিযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি। তাই ভোট বর্জন করলাম।’
একই অভিযোগে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ভোট বর্জন করে সিলেট-৩ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। সিলেট-৪ আসনের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল হোসেনও (সোনালী আঁশ) রবিবার দুপুরে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। ভোটগ্রহণের অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি নির্বাচন বয়কট করেন।
সিলেট জেলায় ভোট বর্জনকারীদের মধ্য থেকে সিলেট-২ আসনের প্রার্থী মুহিবুর রহমান ও সিলেট-৩ আসনের প্রার্থী ডা. দুলাল আজ সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের সামনে তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য তুলে ধরবেন।
অপরদিকে, কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম, জাল ভোট প্রদান ও এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগে মৌলভীবাজারের ৩টি সংসদীয় আসন থেকে চার প্রার্থী ভোট বর্জন করেন। ভোটের দিন মৌলভীবাজার-২ আসনের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম এম শাহীন (পাট) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম শফি আহমদ সলমান (ট্রাক) ও মৌলভীবাজার-৩ আসনের জাপা প্রার্থী আলতাফুর রহমান ও এনপিপি প্রার্থী আবু ব র ফলাফলের পূর্বে নির্বাচন বর্জন করেন।
তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থী এম এম শাহীন জানান, কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম এবং জাল ভোট দেয়া হয়েছে। প্রায় সব কেন্দ্র থেকেই এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। ভোট চলাকালীন সময়ে এসব অনিয়মের কথা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার পরও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ভোট বয়কটের ঘোষণা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ সলমান জানান, কুলাউড়ার প্রতিটি কেন্দ্রে অনিয়ম এবং জাল ভোট দেয়া হয়েছে। কেন্দ্ৰ থেকে এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। ভোট চলাকালীন সময়ে এসব অনিয়মের কথা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করার পরও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার