গোলাপগঞ্জ সংবাদদাতা:
হাসিনা সরকার পতনের আগের দিন (৪ আগস্ট) ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনকালে পুলিশ ও বিজিবি’র গুলিতে সিলেটের গোলাপগঞ্জে ৭ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনার দিনই ৫ এবং পরে হাসপাতালে দুজন মারা যান। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসে দেশজুড়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যাপক রদবদল করে। বিশেষ করে যেসব থানা এলাকায় আন্দোলনকারীদের প্রতি পুলিশ বেশি মারমুখি ছিলো- সেসব থানার ওসিকে ৫ আগস্টের পর বদলি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনের সময় সিলেটের গোলাপগঞ্জ মডেল থানার দায়িত্বে থাকা ওসি মাছুদুল আমিনকে বদলি করা হয়েছে।
তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক মীর মুহাম্মদ আব্দুন নাসের। তিনি ১৫ আগস্ট থানার দায়িত্ব বুঝে নেন। বিষয়টি সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলাপুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা এএসপি সম্রাট তালুকদার।
ছাত্র-আন্দোলনের সময় সিলেট শহরের পরে সবচেয়ে বেশি উত্তাল ছিলো গোলাপগঞ্জ উপজেলা। ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের দিন (৪ আগস্ট) সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে ঢাকাদক্ষিণসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থান। ওই সকালে গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তাদের সরিয়ে দিতে চায় পুলিশ। এসময় সেখানে বিজিবিও উপস্থিত ছিলো। একপর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে ছাত্র-জনতার তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। বিভিন্ন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এসময় এলাকাবাসীও সংঘর্ষে জড়িত হন। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে ছাত্র-জনতা ও এলাকাবাসী পুলিশ-বিজির দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে এবং পুলিশ-বিজিবি গুলি, টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবি পিছু হটতে বাধ্য হয়। একসময় ঢাকাদক্ষিণ থেকে গোলাপগঞ্জ পৌরসদর পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকাদক্ষিণেই গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন মারা যান। পরে বেলা ২টার দিকে পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বিক্ষোভরত ছাত্র-জনতকে লক্ষ্য করে পুলিশ ও বিজিবি গুলিবর্ষণ শুরু করে। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দুজন। এছাড়া পৌরসদরে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন শতাধিক ছাত্র-জনতা। ওই দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে এবং হাসপাতালে মারা যান ৫ জন। হাসপাতালে পরদিন একজন এবং তার পরের দিন আরেকজন মারা যান।
নিহতরা হলেন- উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ এলাকার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম, শিলঘাট গ্রামের কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ, বরকোট গ্রামের মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন, উত্তর কানিশাইল গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে ক্বারি মো. কামরুল ইসলাম পাবেল, দত্তরাইল গ্রামের আলাই মিয়ার ছেলে মিনহাজ উদ্দিন, রায়গড় গ্রামের সুরাই মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ ও পৌর এলাকার উত্তর ঘোষগাঁয়ের মোবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন।
এদিকে, ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে সিলেটসহ সারা দেশে। দুর্বৃত্তরা সিলেটের সকল থানায় হামলা করে। ভয়ে পুলিশ থানাগুলো ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। প্রায় ১০ দিন অচলাবস্থার পর ২-৩ দিন ধরে থানাগুলোতে ফের পুলিশি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। এই অচলাবস্থার কারণে গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা করতে পারেনি নিহতদের পরিবার। তবে আজ রবিবার (১৮ আগস্ট) কয়েকটি পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন থানার নতুন ওসি মীর মুহাম্মদ আব্দুন নাসের।
তিনি বলেন- ‘আমি ১৫ আগস্ট এই থানায় যোগদান করেছি। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের আজ (বুধবার) মামলা করার কথা রয়েছে।’
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার