স্টাফ রিপোর্টার:
বিয়ানীবাজারের চাঞ্চল্যকর ২৪ লাখ টাকার চিনি ছিনতাই কান্ডে প্রশাসন ও জনমনে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের পদবীধারী একাধিক নেতা এবং এই সংগঠনের রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা বহিরাগতরা জড়িত থাকায় সর্বত্র বইছে সমালোচনার ঝড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে ট্রল করছেন সমালোচকরা। ছিনতাই কান্ড নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি এড়াতে মঙ্গলবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করেছে থানা পুলিশ। এতে ঘটনার নানা বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন ও অফিসার ইনচার্জ দেবদুলাল ধর।
পুলিশ জানায়, ছিনতাই ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ৮০ বস্তা চিনি, একটি পিকআপ (ঢাকামেট্রো-ঠ ১১০৭০৯) উদ্ধার ও এজাহারনামীয় দুই আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে গ্রেফতারকৃত আসামীদের রিমান্ড আবেদন করেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহজাদা ফয়সল। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানার হোসাইনপুর গ্রামের (বর্তমানে পৌরশহরের দাসগ্রাম লিচুটিলা ছাত্তার মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া) মো: খলিল মিয়ার ছেলে মো: লিটন মিয়া (২৬) ও মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা শাহবাজপুর এলাকার বোবারতল গ্রামের (বর্তমানে সুপাতলা) মোস্তফা উদ্দিনের ছেলে হাসান (২১)। এরমধ্যে লিটন পেশাদার অপরাধী। তার বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় ডাকাতির আরো মামলা আছে।
জানা যায়, যথাযথ প্রক্রিয়ায় সরকারিভাবে নিলামে কেনা বিপুল পরিমাণ চিনি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় বিয়ানীবাজার থেকে লুট করে নিয়েছে একদল ছিনতাইকারী। শনিবার সকালে সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের চারখাই পুলিশ ক্যাম্পের অদূর থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চিনি বোঝাই ট্রাক নিয়ে পৌরশহরে চলে আসে ছিনতাইকারী ওই চক্র।
বিয়ানীবাজারে আসার পর ট্রাকের অর্ধেক চিনি পৌরশহরের পৃথক দু’টি গ্রামে নিয়ে নামিয়ে ফেলা হয়। চিনির মালিকের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছিনতাই হওয়া চিনি উদ্ধারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। চিনির মালিক বদরুল ইসলাম বলেন, চারখাই বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্টান রয়েছে। গত কয়েকদিনে তিনি সরকারের বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে ১৪৭৭ বস্তা চিনি নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করেন। ওই চিনি থেকে ৪শ’ বস্তা চিনি তিনি জনৈক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। শনিবার দুপুরে একটি ট্রাক বোঝাই করে বিক্রিত চিনি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে। তিনি অভিযোগ করেন, ১৫-১৬ জনের ছিনতাইকারী চক্র একটি প্রাইভেট কার, ৪টি মোটর সাইকেল এবং একটি পিকআপ নিয়ে চিনি বোঝাই ট্রাকের গতিরোধ করে। ছিনতাই হওয়া চিনির বাজার মূল্য প্রায় ২৪ লাখ টাকা।
চিনির মালিক বদরুল ইসলাম জানান, ছিনতাই মামলায় প্রকৃত আসামীদের বাদ দেয়া হয়েছে। ফরমায়েসি এজাহারের বিষয়ে পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হবে। তিনি অভিযোগ করেন, শ্রীধরার জনৈক ব্যক্তির লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তবে ফুটেজে প্রমাণ থাকার পরও অনেককে মামলায় আসামী করা হয়নি। ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ও কার জব্দে পুলিশী তৎপরতা কম। নাম্বারপ্লেট বিহীন সাদা রঙের ওই কারটি পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আশারাফুল আলম সাকেল ব্যবহার করেন বলেও দাবী করেন তিনি। কারটি তার বাড়িতে রাখা আছে মর্মে ভিডিও ক্লিপ দেখান বদরুল। সেই সাকেলকে মামলায় আসামী করা হয়নি।
এদিকে ছোটদেশ ছুটিয়াংয়ের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে তারেক আহমদ (২৩, ছাত্রলীগ কর্মী), খাসাড়িপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে রাসেল আহমদ (২৪, ছাত্রলীগ কর্মী), শ্রীধরার মুজিবুর রহমানের ছেলে বক্কর (২৫, স্যানেটারী মিস্ত্রী), একই গ্রামের আনছার আলীর ছেলে আনু (২৩, দিনমজুর) ও আজির উদ্দিনের ছেলে ছাদিক আহমদ (৩০, সবজি ব্যবসায়ী), কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানার হোসাইনপুর গ্রামের (বর্তমানে পৌরশহরের দাসগ্রাম লিচুটিলা ছাত্তার মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া) মো: খলিল মিয়ার ছেলে মো: লিটন মিয়া (বহিরাগত ছাত্রলীগ ক্যাডার), মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা শাহবাজপুর এলাকার বোবারতল গ্রামের (বর্তমানে সুপাতলা) মোস্তফা উদ্দিনের ছেলে হাসান (২১, বহিরাগত ছাত্রলীগ ক্যাডার), নবাং গ্রামের শরফ উদ্দিনের ছেলে জিবান (২২, বখাটে ছাত্রলীগ কর্মী), চট্রগামের বাসিন্দা বর্তমানে সুপাতলার নছরুল্লাহর ছেলে শফিউল্লাহ সাগর (২৮, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি), খাসাড়িপাড়া গ্রামের ফারুক আহমদের ছেলে ফাহাদ আহমদ (২৩, ছাত্রলীগ কর্মী) ও চারখাই জালালনগরের হেলাল মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ (২৪, মহানগর ছাত্রলীগ কর্মী)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭-৮জনকে মামলায় আসামী করা হয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল আহমদ শিপু বলেন, আমরা এমন ঘটনার নিন্দা জানাই। ছাত্রলীগের কেউ এমন ঘটনায় জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার