Daily Jalalabadi

  সিলেট     সোমবার, ১৮ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রুয়েলকে রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ, চক্রের নারীসহ অন্য সদস্যরা পলাতক

admin

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৫:০৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৫:০৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
রুয়েলকে রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ, চক্রের নারীসহ অন্য সদস্যরা পলাতক

স্টাফ রিপোর্টার:
৭ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)- এর অপস এ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স টিমের জালে আটক একটি মানবপাচারকারী চক্রের মূল হোতা রুয়েল আহমদকে (৩২) রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ।

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে তাকে আদালতে তুলে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। তবে এ আবেদনের শুনানি পরে করা হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এস. এম. মাঈন উদ্দিন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের নুনু মিয়ার ছেলে রুয়েল আহমদ (৩২) ও তার বোন সীমা আক্তার মিলে গড়ে তুলেছিলো ভয়ংকর এক চক্র। তারা টার্গেট করতো সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে সেখানে যাওয়া সহজ-সরল যুবক ও তরুণদের। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর স্বপ্ন ও প্রলোভন দেখিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হতো কিরগিজস্তানে। সেখানে ওই চক্রের বিদেশি সহযোগিদের সহযোগিতায় একটি ঘরে আটকে রেখে দেশে যোগাযোগ করে আটকা পড়া তরুণ ও যুবকদের পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হতো বড় অংকের টাকা।

সিলেটের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে রুয়েল আহমদ ও তার বোন। দেশে তাদের রয়েছে আরও সহযোগী। তবে শেষ পর্যন্ত রুয়েলকে আটক হতে হয়েছে পুলিশের জালে। সে আটক হলেও তার বোনসহ অন্য অভিযুক্তরা এখনও পলাতক।

রবিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টায় ৭ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)- এর অপস এ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স টিম জুড়ী উপজেলাসদরের বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মুহিত আসুক চত্বর থেকে রয়েলকে গ্রেফতার করে।

৭ এপিবিএনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য এএসআই পাবেল আহমদ জানান- গত বছরের মার্চ ও এপ্রিলে দুটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে ৭ এপিবিএন-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার ফরিদুল ইসলামের নির্দেশে সংস্থাটির অপস এ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স টিম। দীর্ঘ তদন্তে ভয়ংকর মানবপাচারকারী রুয়েল সম্পর্কে বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। এরই মধ্যে রুয়েলের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হওয়া মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার মো. কামরুজ্জামানের স্ত্রী সৈয়দা জলি বেগম (৩০) ৭ এপিবিএন সিলেটের অধিনায়ক বারবারে লিখিত অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের তদন্তেও রুয়েলের অপকর্মের একাধিক ঘটনা উঠে আসে।

অবশেষে রবিবার বিকালে জুড়ী উপজেলাসদর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ৭ এপিবিএন-এর পরিদর্শক মো. এসএম আল মামুন।

এর আগে তার বিরুদ্ধে সৈয়দা জলি বেগম বাদী হয়ে জুড়ী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় রুয়েলের বোন সীমা আক্তার, চাচাতো ভাই রকি ইসলাম ও তার আরেক সহযোগী কামরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, জলির স্বামী কামরুজ্জামান শ্রমিক হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়ে পরিচয় হয় রুহেল ও তার বোন সীমা আক্তারের সঙ্গে। একপর্যায়ে কামরুজ্জামানসহ আরো ২০/২৫ জন প্রবাসীকে বিভিন্ন প্ররোচণা ও প্রলোভন দেখিয়ে ফ্রান্স নেওয়ার কথা বলে রুহিল ও সীমা। এ বিষয়ে কামরুজ্জামানের পরিবারের সঙ্গে ৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী গত ২০২২ সালের ১ অক্টোবর রুহেলের সহযোগী কামরুল ইসলামের কাছে কামরুজ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে ৮০ হাজার এবং পরদিন রুহেলের চাচাতো ভাই রকি ইসলামের কাছে নগদ ৮০ হাজার টাকা ও ৭০ হাজার টাকার এনআরবিসি ব্যাংকের চেক প্রদান করা হয়।

টাকা প্রদানের সময় সে বছরের ৪ অক্টোবর ফ্রান্স নিবে বলে ভিকটিম কামরুজ্জামানসহ আরো ১৮ জনকে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে কিরগিজস্তান নিয়ে যায় রুহেল। কিরগিজস্তান পৌছার পর দালাল রুহেল তার বিদেশি সহযোগিদের সহযোগিতায় সবাইকে একটি ঘরে আটক করে রাখে। এসময় কামরুজ্জামানের সঙ্গে থাকা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা রুয়েল কেড়ে নিয়ে সে পুনরায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে আসে। পরে দালাল রুয়েল মুক্তিপন হিসাবে কামরুজ্জামানের পরিবারের কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করতে থাকে। এভাবে ৫ মাস গড়ালে কামরুজ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা পেয়ে রুয়েল কিরগিজস্থানে গিয়ে কামরুজ্জামানকে নিয়ে ফের সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে আসে। কিরগিজস্তান থেকে দুবাই নিয়ে আসতে বিমান ভাড়াবাবদ ৫০ হাজার টাকাও সে নেয় কামরুজ্জামানের কাছ থেকে।

পরবর্তীতে গত বছরের ৭ অক্টোবর রুয়েল দেশে আসলে কামরুজ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে সালিশি ব্যক্তিরা তার কাছে গেলে সে সম্পূর্ণ ঘটনা অস্বীকার করে এবং তাদের গালাগাল করে ও প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে। পরে বাধ্য হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হন কামরুজ্জামানের স্ত্রী।

এদিকে, ওই রুয়েল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বাস্বান্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাদেদেউলী গ্রামের যুবক সুরঞ্জিত চন্দ্র দাস। তিনিও জীবিকার তাগিদে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিলেন। কামারুজ্জামানের মতো সুরঞ্জিতকেও এভাবে কিরগিজস্তানে নিয়ে গিয়ে আটক করে তার পরিবারের কাছ থেকে ৭ লাখ মুক্তিপণ নেয় রুয়েল চক্র। আরব আমিরাত থেকে তাকে ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায় রুয়েল।

সুরঞ্জিত চন্দ্র দাস ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়া ইউনিয়নের বাদেদেউলী গ্রামের সুকুমার চন্দ্র দাসের ছেলে। একপর্যায়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরেন।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন