স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটজুড়ে এখন একই আলোচনা। আলোচনার বিষয়বস্তু সিটি নির্বাচন। আর সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। নির্বাচনে আরিফ প্রার্থী হবেন কি-না এই সমীকরণেই যেন আটকে আছে সকল হিসেব-নিকেষ। গত সোমবার রাতে লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাতের সময় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন না করার কথা জানিয়েছেন আরিফ। সাক্ষাতকালে আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ও দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আরিফ। কিন্তু তারেক রহমানের কাছ থেকে স্পষ্ট কোন আশ্বাস পাননি তিনি- এমনটা জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এই অবস্থায় দেশে ফিরে আরিফ নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন কি-না সেটা নিয়েও সিলেটে চলছে জোর আলোচনা। অনেকে মনে করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জট ও অর্ন্তদ্ব›েদ্বর এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না আরিফ। ‘হ্যাট্টিক’ জয়ের আশায় সময়মতো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা আসবে আরিফের কাছ থেকে।
বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার দলীয় ঘোষণায় সিলেটে সিটি নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই বিএনপির। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগে রয়েছে প্রার্থী জট। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন ৯ নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ ও বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালিক, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল ও আজাদুর রহমান আজাদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ শিপলু ও মহানগর সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী। এর মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন সিলেট-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলের ‘গ্রিণ সিগন্যাল’ পেয়ে মেয়র পদে প্রচারণায় নেমেছেন বলে দাবি আনোয়ারের। তবে ‘সিগন্যাল’র কথা মানতে নারাজ মহানগর আওয়ামী লীগ ও মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতারা। ইতোমধ্যে তিনি সিলেট-২ আসন থেকে তার ভোটও সিলেট মহানগরীর ঠিকানায় স্থানান্তর করেছেন।
আওয়ামী লীগে প্রার্থী জট থাকলেও নির্বাচনী হিসেব নিকেশ আটকে আছে আরিফের প্রার্থী হওয়া নিয়ে। আরিফ প্রার্থী না হলে আওয়ামী লীগের দলীয় টিকেট লাভ মানেই নিশ্চিত মেয়র- এমনটা মনে করেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও। একই ধারণা সাধারণ মানুষেরও। তাই যে কোন মূল্যে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন চান সবাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে দলীয় রাজনীতিতে ‘প্রেসারে’ রয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেটে আধিপত্য বেড়ে চলছে স্থানীয় রাজনীতিতে আরিফের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্ব›িদ্ব দলীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের। দলের অঙ্গ সংগঠনের কর্তৃত্ব অনেক আগেই চলে গেছে মুক্তাদিরের হাতে। সর্বশেষ মহানগর বিএনপির কাউন্সিলেও কর্তৃত্ব হারান আরিফ। প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের তিনটি পদেই বিজয়ী হন মুক্তাদিরের পছন্দের প্রার্থী। তাই সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতেও কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন আরিফ। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ চান তিনি। তাই মুক্তাদিরের সমমর্যাদার কেন্দ্রীয় পদবী চান তিনি। এজন্য তিনি অনেক দিন ধরে দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতির পদ দাবি করে আসছিলেন। বিভিন্ন ইস্যূতে তাকে আশ্বস্থ করা হলেও শেষ পর্যন্ত সে দাবি পূরণ হয়নি। এছাড়া সিলেট-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা দিলদার হোসেন সেলিমের মৃত্যুর পর ওই আসনে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন আরিফ। ওই আসনে দলীয় হেভিওয়েট কোন প্রার্থী না থাকায় আরিফ সেখানে প্রার্থী হতে কেন্দ্রে আগাম লবিং শুরু করেন। সূত্র জানায়, সিলেট-৪ আসনভ‚ক্ত জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার কোথাও একটি বাংলোবাড়ি করার জন্য আরিফ অনেক দিন থেকে জায়গা খুঁজছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত সোমবার রাতে তারেক রহমানের সাথে বৈঠককালে আরিফ পার্লামেন্ট নির্বাচন করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটি নির্বাচন করার কোন আগ্রহ তার নেই- এমনটাও তারেককে জানান আরিফ। এসময় তিনি রাজনীতির স্বার্থে কেন্দ্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদও চান। কিন্তু তারেক রহমানের কাছ থেকে স্পষ্ট কোন সিদ্ধান্ত কিংবা আশ্বাস পাননি আরিফ। ‘ভবিষ্যতের দেখা যাবে’ -এমন আশ্বাসে আরিফের চাওয়াকে আটকে রাখেন তারেক।
এদিকে, সিলেট নগরের সাধারণ মানুষ মনে করেন, আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর জন্যও নির্বাচন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। গেল ১০ বছরে সিলেট নগরীর দৃশ্যমান উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের সাথে সম্পৃক্ততা দিয়ে আরিফ সিলেট নগরে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এ অবস্থায় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ ছাড়া আরিফের সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা সম্ভব নয়। কিন্তু আরিফ মোকাবেলার আগেই আওয়ামী লীগ এখন পুড়ছে গৃহদাহে। তবে আরিফ প্রার্থী না হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যিনি হবেন, তিনিই মেয়রের চেয়ারে বসবেন এমনটা মনে করেন সাধারণ মানুষ।
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে আরিফুল হক চৌধুরীর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে লন্ডন যাওয়ার আগের দিন তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘মিডিয়া তাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখছে। এখনো তিনি কোন সিদ্ধান্ত নেননি।’ সিটি নির্বাচনের আগে বিএনপির দাবি সরকার মেনে নিলে তিনি প্রার্থী হবেন- এমন কথায়ও তিনি তার অবস্থান ধূয়াচ্ছন্ন করে রাখেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলছেন, আরিফের বর্তমান সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছেন। অপরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে আরও জনদূর্ভোগ তৈরি করেছেন। তাই আগামী নির্বাচনে আরিফ প্রার্থী হলেও সিলেট নগরবাসী তাকে প্রত্যাখান করবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার