Daily Jalalabadi

  সিলেট     সোমবার, ১৮ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে অভিজ্ঞতা ও কৌশলের কাছে হার নতুনদের

admin

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
সিলেটে অভিজ্ঞতা ও কৌশলের কাছে হার নতুনদের

স্টাফ রিপোর্টার:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুরনোদের সাথে পাল্লা দিয়ে ভোটের মাঠ বেশ জমিয়ে রেখেছিলেন নতুন প্রার্থীরা। ভোটের হিসেবেও নতুনরা চমক দেখাবেন এমনটা ধারণা করেছিলেন ভোটাররা। নতুনদের দাপটে ভোটের মাঠে বেশ পেরেশানিতে পড়েছিলেন পুরোনারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নতুনদের তরী তীরে ভিড়েনি। নৌকার পুরনো মাঝিদের অভিজ্ঞতা ও কৌশলের কাছে হার মানতে হয়েছে তাদেরকে। সিলেট জেলার ৬টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যরা। আর একটিতে বিজয়ী হয়েছেন নুতন মুখ। ওই আসনে মুল প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী সবাই প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছিলেন।

 

সিলেট জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের ২টিতে শুরু থেকেই প্রতিদ্ব›িদ্বতা ছিল না। শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী না থাকায় সিলেট-১ আসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও সিলেট-৪ আসনে প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী ইমরান আহমদের জয়লাভ ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। বাকি ৪টি আসনে পুরনো প্রার্থীদের সাথে নতুনদের তুমুল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। অনেক ক্ষেত্রে পুরনোদের পেছনে ফেলে এগিয়ে ছিলেন নতুনরা।

 

সিলেট-২ আসনে ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনই ছিলেন নতুন। আর বাকি চারজন এর আগেও সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক ৩ সংসদ সদস্য ও একজন পৌর মেয়র ছিলেন প্রার্থী। নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। তার সাথে ধরাশায়ী হন বর্তমান সংসদ সদস্য গণফোরামের মোকাব্বির খান ও সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ইয়াহিয়া চৌধুরী। সাবেক ও বর্তমান এই দুই সংসদ সদস্যের মনোনয়ন বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এ দু’জনকে পেছনে ফেলে শফিকুর রহমানের নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান। এছাড়া আসনটি থেকে প্রার্থী হওয়া বাকি চার নতুন প্রার্থীর কেউই চমক দেখাতে পারেননি। সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

 

 

সিলেট-৩ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে আলোচনায় চলে আসেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন-বিএমএ’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী। বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে নেমে ডা. ইহতেশাম ভোটের মাঠ জমিয়ে তুলেন। তার পক্ষে মাঠে নামেন আওয়ামী লীগের একাংশ। নির্বাচনে ইহতেশামুলের ট্রাকের কাছে হাবিবের নৌকার ধরাশায়ী হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে ওঠে। কিন্তু ভোটের দিন হাবিবের কৌশলের কাছে বন্দি হয়ে পড়েন ডা. ইহতেশাম। নির্বাচনী আসনের বোয়ালজোড় ইউনিয়নের কয়েকটি কেন্দ্রে হাবিবের কর্মীরা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালান। এই কেন্দ্রগুলোতে ‘গন্ডগোল’ করার আগাম ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছিলেন হাবিবের কর্মীরা। ভোটের দিন ডা. ইহতেশামকে ওই ইউনিয়নেই ব্যস্ত রাখেন হাবিবের কর্মীরা। ফলে ভোটের পুরো দিনই নির্বাচনী এলাকার তিন উপজেলায় চোখ রাখতে পারেননি ইহতেশাম। ফলে একদিকে হাবিবের কর্মীরা পুরো নির্বাচনী এলাকায় দাপট খাটান, অন্যদিকে ডা. ইহতেশামের ভোটারদেরও উপস্থিতি কম হয়। ফলে নির্বাচনে হাবিবের কৌশলে ধরাশায়ী হয়ে যান তিনি। যদিও ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনী এলাকার ৪৭টি কেন্দ্রে প্রশাসনের সহযোগিতায় নৌকার কর্মী-সমর্থক ও এজেন্টরা জাল ভোট দিয়েছেন। তার এজেন্ট ও সমর্থকদের ভয়ভীতি ও মারধর করে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছেন।

 

 

সিলেট-৫ আসনের ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনই ছিলেন নতুন। তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী কুতুব উদ্দিন সিকদার এর আগে একই আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে মুল প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ছিলেন- আওয়ামী লীগের মাসুক উদ্দিন আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. আহমদ আল কবীর এবং অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলতলী পীরের ছেলে মাওলানা হুছাম উদ্দিন চৌধুরী। তিন প্রার্থীই প্রথমবারের মতো প্রার্থী হন। শেষ পর্যন্ত বাকিদের পেছনে ফেলে বিজয়মালা পরেন মাওলানা হুছাম উদ্দিন।

 

 

সিলেট-৬ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে জেলাজুড়ে আলোচনায় ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ তার পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নামে। নির্বাচনী এলাকা গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় বিশাল বিশাল জনসভা করেন তিনি। তার জনসমর্থন দেখে অনেকে আগেভাগে ধরে নিয়েছিলেন এবার সরওয়ারের ঈগল প্রতীকই বাজিমাত করবে। কিন্তু ভোটের দিন কাঙ্খিত ভোটারদের কেন্দ্রে টানতে পারেননি তিনি। অপরদিকে, ভোটের মাঠের হিসেবে অনেক পিছিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজের অভিজ্ঞতা ও কৌশল কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করেন। নিজের শেষ নির্বাচন হিসেবে ভোটারদের কাছে আবেগী বক্তব্য দিয়ে তাদের নজর কাড়েন। বিশেষ করে ভোটের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখেন নাহিদ। কর্মীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি দিয়ে তাদেরকে কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। ফলে সরওয়ারের ঈগলকে মাটিতে নামিয়ে শেষ হাসি হাসেন নাহিদ।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 992 বার

শেয়ার করুন