স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট সীমান্ত দিয়ে কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না চোরাচালান। প্রতিদিন সীমান্ত পথে অবৈধভাবে আসা ভারতীয় পণ্যের বিশাল বিশাল চালান জব্দ হলেও কোনোভাবেই থামছে না চোরাচালান। চোরাচালানের সাথে জড়িত মুলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির নিয়মিত অভিযানেও সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পণ্য আসা বন্ধ হচ্ছে না।
সর্বশেষ সিলেট থেকে অভিনব পন্থায় ভারত থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসা সাড়ে সাত টন চিনি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় আটক করেছে পুলিশ। সিলেটের ওসমানীনগরে একটি ট্রাক জব্দ করে পুলিশ দেখতে পায়- ট্রাকে বালুর নিচে থরে থরে সাজানো চিনির বস্তা।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সকাল সাতটায় ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজারের ইলাশপুর এলাকায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক থেকে ভারতীয় চিনিভর্তি এই ট্রাকটি জব্দ করে পুলিশ। ট্রাকে বালুর নিচে ছিলো ৫০ কেজি ওজনের ১৫০টি চিনির বস্তা। এসময় চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ট্রাকচালককে আটক করে পুলিশ। আটক নিজাম উদ্দিন (২৯) সিলেটের জৈন্তাপুরের উত্তর ঘাটেরচটি গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, চোরাচালান প্রতিরোধে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওসমানীনগরের সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে তল্লাশিচৌকি বসায় তারা। এ সময় একটি ট্রাক জব্দ করা হয়। প্রাথমিকভাবে বালুর ট্রাক মনে করেছিল পুলিশ। তবে তল্লাশি করতে গিয়ে চিনির বস্তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এরপর ট্রাকের চালকসহ চিনির চালান জব্দ করা হয়। ট্রাকটি থানায় নিয়ে বালু সরিয়ে দেখা যায়, থরে থরে সাজানো ১৫০টি বস্তা। এ ঘটনায় ট্রাকচালককে আটক করা হলেও চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত জৈন্তাপুরের হরিপুরের সাদিক মিয়া ও কামরুল ইসলাম পালিয়ে যান।
প্রায় একবছর ধরে সিলেটের প্রায় সকল সীমান্তে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে চোরাচালান চক্র। তারা ভারত থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসছে গরু, মহিষ, কাপড়, কসমেটিকস, সিগারেট, মসলা, চা, চিনিসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য। সম্প্রতি সিলেটে বেড়েছে গরু, মহিষ ও চিনি চোরাচালান। ভারতের অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করে সিলেটের চোরাকারবারীরা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে নিয়ে আসছে বড় বড় চালান। প্রায় প্রতিদিনই সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ধরা পড়ছে ভারতীয় পণ্য ও পশু। কিন্তু কোনভাবেই থামছে না চোরাচালান।
সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহে সিলেটে ভারতীয় গরু-মহিষ ও চিনির অন্তত ১৫টি চালান আটক হয়েছে। বেশিরভাগ চালান সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসছিল। গত ১ অক্টোবর গোয়াইনঘাটের পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পান্তুমাই গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৯ টনের বেশি ভারতীয় চিনি জব্দ করে। এঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও পুলিশ বাদি হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। একই দিন জৈন্তাপুর উপজেলার আলুবাগান মোকামবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ টন ভারতীয় চিনি উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায়ও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। একই দিন জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের খাসিয়াহাটি এলাকা থেকে ভারতীয় গরুর একটি চালান পুলিশ আটক করে।
৩০ সেপ্টেম্বর গোলাপগঞ্জের গ্যাস ফিল্ডসের সামনে থেকে প্রায় সাড়ে ৯ টন চিনি জব্দ করে পুলিশ। এসময় চোরাচালানের সাথে জড়িত দুইজনকে আটক করা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর কোম্পানীগঞ্জ থানাপুলিশ অভিযান চালিয়ে কাঠালবাড়ি গ্রামের রিয়াজ মিয়ার ঘর থেকে ২৩ বস্তা ভারতীয় শাড়ি ও লেহেঙ্গার চালান জব্দ করে। ওই চালানে ১ হাজার ১১০টি শাড়ী ও ১৪৪টি লেহেঙ্গা ছিল। এসময় চোরাচালানের সাথে জড়িত দুইব্যক্তিকে আটক করা হয়। একই দিন জৈন্তাপুর থানার মোকামপুঞ্জিতে অভিযান চালিয়ে ২৫১ বোতল ভারতীয় মদসহ এক নারী মাদক কারবারিকে আটক করে পুলিশ।
এভাবে প্রতিদিন ভারতীয় পণ্যের চালান আটক হলেও বন্ধ হচ্ছে না চোরাচালান। অভিযোগ রয়েছে, এই চোরাচালান চক্রের সাথে জড়িত রয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। স্থানীয়ভাবে চোরাকারবারীদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন তারা। পুলিশের হাতে পণ্যবাহী ট্রাক পিকআপ আটক হলে তারা ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তদবিরও করেন।
সূত্র জানায়, চোরাচালানের সাথে জড়িত মুলহোতারা সবসময় আড়ালে থাকেন। তারা শুধু পুঁজি বিনিয়োগ করে সিন্ডিকেটের বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের দিয়ে কারবার করেন। তাই চালান ধরা পড়লেও মুলহোতারা থেকে যান অধরা। এতে বন্ধ হচ্ছে না চোরাচালান।
চোরাচালান প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, যখনই চোরাচালানের খবর পাওয়া যায় তখন দ্রুততার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে অস্ত্র, বিস্ফোরক কিংবা চোরাচালান করা কোনো পণ্য যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য মহানগরীর প্রবেশপথ লামাকাজি, বটেশ্বর ও বিমানবন্দর এলাকায় পুলিশের চৌকি বসানো হয়েছে। পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই চৌকির কার্যক্রম তদারক করে থাকেন।
সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সীমান্ত এলাকায় পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা রয়েছে। চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যদের তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি তাদের নজরদারি করা হচ্ছে। চোরাচালান এবং অস্ত্র ও মাদক কারবারিদের ব্যাপারে জেলা পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক রয়েছে এবং কাজ করছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 998 বার