বিয়ানীবাজার সংবাদদাতা:
এক সময়ের পঞ্চখন্ড অধুনা বিয়ানীবাজারের একটি প্রাচীণ মসজিদের ছবি ভাইরাল করেছে মার্কিন দূতাবাস। শুক্রবার ছবিটি তাদের নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ লিখেছে-জুম্মা মোবারক। তারা আরোও লিখেছে-বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত জায়গিরদার মসজিদ আবিষ্কার করুন। এটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের একটি অত্যাশ্চর্য উদাহরণ। ১৬৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত, এটি দেশের প্রাচীনতম মসজিদগুলির মধ্যে একটি, যা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক মসজিদটি ১৬৬২ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের দিল্লীর সম্রাট মহিউদ্দিন আলমগীর আওরঙ্গজেব-এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি জায়গীরদার মসজিদ নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। মোঘল নির্মাণ শৈলীর অনুকরণে দিল্লীর প্রকৌশলী দিয়ে ছোট ছোট বেলে পাথরের অনন্য নির্মাণ শৈলীর মাধ্যমে তৈরি হয় এই মসজিদ। কথিত আছে, দিল্লীর সম্রাট আওরঙ্গজেব শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষার জন্য একজন গুরুর সন্ধান করলে রাজসভার কোন সদস্য তাকে তৎকালীণ কোরআনের হাফেজ মাওলানা ইউনুসের সন্ধান দেন। বর্তমান সিলেটের বিয়ানীবাজার বা তৎকালীন শ্রীহট্টে বসবাসকারী মাওলানা ইউনুস দিল্লি গিয়ে আওরঙ্গজেবকে কোরআন শিক্ষা দেন। তখন আওরঙ্গজেব হাফেজ মাওলানা ইউনুসকে গুরুদক্ষিণা হিসেবে এই মসজিদটি নির্মাণ করে দেন। পরে মাওলানা ইউনুস দিল্লীতে আওরঙ্গজেবের রাজসভায় ইসলামি আইন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। পরবর্তীতে হাফিজ মুহাম্মদ ইউনুস (রহ:)-কে ঢাকা উত্তর পরগনার জায়গিরদার নিযুক্ত করেন। সেই থেকে এখনো মসজিদটি মোঘল সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং নির্মাণশৈলীর নির্দশন হিসেবে টিকে আছে। যদিও নব্বই দশকে মসজিদটির কাঠামো ও নির্মাণশৈলী ঠিক রেখে কিছুটা সংস্কারের কাজ করা হয়।
আলীনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ জানান, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস নতুন করে মসজিদটির পরিচয় করিয়ে দেয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ। এত প্রাচীন এবং গ্রামীণ মসজিদের খবরও তাদের কাছে, এটা রীতিমত বিস্ময়ের। দেশের প্রত্নতাত্বিক অধিদপ্তর মসজিদটি সংস্কার করার উদ্যোগ নিলে সবার জন্য ভালো হয়।
উপজেলা ইমাম সভাপতির সভাপতি হাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, বিয়ানীবাজারে অতি প্রাচীণ মসজিদ রয়েছে অন্তত: অর্ধশ’ত। এগুলোর একেকটির বয়স হবে শ’-ত বছরের উপরে। কোনটি আবার দুই শতাব্দীর পুরনো। তবে প্রাচীণ মসজিদের ইতিহাসে নাম থাকলেও স্থাপনা এবং ঐতিহ্যগত দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে বিয়ানীবাজার।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার