স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটে ভারতীয় অবৈধ চিনির সবচেয়ে বড় চালান জব্দ করেছে পুলিশ। সীমান্ত পাড়ি দেওয়া বড় চালান ১৪টি ট্রাকে সিলেটে নিয়ে আসার পথে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ভোর ৬টার দিকে জালালাবাদ থানাধীন উমাইয়াগাও থেকে এসব চিনি জব্দ করা হয়। অভিযানকালে একটি প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
তবে এ সময় কোনো চোরাকারবারিকে আটক করা যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম)।
তিনি বলেন- গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালিয়ে ১৪টি ট্রাক ভর্তি ভারতীয় চিনি জব্দ করেছি। এসময় একটি প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেল আটক করা হয়। ১৪টি ট্রাকে মোট কত বস্তা চিনি রয়েছে তা এখন গণনা চলছে। পরে বিস্তারিত বলা যাবে।
তিনি বলেন- পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারিরা পালিয়ে যায়। কাউকে আটক করা যায়নি। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা আছে ৩০টি। এর মধ্যে চোরাইপথে চিনি আসে সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, ফেনী, তিন পার্বত্য জেলা (খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি) এবং চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের করেরহাটসহ ২৭টি এলাকা দিয়ে। তবে সবচেয়ে বেশি চিনি আসে সিলেট অঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে। কয়েক দিন পরপরই সিলেটে ধরা পড়ে ভারত থেকে আসা অবৈধ চিনির চালান। কোনো কোনো চালান হয় কোটি টাকারও।
পুলিশ বলছে- সীমান্ত দিয়ে আসা চোরাই চিনির চালান জব্দ করতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে, নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ।
জানা গেছে, ভারতের চিনি রপ্তানি বন্ধ ঘোষণায় দীর্ঘদিন ধরে চড়া দেশের বাজার। দফায় দফায় দাম বেড়ে গত রমজানে খুচরা বাজারে দেড়শ টাকা ছাড়ায় চিনির কেজি। বাজারের এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কম দামে অবৈধ পথে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ চিনি দেশে আনছে বেশ কয়েকটি অসাধু চক্র। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। তবে ভোক্তাকে চিনি কিনতে হচ্ছে আগের চড়া দামেই। এছাড়া ভারতীয় নিম্নমানের চিনির কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে ভোক্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী- বর্তমানে দেশের বিক্রিত চিনির প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি আসছে অবৈধ পথে। ফলে বর্তমানে বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। ভারতীয় বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বিশেষ করে সিলেট অঞ্চল দিয়ে এসব চিনি প্রবেশ করছে। আমদানিকারকদের দাবি- যে হারে চোরাই চিনি দেশে ঢুকছে তাতে আগামীতে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাতে পারে সরকার।
এদিকে ভারতীয় চোরাই চিনির প্রতি কেজির মূল্য পড়ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা রুপি। যেখানে দেশের বাজারে প্রতি কেজি চিনির পাইকারি মূল্য ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা এবং খুচরায় বিক্রি হচ্ছে দেড়শ টাকা দরে। কম দামে এসব নিম্নমানের চিনি বেশি দামে বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্ররা। যদিও সীমান্তে চোরাই চিনি চালান জব্দে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, চোরাইপথে আসা ভারতীয় চিনির কারণে সরকার প্রতি কেজি চিনিতে রাজস্ব হারাচ্ছে ৩৮ টাকা। অথচ চোরাইপথে আসা চিনি অত্যন্ত নিম্নমানের এবং ভেজালে ভরপুর। সেটা দেশীয় চিনির চেয়ে কেজিতে ৩০-৪০ টাকা কম থাকলেও খুচরায় তেমন প্রভাব নেই। অর্থাৎ ভোক্তারা কোনো সুফল পাচ্ছেন না। তবে অত্যধিক লাভের কারণে অনেকেই অবৈধ চিনির ব্যবসায় জড়িয়েছেন। অন্যদিকে, চিনি চোরাই পথে আনলেও তা বোঝার উপায় নেই। কারণ ভারত থেকে আনা চিনি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বস্তার নাম-লগো ব্যবহার করা হচ্ছে। তখন কোনটা চোরাই তা বুঝার উপায় থাকে না।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার