জকিগঞ্জ সংবাদদাতা:
সিলেটের জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ধীর গতিতে উন্নতি হচ্ছে। এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে। খাবার পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে লোকজন বেশি কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। চলতি বছরে টানা তিনবারের বন্যায় জকিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি সাধারণ মানুষ ক্ষোভের শেষ নেই। গত সপ্তাহে কুশিয়ারা নদীর চারটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জকিগঞ্জ ফায়ার স্টেশন, শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কসহ রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল পানিতে তলিয়ে যায়। এতে করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীতে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় চলতি বছর টানা তিনবার বন্যায় আক্রান্ত হতে হয় উপজেলার শতাধিক গ্রামের লোকজন। সুরমা নদীর বেড়িবাঁধে দেড়মিটার উচুঁ করার কাজ শুরু হলেও কুশিয়ারা নদীতে নেই শক্ত বেড়িবাঁধ। এতে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে বন্যা সৃষ্টি হয়।
বানভাসি এলাকার একাধিকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার পরিস্থিতিতে আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা নিলেও খুবই কষ্টে দিন কাটাতে হয়। গ্রামের ভেতরের লোকজনের মধ্যে অনেকে নামেমাত্র ত্রাণ পান। আবার কেউ কেউ তাও পাননা। তবে বন্যায় ত্রাণ নয় বন্যা থেকে বাঁচতে টেকসই বেড়িবাঁধ ও পাশাপাশি ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত ব্লক চান বন্যার্ত মানুষ। তড়িৎ গতিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হলে বন্যা থেকে স্থায়ী মুক্তি পাওয়া যাবে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
বন্যা কবলিত এলাকা ছবড়িয়া গ্রামের জীবান উদ্দিন সেতুর সঙ্গে কথা হলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, প্রথম বন্যার সময় তার পানিতে ঘর ভেসে গেছে। তারপর আরও দুবার বন্যা হওয়ায় বাড়ি ফেরা সম্ভব হয়নি। এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন তবে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হলে কোথায় যাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তিনি বলেন, আমি আর আশ্রয়কেন্দ্রে কিংবা রাস্তাঘাটে থাকতে চাইনা। এমনকি ত্রাণও দরকার নেই। শুধু কুশিয়ারা নদীতে টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।
আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া এক নারী জানান, পানির কারনে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। বেড়িবাঁধ সময় মতো মেরামত না করায় বন্যার পানিতে জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, বারবার আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাই না। নদীর ডাইক কাজ ভালো করে মেরামত করা হোক দ্রুত।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএজি বাবর বলেন, কয়েকবছর পরপর নদী ভাঙন হয়। এতে কিছু রিলিফ আর কিছু আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। এসব স্থায়ী সমাধান নয়। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে স্থায়ী সমাধান হব। ২২শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে রাস্তা এবং ডাইক ছিল কিন্তু তা অনুমোদন না হওয়ায় বাস্তবায়ন হয়নি। ওই প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর টেবিল পর্যন্ত গেলে এই বঞ্চনা হতো না। বন্যার ক্ষতি থেকে রেহাই দিতে সুরমা-কুশিয়ারার নদীর বেড়িবাঁধ স্থায়ীভাবে কাজ করে জকিগঞ্জ-কানাইঘাট তথা সিলেটবাসীকে রক্ষা করা করতে তিনি আহবান জানিয়েছেন।
জকিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহফুজ আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, বরাদ্দ না থাকায় যথাসময়ে বেড়িবাঁধে কাজ করা সম্ভব হয়নি। সুরমা নদীর বেড়িবাঁধের মতো কুশিয়ারার বেড়িবাঁধ এডিপি প্রকল্পের আওতায় আনতে পারলে দুই মিটার উচুঁ করে বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হবে। এতে বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। আপাতত পানি একটু কমলে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ জরুরীভিত্তিতে মেরামত করা হবে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসলিম বলেন, চলতি মৌসুমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করার জন্য খুব কম সময় পাওয়া যায়। বন্যা পরিস্থিতি একটু উন্নতি হওয়ার আগে আবারও কুশিয়ারার নদীর পানি বিপদসীমার ১৫৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। শুকনো মৌসুমে কিংবা যখন বন্যার পানি থাকে না তখন বেড়িবাঁধে স্থায়ীভাবে কাজ করতে পারলে বছর বছর এই বন্যা থেকে জকিগঞ্জকে রক্ষা করা যাবে।
সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য মাওলানা হুছামুদ্দিন চৌধুরী বলেন, জকিগঞ্জ-কানাইঘাটে এমন কোন ইউনিয়ন নেই যেখানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। বন্যা নিয়ে তিনি প্রথম থেকেই সংসদে কথা বলতেছেন। ডিপার্টমেন্ট পরিদর্শনের পর পরিদর্শন করছে। তারা যে কাজটি করে তা বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য যথাযথ নয় বলে আমি মনে করি। এ নিয়ে মাননীয় পানিসম্পদ মন্ত্রীর সাথে আমিসহ সিলেটের কয়েকজন সংসদ প্রস্তাব দিয়েছি। সপ্তাহের মধ্যে আমরা বৈঠকে মিলিত হবো এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ডাকবো। আসলে পানি উন্নয় বোর্ডে যাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা নিজেরাও জানেন না কিভাবে পানি আটকাতে হয়।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার