বিয়ানীবাজার সংবাদদাতা:
বন্যায় ঘর তলিয়ে যাওয়ায় স্ত্রী আফসানা বেগমকে নিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের বাড়ুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন বাড়ুদা গ্রামের কুনু আহমদ। গত ২ জুলাই আফসানা বেগমের প্রসব ব্যথা উঠলে আশ্রয়কেন্দ্রের অন্যদের সহযোগিতায় তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। পরে নবজাতকের জন্য উপহার সামগ্রী নিয়ে তাকে দেখতে যান বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী শামীম।
বিয়ানীবাজারে বন্যার কারণে ভোগান্তি ও দুশ্চিন্তায় আছেন বিয়ানীবাজারের প্রায় হাজারখানেক অন্তঃসত্ত্বা নারী। সরকারি হিসেবে উপজেলায় ৮৯১ জন নারী অন্তঃসত্ত্বা। তৃতীয় দফা বন্যায় দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দি থাকায় তারা একদিকে যেমন সুপেয় পানি, পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ঘর থেকে দূরবর্তী শৌচাগার, ঘরের ভেতর ও বাইরের মাটি পিচ্ছিল হওয়াসহ পরিবেশগত নানা সমস্যায় তারা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
গত জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিয়ানীবাজারে প্রথম দফা বন্যা শুরু হয়। মূলত: তখন থেকেই পানি আক্রান্ত মানুষ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। অনেকে আবার পানির মধ্যে ঘরেই থেকে যান। বিয়ানীবাজার উপজেলার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে। তখন পানির পরিমাণ ও স্রোত খুব বেশি থাকে। তখন সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই সেসব এলাকার গর্ভবতী নারীরা আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকলেও গর্ভকালীন সেবা পেতে প্রচুর দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গর্ভবতী এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাত মাস (গর্ভাবস্থা) চলছে আমার। ঈদের পরের দিন থেকে ঘরে পানি। এই পানির মধ্যেই দৈনন্দিন কাজ করি। পায়ে ঘা হয়ে গিয়েছিল। তিন দিন হয় এক রুমের পানি কমেছে। কিন্তু বাকি দুই রুমে এখনো পানি আছে। স্বামী বাইরে থেকে বালতি দিয়ে খাবার ও গোসলের পানি ঘরে এনে দেন। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বন্যার কারণে যেতে পারছি না। পরিবার পরিকল্পনার দিদি এসে খোঁজ খবর নিয়ে যান।’
বর্তমানে বিয়ানীবাজারের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে, যদিও উপজেলার অনেক গ্রামে এখনো হাঁটু পানি, রাস্তাঘাট তলিয়ে। সরজমিনে গিয়ে দেখা হয় পরিবারকল্যাণ কর্মী সরফ উদ্দিনের সঙ্গে। এলাকা ভিজিট করতে গিয়ে তিনি হাঁটু পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির কারণে তারা এখন সবচেয়ে বেশি সংকটে আছেন। বাড়িতে পানি থাকায় কিছু নারী নিরাপদ আশ্রয়ে গেছেন। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি। কারণ সেখানে মানুষজন অনেক গাদাগাদি করে থাকছেন। গর্ভবতী নারীদের থাকার মতো সুব্যবস্থা নেই।’
বন্যাকালে সবচেয়ে বেশি সংকটে আছেন বিয়ানীবাজারের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের গর্ভবতী নারীরা। বিশেষ করে মুড়িয়া ইউনিয়নের সারোপার, নয়াগ্রাম, তিলপাড়ার শানেস্বর, বিবিরাই, মাটিজুরা, দেবারাই, ইনাম, উলুউরী, কুড়ারবাজারের গড়রবন্দ, গোবিন্দশ্রী, দেউলগ্রাম, শেওলার দিঘলবাক, সালেশ্বর, দুবাগের গজুঁকাটা, নয়াদুবাগ, চরিয়া, খাড়াভরা, মইয়াখালী, চারখাইয়ের শিকারপুর, সাচান গ্রামের গর্ভবতী নারীরা বেশী ঝূঁকির মুখে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার