বিয়ানীবাজার সংবাদদাতা:
বিয়ানীবাজারের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে বহুবছর পূর্ব থেকে। উপজেলার বিভিন্ন মাদ্রাসায় সংশ্লিষ্ট অধ্যক্ষ-শিক্ষকমন্ডলী, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের যোগসাজসে আর্থিক দুর্নীতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে দুর্নীতির অভিযোগ উত্তাপিত হলেও আইনের ফাঁকফোকরে গতানুগতিক ব্যবস্থায় সরাসরি কাউকে শাস্থি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিয়ানীবাজারের মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় এরকম অসংখ্য দূর্র্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ বছরের পর বছর থেকে স্থানীয় মানুষের মুখে-মুখে। কিন্তু অতি রাজনীতির কারণে কখনো এসব অভিযোগ আমলে নেননি তদারকি সংশ্লিষ্টরা। এ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো: আব্দুল আলীম নিজেই জাল সনদে পদবী বাগিয়ে নেন মর্মে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছেন এলাকাবাসী। দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাদ্রাসা বিভাগের সচিব, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সিলেটের জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে মাথিউরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো: আব্দুল আলীম মাত্র ১০বছর বয়সে দাখিল পাশ করেছেন মর্মে নিয়োগকালীন সময়ে তার সনদ জমা দিয়েছেন। তার জমা দেয়া সনদ অনুযায়ী, ১৯৬৯ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করে ১৯৭৯ সালে দাখিল পাশ করেন। এরপর ১৯৮১ সালে আলীম, ১৯৮৩ সালে ফাজিল ও ১৯৮৫ সালে তিনি কামিল পাশ করেন। এছাড়াও একটি ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে যে ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন, নিয়োগকালীরন সময়ে তাও তার ছিলনা। অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে তার জমা দেয়া অভিজ্ঞতার সনদও সঠিক নয়। গত ১৮ বছর থেকে তিনি আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী এবং সরকারি সুবিধাভোগীদের নিয়ে মাদ্রাসার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এই মাদ্রাসা পরিচালনায় অধ্যক্ষ মো: আব্দুল আলীম গত প্রায় দেড় যুগ থেকে ব্যক্তিগত বিধি, অতি রাজনীতিকরণ, ফ্রি-স্টাইল দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে প্রতিষ্টানটিকে ক্রমশ: অন্ধকারে নিয়ে গেছেন। যা এলাকাবাসীসহ স্থানীয় শিক্ষানুরাগী সচেতনমহলে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, ২০১৮সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় অধ্যক্ষ নিজেই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ব্যালট পেপারে সিল মারেন। একজন আলেম হয়ে তার এমন গর্হিত আচরণে এলাকাবাসী লজ্জিত। মাদ্রাসার প্রতিবেশী এলাকার বাসিন্দা মো: মুজিবুর রহমান অভিযোগ করেন, মাদ্রাসায় পড়–য়া শিক্ষার্থীদের বেতন ও পরীক্ষার ফি’ আদায়েও সরকারি নির্দেশনা মানেননি এই অধ্যক্ষ। মাদ্রাসা পরিচালনায় দৈনন্দিন আয়-ব্যয়ের হিসাবেও বড় ধরনের ত্রæটি ধরা পড়বে। একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুস শাকুর বলেন, প্রায় এক বছরের বেশী সময় থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাতে আব্দুল আলীম কানাডা প্রবাসী মাদ্রাসার সহকারি মৌলভী মুহিবুর রহমানের বেতন-ভাতা আত্মসাত করছেন। যা তদন্ত হওয়া জরুরী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় শতাধিক। কিন্তু এমপিও ঠিকিয়ে রাখাসহ সরকারি সুবিধা পেতে নামে-বেনামে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তি দেখানো হয়েছে। মাদ্রাসার ২য় শ্রেণীতে ৪জন, ৩য় শ্রেণীতে ৩ জন, ৫ম শ্রেণীতে ৪জন শিক্ষার্থী নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। মাদ্রাসার পিছন দিকে রয়েছে পৃথক পকেট গেইট। ওই গেইট দিয়ে অধ্যক্ষ কখন আসেন আর কখন বেরিয়ে যান, তা জানেন না কেউ। এছাড়াও অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম দীর্ঘদিন থেকে শারীরিকভাবে অসূস্থ। এ কারণে মাদ্রাসার একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় তার বেশ বেগ হতে হচ্ছে। তার সনদ ও নিয়োগকালীন দূর্র্নীতি নিয়েও বিগত দিনে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবে সব ধামাচাপা পড়ে যায়।
এসব বিষয়ে অধ্যক্ষ মো: আব্দুল আলীম জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগ সত্য নয়। ১০ বছর বয়সে দাখিল পাশের বিষয়টি মন্ত্রনালয় তদন্ত করেছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার