স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট বিভাগে আশঙ্কাজনক হারে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর অন্যতম কারণ চালকের দায়িত্ববোধের অভাব। এছাড়া সংযোগ সড়ক, রোড মার্কিং না থাকা, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, কুয়াশা এবং সড়কে অটোরিকশার অবাধ চলাচল দুর্ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ। এদিকে গত তিন বছরে সিলেটের বিভিন্ন মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে ৫২৯টি দুর্ঘটনায় ৬৩০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আহত হয়েছেন অন্তত দেড় হাজার লোক। এদের মধ্যে নারী, শিশু ও কর্মক্ষম লোকজন রয়েছেন। অন্যদিকে দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত লোকজনের পরিবারে আয় উপার্জনের অভাবে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। বিধি মোতাবেক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আহত ব্যক্তির স্বজনরা নিহত একজনকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা, এক জন আহতকে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয় সরকার থেকে। কিন্তু অনেকেই এই সুযোগের কথা জানেন না বলে বছরের পর বছর অভাব-অনটনে কষ্ট করেন তারা।
সিলেট বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজুল ইসলাম বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ৩০ দিনের মধ্যে বিআরটিএর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করলে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের প্রাপ্য পরিশোধ করা হয়। তিনি জানান, গত বছর ১৫টি আবেদন জমা হয়েছে। এর মধ্যে নিহত ছয় ও আহত এক জন মোট সাত জনকে ক্ষতি পূরণের টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে অনেকেই বলেছেন, বিষয়টি অনেকের জানা নেই বলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা সরকার প্রদত্ত এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়ক এবং রোড মার্কিং না থাকা দুর্ঘটনা বৃদ্ধির মূল কারণ। সিলেট সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেছেন, দেশের সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ১৮ ফুটের আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। তিনি বলেন, উন্নত কোনো দেশেই মহাসড়কের সঙ্গে কানেকটিং সড়ক থাকে না। তিনি বলেন, যানবাহনের সঠিক তদারকি (মেইনটেন্যান্স) না থাকা, সঠিক জায়গায় ও বাঁকে মার্কিং না থাকা, সড়কের পাশের গাছপালা পরিচ্ছন্ন না করা, অতিবৃষ্টি ও কুয়াশা, সড়ক বাতি না থাকা, রাস্তার পাশে বড় বড় বিলবোর্ড, ওভারলোডিং, চালকদের দক্ষতার অভাব ও প্রশিক্ষণ না থাকা, চালকদের মোবাইল ব্যবহার এবং রাস্তায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গরু-ছাগল, কুকুর-শিয়াল ঢুকে পড়াকে দায়ী করেন এ কর্মকর্তা। তিনি সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে দ্বিমুখী রাস্তার ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মহাসড়কের মানদণ্ড বজায় মেনে স্মার্ট সড়ক নির্মিত হলেই সড়কে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব বলে জানান তিনি। হাইওয়ে পুলিশ সিলেট রিজিওনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ মনে করেন, দুর্ঘটনা বাড়ার পেছনে যানবাহন বৃদ্ধি, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট ও কুয়াশাও অন্যতম কারণ।
তিন বছরে ৫৫২ দুর্ঘটনা, মৃত্যু ৬৩০
পরিসখ্যানে দেখা যায়, ঐ সময়ে সিলেটে মহাসড়কেই ৩১৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫১ জনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে গত এক বছরে বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে ২১৬টি দুর্ঘটনায় ২৭৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন ৩০৪ জন। আঞ্চলিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন, ৩১ জন নারী। ১৪ জন শিশু। গত বছর সিলেটের আঞ্চলিক সড়কে ৪০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৪৩ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং আহত হন ১৯ জন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 997 বার