Daily Jalalabadi

  সিলেট     রবিবার, ১৭ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৭৪ বছরে বিয়ানীবাজার ডাকঘর, ঝূকিপূর্ণ ভবনে চলছে কার্যক্রম

admin

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪ | ০৫:০৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ | ০৫:০৪ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
৭৪ বছরে বিয়ানীবাজার ডাকঘর, ঝূকিপূর্ণ ভবনে চলছে কার্যক্রম

বিয়ানীবাজার সংবাদদাতা:
‘চিঠি দিও প্রতিদিন, চিঠি দিও/ নইলে, থাকতে পারব না/ চিঠি দিও’ কিংবা ‘সে আমায় চিঠি দিয়েছে/ সে আমার খবর নিয়েছে।’ বাংলা সিনেমার গান। এ রকম গান দুই-আড়াই দশক আগেও সিনেমা হলে, ঘরে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় রেডিও, টেপরেকর্ডার অথবা টেলিভিশনে বেজেছে। এরকম গানের কথাগুলো আবেগ আর ভালোবাসায় নানা রং তৈরি করেছে। মনকে রাঙিয়েছে।
শুধু তরুণ-তরুণীর আকুলতা চিঠিতে জড়ানো ছিল, সে রকম নয়। ওখানে বিষয়-আশয়, সংসারের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখের কত কিছু জমা থাকত। একটি চিঠি কখনো একরাশ আনন্দের উচ্ছ¡াস তৈরি করেছে, কখনো মন খারাপেরও বার্তাবাহক হয়েছে। তবু চিঠির অপেক্ষা ছিল। দূরত্বকে কাছে নিয়ে আসার উপায় ছিল চিঠি। গোটা অক্ষরে, কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা চিঠির কোনো বিকল্প ছিল না। এই সময়টা কত দ্রæতই পাল্টে গেছে। এখন আর চিঠি দিও, চিঠি এসেছে-এই আকুলতা নিয়ে কেউ অপেক্ষায় নেই, উচ্ছ¡াস নেই।
বিয়ানীবাজার পৌরশহরের প্রবীণ মানুষ সৈয়দ আবু কয়ছর এ রকমই বলেন, ছোটবেলায় তিনি বড়দের কাছে চিঠি লেখা শিখতেন। কোনো খবর কোথাও পৌঁছাতে ডাক বিভাগের খামে ভরে সেই চিঠি পোস্ট অফিসের ডাকবাক্সে ফেলে আসতেন। যখন ডাকপিয়ন চিঠি নিয়ে আসতেন, পাড়ার সবাই তাঁকে ঘিরে ধরতেন। একটি চিঠি একটি পরিবারের বর্তমানকে পাল্টে দিয়েছে। কখনো হাসিতে, কখনো বিষাদে। এই কথাগুলো মূলত একটি ডাকঘরকে ঘিরে। সেই কবে, শত বছর আগে দূরদেশে থাকা প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে স্থাপিত হয়েছিল বিয়ানীবাজারের প্রধান ডাকঘর। এলাকার অনেকেই এই ডাকঘরের সেবা নিয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিয়ানীবাজার উপজেলায় এটি প্রথম ডাকঘর। আপনজন, প্রিয়জন কিংবা পরিচিতজনের একটি চিঠি পাওয়ার অপেক্ষায় এক সময় অনেকেরই যাতায়াত ছিল পোস্ট অফিসে। চিঠি ছাড়াও বিদেশ অথবা দেশে আপনজনের কাছে টাকা পাঠাতে একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ছিল এটি। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে ই-মেইল, অনলাইন আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবাধে এই পোষ্ট অফিসের গুরুত্ব এখন আর নেই বললেই চলে। তবুও জীবন বীমা, সঞ্চয়পত্রে টাকা জামানত রাখা কিংবা জরুরী কাগজপত্র পাঠাতে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে এই পোষ্ট অফিসের গুরুত্ব অপরিহার্য। উপরোক্ত কারণগুলোর জন্যই প্রতিদিন গ্রাহকরা কাঙ্খিত সেবা পেতে ছুটে আসেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পোস্ট অফিসে। অথচ সংস্কারের অভাবে বর্তমানে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে পৌরশহরের মধ্যখানে অবস্থিত বিয়ানীবাজার উপজেলা পোস্ট অফিসটি। পাকিস্থান আমলে নির্মিত দুইতলা এই ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন ডাকঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পোস্ট অফিসের ভিতরে গিয়ে ভবনটির জীর্ণদশা দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবে। কবে নাগাদ এ অফিসের চুনকাম বা কি ধরনের রং করা হয়েছে তা বোঝার কোন উপাই নেই। খসে পড়ছে ভবনের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা, বেরিয়ে পড়েছে রড। দেয়াল ও ছাদের দিকে তাকালে মরিচা ধরা লোহার রডগুলো চোখে পড়ে। বর্তমানে বৃষ্টির সময়ে ভবনটির সমস্থ স্থান জুড়ে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ভবনের দরজা-জানাজাগুলো নামমাত্র ঠিকে আছে। এসবের ভিতরেই ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে অফিসিয়াল কাজকর্ম চালাচ্ছেন এখানকার ৭জন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। যেকোনো মুহুর্তে ভবনটি ধসে ঘটতে পারে প্রাণহানিসহ বড় কোনো দূর্ঘটনা। ডাকঘর চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, অবহেলা আর অযতেœ ভবনের চারপাশে গড়ে উঠেছে ঝোপঝাড়। ফলে সন্ধ্যা হলেই এখানে জমে উঠে অপরাধী আর মাদকসেবীদের আস্থানা হিসেবে।
পোস্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাঠ, বেত ও টিনশেড দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল বিয়ানীবাজার উপজেলা অফিস। অফিসের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেলে ১০/১২ বছর পর পাশেই একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে পোস্টাল কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে এই ভবনেই চলছে অফিসের কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংস্কারের ভবনের অবস্থা বেশ নাজুক। ভবনটি দ্রæত সংস্কার না করলে যেকোন সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা।
এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা পোস্ট মাস্টার আপেল মাহমুদ বলেন, অনেকদিন ধরেই বিয়ানীবাজার পোস্ট অফিসটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর এর মধ্যেও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছি। ভবনটি সংস্কারের জন্য পোস্ট অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানালেও এখন পর্যন্ত সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন