স্টাফ রিপোর্টার:
‘ছাত্রলীগের পাতি নেতারা চিনি ছিনতাই করেছে!’ বিয়ানীবাজারে চিনি ছিনিয়ে নেওয়ার পর ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মৌখিকভাবে এ অভিযোগ করায় পুলিশ গাছাড়া বলে অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালালেও সোমবার (১০ জুন) পুলিশের ভূমিকা ছিল গাছাড়া। ছিনিয়ে নেওয়া চিনি উদ্ধার ও ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে ঢিলেমি শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রবিবার বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবদুলাল ধর বলেছিলেন, পুলিশের একাধিক টিম মাঠে তৎপর রয়েছে। চিনি উদ্ধার করে ছিনিয়ে নেওয়াদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। চিনি ব্যবসায়ীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান চলছে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। এক দিন পর গতকাল অগ্রগতি বিষয়ে ওসি দেবদুলাল ধর কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
গত শনিবার সীমান্ত উপজেলা বিয়ানীবাজারে সরকারি নিলাম ডাক থেকে কেনা ২৪ লাখ টাকার চিনি ব্যবসায়ী তার গুদামে নিয়ে যাওয়ার পথে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, চোরাই চিনি সরকারি নিলাম ডাকে কেনার আক্রোশে চোরাকারবারিদের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের এক দল নেতা-কর্মী এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। শনিবার দুপুর বেলা সিলেট-বিয়ানীবাজার-জকিগঞ্জ সড়কের চারখাই পুলিশ ক্যাম্পের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
চিনির মালিক ব্যবসায়ী বদরুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিনে তিনি সরকারের বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে এক হাজার ৪৭৭ বস্তা চিনি নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করেন। ওই চিনি থেকে ৪০০ বস্তা চিনি তিনি জকিগঞ্জ উপজেলার শাহগলী বাজারের একজন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। শনিবার দুপুরে একটি ট্রাকবোঝাই করে বিক্রীত চিনি নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাটি ঘটে। ছিনিয়ে নেওয়া চিনির মূল্য ২৪ লাখ টাকা।
ব্যবসায়ী বদরুলের অভিযোগ, বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের দুজন নেতার নেতৃত্বে ১৫-১৬ জনের এক দল তরুণ একটি প্রাইভেটকার, চারটি মোটরসাইকেল এবং একটি পিকআপ নিয়ে চিনিবোঝাই ট্রাকের গতিরোধ করে। এ সময় তারা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ট্রাকের চালককে জিম্মি করে চিনি তাদের পিকআপ ভ্যানে তুলে বিয়ানীবাজার পৌর শহরে নিয়ে যায়।
ছাত্রলীগের কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের পাতি নেতারা চিনি ছিনতাই করেছে।’ তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ঘটনাস্থলের লোকজন সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল আলম সাকেল, উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শফিউল্লাহ সাগর, শ্রীধরার আনুর নেতৃত্বে চিনি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। ছিনতাই ঘটনায় সরাসরি এরা জড়িত থাকলেও আগের রাতে উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা দক্ষিণ বাজারে গোপন মিটিং করেন। সেই মিটিং ছাত্রলীগের পদবীধারী প্রথমসারির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ওই মিটিং এর পরই দক্ষিণ বাজারে ওষুধ কোম্পানীর একটি গাড়ি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। এ ঘটনায়ও ছাত্রলীগ নেতাদের ফোন করেন বিয়ানীবাজার থানার ওসি। কিন্তু তার ফোনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তেমন সাড়া না দেয়ায় পরে অভিযানে নামে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে কিনা তা জানাতে পারেনি কেউ।
বিয়ানীবাজার থানার এসআই শাহজাদা ফয়সল বলেন, ‘চিনি ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাদীর দেয়া অভিযোগপত্রে কিছুটা ত্রুটি আছে। সেগুলো সংশোধন হলে মামলা রুজু করা হবে।’
এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, পুলিশ মামলার এজাহারে বাদীকে রাঘব বোয়ালদের নাম বাদ দেয়ার নির্দেশনা দিচ্ছে। এতে প্রকৃত আসামীরা বাদ পড়ার শঙ্কা করছেন বিয়ানীবাজারবাসী।
অপরদিকে চিনি ছিনতাই ঘটনায় ভিতরে-ভিতরে চরম ক্ষুব্দ স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিতে তার কাছের লোকদের বলে দিয়েছেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার